#রামায়ণ_ইতিহাস_
রাম সেতু বর্তমান ভারতে আলােচনার কেন্দ্রবিন্দু। ভারত সরকার উচ্চ আদালতে ঘােষণা করেছে যে, রাম নামের কেউ পৃথিবীতে কখনাে ছিল না। যাই হােক অন্য রাজনৈতিক দল এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের তীব্র বিরােধিতা ও অন্যদিকে আপিল বিভাগের রামায়ণের সত্যতা স্বীকার করে নেয়া এক সময়ের আলােচিত বিষয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত হিন্দু সংগঠনগুলাে দাবি করেছে যে, রামের অস্তিত্ব নিয়ে যে বিতর্ক তা শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
রামের অস্তিত্ব লক্ষ লক্ষ লােকের কাছে বিশ্বাসের ব্যাপার। এই কারণে কোনাে সরকারই রামের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীদে
#কে_এই_রাম
মহাঋষি বাল্মীকি এমন একটি ঐতিহাসিক মহাকাব্য লিখতে চেয়েছিলেন যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পথপ্রদর্শকের, নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। এই বিষয়ে লিখতে গিয়ে তাঁকে গভীর বেগ পেতে হয়েছিল। যখন তিন নারদ মুনির সাথে পরামর্শ করেছিলেন, নারদ মুনি রঘুবংশে জন্মগ্রহণকারী দশরথের পুত্র রামকে নিয়ে মহাকাব্য রচনার পরামর্শ দেন। এখানে একটি বিষয় মনেরাখা দরকার যে, বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন রামের জন্মের বহু পরে। এটা বিদ্যমান কিংবদন্তীর তথা বর্তমান প্রচলিত ধারণা রামের জন্মের পূর্বে রামায়ণের রচনা তার সাথে সাংঘর্ষিক। এই বিষয়ে বাল্মীকি রামায়ণে যথাযথ বর্ণনা করা হয়েছে। একইভাবে মহাকবি কালিদাস লিখেছেন রঘুবংশ। এই পুস্তকে রঘুবংশ পরম্পরার উপর আলােকপাত করা হয়েছে। যারা রামের পরে দেশ শাসন করেছেন। এখন তর্কের বিষয় হতে পারে যে রাম যদি কল্পকাহিনীর চরিত্র হয় বাল্মীকি কিভাবে রামের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস আলােচনা করেছেন। সেখানে রঘুবংশে কালিদাস রামের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন এবং উত্তর পুরুষদের বর্ণনা করেছেন যারা পরবর্তীকালে দেশ শাসন করেছেন। বর্তমান সময়ে রামের গল্প নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই ভারতে ও সমস্ত বিশ্বে বিদ্যমান।
#রাম_কখন_জন্ম_গ্
এই বিষয়ে আলােচনা করার আগে আমাদের প্রথমত জানতে হবে যে, আমাদের মুনিঋষিরা মন্বন্তর তত্ত্বে পদ্ধতিগতভাবে সৃষ্টির সময়কাল নিয়ে আলােচনা করেছেন। প্রত্যেকটা মন্বন্তরকে আবার চারটি যুগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক চতুর্যুগ সত্য, ক্রেতা, দ্বাপর ও কলি দ্বারা গঠিত। বর্তমান মন্বন্তরের নাম বৈবশ্বত্য। ইতােমধ্যে এই মন্বন্তরে ২৭টি চতুর্যুগ বিগত হয়েছে। বর্তমান চতুর্যুগটি ২৮ তম এবং এবং প্রথম দিকের সময় চলমান। এটা সর্বজন বিদিত যে, ত্রেতাযুগের শেষভাগে এসে রাম জন্ম গ্রহণ করেন। একারণে এটা যদি ধারণা করা হয় যে রাম বর্তমান চতুর্যুগের সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাহলে এটা বােঝায় যে তিনি ১০ লক্ষ বছর আগে জন্মেছিলেন। তাঁর জন্মের এই সময় আরাে পিছিয়ে যেতে পারে। যাই হােক বায়ুপুরাণে রামায়ণের ঘটনাপঞ্জির সঠিক সময় দেয়া আছে। একটি প্রমাণ দ্বারা ঘটনার সত্যতাকে বিচার করা যায় যখন হনুমান সীতার খোঁজে লঙ্কায় গিয়েছিল তখন সে চার দাঁতওয়ালা হাতি দেখতে পায়। একারণে প্রত্নতত্ত্ববিদ
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাল্মীকি রামায়ণে উল্লেখ করা হয়েছে তা হলাে ভরত এবং শত্রুদ্নের পিতৃভূমিতে এমন যানবাহন ব্যবহার করা হতাে যেটি কুকুর বা হরিণ চালিত ছিল। যখন দুই ভাই মামাবাড়ি থেকে অযােধ্যায় ফিরে আসে পথিমধ্যে তারা অনেক পথ অতিক্রম করেছিলেন যেগুলাে বরফে ঢাকা ছিল এবং শীত থেকে রক্ষা পেতে উলের গরম কাপড় ব্যবহার করেছিলেন। এখানে যে জায়গার কথা বলা হয়েছে তা বিবেচ্য বিষয়। আমাদের যুক্তিতে এই জায়গাটি 'রাশিয়া কারণ 'রাশিয়া' শব্দটি 'ঋষি শব্দ থেকে এসেছে। উল্লিখিত বিষয়টি বলে দেয় যে রাম কোন সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
সুতরাং যারা রামকে কল্পকহিনীর চরিত্র হিসেবে দাঁড় করাতে চায় তাদেরকে আমরা এমন কিছু প্রমাণ দিতে পারবাে যা প্রমাণিত করবে খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্মের অনেক আগে রাম সমস্ত বিশ্বে একজন অপরিসীম শ্রদ্ধার ধর্মীয় ব্যক্তি ছিলেন।
#বিশ্বের_বিভিন্ন
১) রাশিয়া এবং মঙ্গোলিয়াতে রামায়ণ— ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর ডেকান হেরাল্ড এর প্রথম পাতায় একটি খবর ছাপা হয়। যেখানে বলা হয় রাশিয়ার কল্মিক এর রাজধানী এলিস্টাতে বিভিন্ন গল্প প্রচলিত ছিল যেগুলাে রামায়ণ থেকে নেয়া। ঐ সংবাদে আরও বলা হয় রামায়ণের বিভিন্ন কিংবদন্তী কল্মকের লােকজনের মধ্যে এখনাে জনপ্রিয়। কল্মিকের গ্রন্থাগারে রামায়ণের অনেক সংস্করণ এখনাে সংরক্ষিত আছে। এই সংবাদ থেকে পরিস্কার যে রামায়ণের কাহিনী সুপ্রাচীনকাল থেকেই রাশিয়ায় জনপ্রিয় ছিল। রাশিয়ার লেখক ডমােডিন সুরেন মঙ্গোলিয়া এবং কলািকের লােকের মধ্যে প্রচলিত এধরনের কিংবদন্তীর সংকলন করেন। অধ্যাপক সি. এফ. গােস্টানকির পাণ্ডুলিপি, 'একাডেমি অব সাইন্স সােভিয়েত ইউনিয়নের সাইবেরিয়ান শাখায় সংরক্ষিত রয়েছে। ওই বইগুলােতে ভােলগা নদীর তীরবর্তী লােকজনের মধ্যে প্রচলিত জনপ্রিয় কিংবদন্তী নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে যা রামায়ণ সংশ্লিষ্ট। এই পাণ্ডুলিপিটি কলিক ভাষায় রচিত। লেনিনগ্রাদের রাশিয়ান এবং মঙ্গোলিয়ান ভাষায় লেখা রামায়ণের বিভিন্ন গল্প সংরক্ষিত আছে।
২) চীনে রামায়ণ— চীনে ক্যাং সেং হু কর্তৃক জাতকের গল্পসংগ্রহে রামায়ণের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, যেগুলাে ২৫১ খ্রিস্টাব্দে সংকলিত হয়েছিল। রামকে বনবাসে পাঠানাের আদেশ দেওয়ার পর পিতা দশরথের মানসিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে রচিত গ্রন্থ যা ৭৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় সেটি এখনাে চীনে প্রচলিত। একইভাবে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে হিজ-ইঈ-চি কপি(বানর) নামে একটি উপন্যাস লেখেন যেটি রামায়ণে বর্ণিত হনুমানের কাহিনী নিয়ে রচিত।
৩) শ্রীলংকায় রামায়ণ— নরেশ কুমার ধাতুসেনা ওরফে কুমারদাসা যিনি ৬১৭ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলংকার শাসক ছিলেন তিনি জানকী হরণ নামে একটি গ্রন্থ লেখেন। এটি হচ্ছে শ্রীলংকায় প্রচলিত সংস্কৃত সাহিত্যগুলাের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন। বর্তমান সময়ে সি ডন বােস্তান এবং জন ডি সিলভা রামায়ণের ওপর ভিত্তি করে গল্প রচনা করেছেন। বর্তমান সময়েও অধিকাংশ লােকই রাম এবং সীতাকে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান করে থাকেন।
৪) কম্বােডিয়ায় রামায়ণ— কম্বােডিয়ার খেমার অঞ্চলে ৭০০ খ্রিস্টাব্দের পুরাতন বিভিন্ন পাথর খােদাইয়ের চিত্র পাওয়া যায়। এই পাথর খােদাইয়ের চিত্রগুলাে রামায়ণের গল্পের ওপর ভিত্তি করে চিত্রিত। প্রাচীন খেমার বংশের শাসনামলে সেখানে বিভিন্ন মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল যেগুলাের দেয়ালে রামায়ণের গল্প চিত্রিত হয়েছে। রামায়ণ ও মহাভারতের গল্পের জন্য পৃথিবীর সর্ববৃহৎ হিন্দু মন্দির অ্যাংকার ভাট গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্দিরটির নির্মাণ সময় ৪০০-৭০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। এই ছবিগুলাের মধ্যে একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার লক্ষণীয় হনুমান এবং অন্য বানরগুলাের ছবিতে লেজ ব্যবহৃত হয়নি। যেটি সাধারণ লােকের বিশ্বাসের বিপরীত।
৫) ইন্দোনেশিয়ায় রামায়ণ— ডি ক্যাপ্রিস এর মতানুসারে ইন্দোনেশিয়াতে চান্দিরােলাে জংরং' নামে একটি মন্দির ছিল যার দেয়ালে রামায়ণের গল্পের বিভিন্ন চিত্র আঁকা ছিল। এই মন্দিরটি নবম শতাব্দীতে নির্মিত। ইন্দোনেশিয়ায় ‘ককাভিন নামে রামায়ণের ভিন্ন সংস্করণ খুবই জনপ্রিয়। প্রামবানানের গল্প থেকে এর কিছুটা পার্থক্য লক্ষ করা যায়। রামায়ণের বিভিন্ন সংকলন ছাড়াও যিশুখ্রিস্টের জন্মের পূর্বে যেসমস্ত গল্প ইন্দোনেশিয়ায় প্রচলিত ছিল সেগুলাে প্রমাণ করে যে ইসলাম আক্রমণের অনেক পূর্বেই ইন্দোনেশিয়ার লােকজনের মধ্যে রামায়ণের গল্পগুলাে জনপ্রিয় ছিল। উল্লেখ যে রামায়ণে বর্ণিত রাজা সুগ্রীবের রাজত্ব ছিল ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে। সেখানে আজও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে রামায়ণের প্রথম আন্তর্জাতিক কনভেনশন ইন্দোনেশিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়। এমনকি ইন্দোনেশিয়ার বিমানের প্রতীক গারুদা অর্থাৎ গরুড় পাখি যা ভগবান বিষ্ণুর বাহন।
৬) লাওসে রামায়ণ— লাওসে স্থানীয় লােকজন যখন লাওস শব্দটি উচ্চারণ করে তখন তা শুনতে রামের ছেলে লবের মতাে শােনায়। এছাড়াও ভ্যাট-সি-ফম ও ভ্যাট-পা-কেভ এর মন্দিরের দেয়ালে রামায়ণের গল্পের চিত্র অঙ্কিত আছে। এই মন্দিরগুলােতে মহাকাব্য রামায়ণ পুস্তকাকারে সংরক্ষিত আছে। ফরাসি পরিব্রাজক 'ল্যাফন্ট, 'পা লাকা-পা লাম' বইটি ফ্রান্সে 'পিওমমাচক নামে অনুবাদ করেন। এই বইয়ে লাওসের সাধারণ লােকজনের মধ্যে প্রচলিত রামায়ণের গল্পের বিষয়ে আলােকপাত করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের সাধারণ মানুষের মধ্যে রামায়ণে গল্প অত্যধিক প্রচলিত। যিশু খ্রিস্টের ঠিক পরবর্তী সময়ে রাজারা তাদের নামের আদ্য ও অন্তে রাম শব্দটি ব্যবহার করত। যেরকমভাবে আমরা উপমহাদেশে রামায়ণের নাটক মঞ্চস্থ করি, থাইল্যান্ডে আজ পর্যন্ত রামায়ণের নাটকের বিভিন্ন
৭) থাইল্যান্ডে রামায়ণ— সংকলন মঞ্চস্থ হয়। একইভাবে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলাে যেমন ইন্দোনেশিয়া, মালেয়শিয়া, কম্বোডিয়াতে রামায়ণের নাটক মঞ্চস্থ হয়।
৮) মালেশিয়াতে রামায়ণ— চতুর্দশ শতাব্দীতে লেখা 'হিকায়ায়াদ সেরি রামা'র গল্পের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নাটক মালেশিয়াতে মঞ্চস্থ হয়। দালাং সমাজ ২০০-৩০০টি রামায়ণ সংশ্লিষ্ট নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এই নাটকগুলাে শুরুর আগে লােকজনরা রাম ও সীতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রার্থনার আয়ােজন করে।
৯) বার্মাতে রামায়ণ— রাজা কায়ানযিথা ১০৮৪-১১১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বার্মা শাসন করেছিলেন যিনি রামের বংশধরের একজন বলে পরিচিত ছিলেন। রামায়ণের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গল্প যেগুলাে পনেরাে শতাব্দীতে লেখা সেগুলাে বার্মাতে এখনাে পর্যন্ত বর্তমান। বার্মার সাহিত্যে 'কাব্যদাশ', ও সুভাসিত রাতানিধি বই দুইটি রামায়ণের গল্প অবলম্বনে রচিত। তারানাথ কর্তৃক লিখিত 'ঝাং-বুং-পা (রামভাষ্য) বইটি বর্তমানে পাওয়া যায় না। বার্মাতেও রামায়ণের গল্পের ওপর রচিত বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ হয়।
১০) নেপালে রামায়ণ— ১০৭৫ খ্রিস্টাব্দের পুরাতন রামায়ণের সংকলনটি নেপালে অদ্যাবধি বর্তমান।
১১) ফিলিপাইনে রামায়ণ— ফিলিপাইনের সাধারণের মধ্যে রামায়ণের গল্পের প্রভাব তাদের ঐতিহ্য, প্রথা এবং কিংবদন্তীতে লক্ষণীয়। অধ্যাপক জুঅন আর ফ্রান্সিসকো দেখিয়েছেন যে, মেরিনিও মুসলিমদের মধ্যে রামায়ণের কিংবদন্তী খুবই জনপ্রিয়। যেখানে রামকে ঈশ্বরের অবতাররূপে মানা হয়। একইভাবে ম্যাজেন্ডানাও অথবা সুলুফোক মুসলমানদের মধ্যে রামের গল্প জনপ্রিয়।
১২) ইরানে রামায়ণ— অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী হায়দারাবাদে সালারজুং নামের একটি জাদুঘর আছে। সেখানে একটি স্থূলকায় বানরের ছবি আছে। যার একহাতে একটি বড় পাথর। এই চিত্রটি সেই হনুমানের কথা মনে করিয়ে দেয় যে দ্রোণাগিরি ধরে রেখেছিল । একইভাবে মারকো পােলাে তার ভ্রমণ বইয়ের ৩০২ নং পৃষ্ঠার দ্বিতীয় খণ্ডে এমন একটি বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত একটি অসামঞ্জস্য বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। যেটি আফগানিস্তান থেকে মরক্কো এবং আলজেরিয়া পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এই মুসলিমরা বিশ্বাস করত যে, ত্রিবজান রাজ্যের রাজকীয় পরিবারের সদস্যদের ছােট লেজ ছিল। আরব ও ইউরােপের দেশগুলােতে প্রচলিত গল্পগুলােকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের অনেক আগে রামায়ণ এবং মহাভারতের কহিনী এই এলাকাগুলােকে প্রচলিত ছিল। এই এলাকার লােকজনের উগ্র বর্বরােচিত কর্মকাণ্ডের ফলে সেই সমস্ত গল্প এবং স্থাপনাগুলাে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে গেছে।
১৩) ইউরােপে রামায়ণ— ইতালিতে 'এস্ট্রোকন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের খননকাজ শুরু হয় তখন সেগুলাের দেয়ালে কিছু অদ্ভুত ধরনের চিত্রকর্ম পাওয়া যায় সেসব চিত্রকর্মের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয় যে সেগুলাে রামায়ণের গল্পের ওপর ভিত্তি করে চিত্রিত। কিছু চিত্র কর্মে দেখা যায় লেজযুক্ত একজন ব্যক্তির পাশে তীরধনুক কাধে দুই ব্যক্তি এবং তাদের পাশে দণ্ডায়মান এক নারী। এই সমস্ত চিত্রকর্ম ৭ম খ্রিস্টপূর্বাব্
১৪) আফ্রিকায় রামায়ণ— ইথিওপিয়ার লােকজন তাদেরকে 'কুশিথস বংশের বলে দাবি করে। কুশ শব্দটি মূলত রামের ছেলে কুশের নাম থেকে এসেছে। এ বিষয়টি শতপথ ব্রাহ্মণে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। বেদের মন্ত্রগুলােকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই ব্রাহ্মণটি অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করেছে। আশ্চার্যজনকভাবে
১৫) উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় রামায়ণ— কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের পূর্বে ইউরােপের লােকজন এসম্পর্কে জানত না। যদিও এ ডি কোয়ান্ট্রিফেজে
#প্রচলিত_জনপ্রিয
ক) মেক্সিকোর উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় সুন্দরী মেয়েদেরকে এখনাে উলুপী নামে ডাকা হয়। মহাভারতে আমার দেখতে পাই অর্জুন উলুপী নামে একজন মেয়েকে বিবাহ করেন যিনি ছিলেন পাতাল দেশের রাজকন্যা।
খ) ডব্লিউ এইচ প্রেসকট তার বই হিস্ট্রি অব কনকুয়েস্ট অব মেক্সিকো' তে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করেছেন যেটা প্রমাণ করে যে আমেরিকা মহাদেশের প্রাচীন সভ্যতার সাথে ভারতীয় আর্য সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে। বর্তমানেও মেক্সিকোর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে 'রামাসীততাভ একটি জনপ্রিয় নাটক। বাইবেলের নিউস্টেটামেন্টে
#ঐতিহাসিকদের_উদ্
ক) মুসলিমরা কেন রােজার মাসকে রামাজান > রমজান বলে?
খ) গাজা উপত্যাকা কেন রামাল্লা নামে পরিচিত?
গ) লন্ডনের রামসগেট কেন রামসগেট বলা হয়?
ঘ) কেন ইতালির রাজধানীকে রােম (রাম থেকে উৎপন্ন) বলা হয়?
আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যায় যেখানে রাম শব্দটি উপসর্গ বা অনুসর্গ রূপে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন স্থান ও ব্যক্তির নামকরণের ক্ষেত্রে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারতের ঐতিহাসিক প্রমাণ সাপেক্ষে সেগুলােকে বিশ্লেষণ করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্টিজনক উত্তর পাওয়া যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি যে, যদি খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের মতাে মতবাদ জনপ্রিয়তা না পেতাে তাহলে উক্ত নামগুলাের বুৎপত্তিগত অর্থ ব্যাখ্যা করতে সহজ হতাে। এই দুটি ধর্মের বহু শাসক ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত ও স্থাপনার ওপর নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন গ্রন্থাগার ও স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে যা তাদের মতের বিরােধী। তবুও আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে আমরা বিশ্ব ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জিগুলোকে
এখন পাঠকের দায়িত্ব তারা রামকে কিভাবে বিবেচনা করবেন। আমরা আশাবাদী পাঠকদের চিন্তার জন্য যথেষ্ঠ পথ প্রদর্শিত হয়েছে। যারা অনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট তারা এখনাে রামের অস্তিত্বকে অস্বীকার করবে এবং যারা বিশ্বাস করে যে নিছক একটা পৌরাণিক চরিত্র সমস্ত বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধা পাওয়ার উপযুক্ত হয় না তারা রামকে ব্যাপক ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিবেচনা করবে। এখানে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলােকে পরিস্কার করতে চাই।
ক) রাম ছিলেন মহানায়ক, এমন এক রাজা ও কিংবদন্তী যিনি অবতারের মর্যাদা পেয়েছেন। যার আদর্শ আজকের পৃথিবীতেও অনুসরণযােগ্য।
খ) রাম সেতু বর্তমানে নাসা বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রমাণিত।
গ) বাল্মীকির রামায়ণ কোনাে কল্পকাহিনী নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক প্রমাণ। যারা রামের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে চান না তারা যে সমস্ত যুক্তি দিয়ে রামকে প্রমাণ করতে চান ঠিক সেই সমস্ত যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে তাদের আপন পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় কিনা তা তাদের খতিয়ে দেখা উচিত।
(Lord Rama: Myth or truth, By Dr. Vivek Arya : থেকে অনূদিত)
সবার অপ্রিয় শনি।
(সনাতন ধর্মের প্রচারক)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন