এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বেদের বৈজ্ঞানিক সতত্বতা




বেদ এর তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ভুলের কাপড় খোলা জবাব :
ফটো হিসেবে এক হুর লোভী বান্দা, মানে মুমিনের যে স্ট্যাটাসটি পোস্ট করেছি, তার জবাব দেওয়াই আমার এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য, তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক-
শুরুতেই সে লিখেছে, "আচ্ছা ঈশ্বর নিশ্চই স্বর্ব জ্ঞানী। তাহলে তো ঈশ্বর কখনো ভুল করতে পারেনা তাইনা ? কিন্তু চারটা বেদ গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ পড়তে গিয়েই বিধিবাম!!বেদে তো দেখছি ভুলের ছড়াছড়ি। বিশ্বাস হচ্ছেনা আমার কথা? তবে দেখুন”
- এর কথা শুনে মনে হচ্ছে, এ বেদ বিষয়ে এক মহাপণ্ডিত, যে চারটা বেদ পড়ে ফেলেছে এবং তাতে ভুলের ছড়াছড়ি দেখতে পেয়েছে ! কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যে এই স্ট্যাটাসটা পোস্ট করেছে, সে কোনোদিন বেদ চোখে দেখেছে কিনা আমার সন্দেহ; কারণ, এই একই স্ট্যাটাস আমি আরো অনেক জায়গায় অনেকের নামে দেখেছি, তাই যারা বা যে এই স্ট্যাটাসটা পোস্ট করে, তারা জাস্ট কপি পেস্ট করে মাত্র।
এরপর মুমিন লিখেছে, “ সাভাবিক চোখে আকাশকে একটি শক্ত ঢাকনা বা আবরনের মত দেখায় যা আমাদের মাথার উপরে বিরাজ করে। বেদের লেখক এই ভ্রম দিয়েই লিখল অথর্ব্বেদ ১১/৩/১১ এ, “প্রথিবী হচ্ছে চাল সিদ্ধ করার কড়াই আর আকাশ তার ঢাকনা“ এখানে রুপক কিছু বলা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।”
- এখানে রূপক কিছু বলা হয়েছে কি না, তা না জেনেই তুই করতে গেলি বেদ এর সমালোচনা এবং তাতে ভুলের ছড়াছড়ি দেখতে পেলি ? আর নিজের এই অজ্ঞানতা নিয়ে বুঝতে পারলি বেদ এর লেখকদের ভ্রম! আমি তো মাঝে মাঝে অবাক হই এটা ভেবে যে, যারা এক প্যারা বাংলা শুদ্ধভাবে লিখতে পারে না, তারা কোন সাহসে যায় বেদ এর মতো মহান জ্ঞানের সমালোচনা করতে এবং তার মধ্যে ভুলও দেখতে পায়! এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, এই মুমিনের স্ট্যাটাস যেভাবে পেয়েছি, সেভাবেই আমি কপি পেস্ট করে তার সমালোচনা করছি, যার একটি ফটোরূপও আপনারা ফটোপোস্ট হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন, সুতরাং মুমিনের স্ট্যাটাসের ভুল বানান বা ভুল বাক্যের জন্য সম্পূর্ণভাবে মুমিনের মূর্খতা ই দায়ী।
যা হোক, মুমিন এখানে অথর্ববেদের যে মন্ত্রটির কথা উল্লেখ করেছে, সেখানে যা বলা হয়েছে, সেটা তো মুমিনই উল্লেখ করেছে, আমি তা শুধু উপরে কপি পেস্ট করেছি মাত্র, এখন আমি শুধু এটা দেখাচ্ছি যে, আসলেই সেটা রূপক অর্থে বলা হয়েছে কি না ।
মুসলমানরা অথর্ববেদের ১১/৩/১১ নং মন্ত্রে যে ভুল দেখতে পেয়েছে, এই ধরণের ভুল তারা পুরো মন্ত্রেই দেখতে পেতো, যদি তারা বেদ খুলে মন্ত্রটি পড়তো। কিন্তু তারা বেদ পড়তে যাবে কেনো, যারা বাংলায় কোরান হাদিস ই পড়ে না, তারা আবার পড়বে বেদ ! যা হোক, এই মন্ত্রটি যে একটি সিম্বলিক মন্ত্র, সে কথা মন্ত্রের শুরুতেই বলা আছে ড. তুলসীরাম অনুবাদিত বেদে, কিন্তু যে কথা বলা হয় নি হরফ প্রকাশনী অনুদিত বেদে, হরফের বেদে অথর্ববেদের মন্ত্রগুলো সাজানোতেও সমস্যা আছে, ১১/৩/১১ রেফারেন্স ধরে হরফের অথর্ববেদ থেকে কেউ এই মন্ত্রটি বেরই করতে পারবে না, কিন্তু আমি বলে দিচ্ছি হরফের বেদে এই মন্ত্রটি আছে ২৪০/২৪১ পৃষ্ঠায়। এই মন্ত্রটি যে পুরোটাই প্রতীকী এবং সাধারণ দৃষ্টিতে যে এই সূক্তের মন্ত্রগুলো একেবারেই ভুল বলে মনে হবে, সেটা এই সূক্তের মন্ত্রগুলো পড়লেই মনে হয়, দেখুন, আমি তুলে দিচ্ছি কয়েকটি মন্ত্র-
“ঘোড়া হলো শস্য, গাভী হলো ধান বা চাল এবং মশা মাছি হলো তুষ।”-(অথর্ববেদ, ১১/৩/৫)
“কালো লোহা হলো এর মাংস এবং লাল বর্ণের ধাতু বা তামা হলো এর রক্ত।” -(অথর্ববেদ, ১১/৩/৭)
“সীসা হলো এর ছাই, সোনা হলো এর রং এবং পদ্মফুল হলো এর সুগন্ধি” - (অথর্ববেদ, ১১/৩/৮)
এখানে আমি মাত্র তিনটি মন্ত্রের উল্লেখ করলাম, কিন্তু এই সূক্তে মন্ত্র আছে ৩১ টি, যার সবগুলোই প্রতীকী, অর্থাৎ এক কথার আড়ালে প্রকাশ করা হয়েছে অন্য কিছু। এভাবেই ১১/৩/১১ নং মন্ত্রে যে বলা হয়েছে, “This eart is the pan for boiling of rice, and the heaven its cover” বা ‘এই পৃথিবী হচ্ছে চাল সিদ্ধ করার কড়াই এবং আকাশ হচ্ছে তার ঢাকনা, এটাও আসলে প্রতীকী; এর মাধ্যমে বেদে, বিজ্ঞানীদের জন্য ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত ‘ওজোন স্তর’ সম্পর্কে একটি ধারণার। বিষয়টি এমন- কোনো পাত্রে চাল সিদ্ধ বা ভাত রান্না করলে তা উদগিরিত বাষ্প যেমন তার পাত্রের ঢাকনাকে ভেদ করতে পারে না বা পাত্রকে তার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখলেও যেমন উপর থেকে কিছু সেই পাত্রের ভেতর ঢুকতে পারে না, তেমনি পৃথিবীতে জীব ও জড়ের ক্রিয়াকর্মের ফলে ধোয়া রূপ যে ক্লোরোফোরোকার্বন বা CFC উৎপন্ন হয়, সেটাও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে অবস্থিত ওজোনস্তর ভেদ করতে পারে না বা পাত্রের উপর ঢাকনা স্বরূপ সেই ওজোনস্তর ভেদ করে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি, যা পৃথিবীর প্রাণীকূলের জন্য ক্ষতিকর, তা পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারে না।
এভাবে এই মন্ত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞানের একটি সূত্রকে প্রকাশ করা হয়েছে, কিন্তু বলদ মুসলমানরা তা না বুঝে বলছে, এটা বেদের ভুল! আরে মূর্খরা, এটা মনে রাখিস, সারা পৃথিবী যখন পড়াশোনা দূরে থাক অক্ষরই চিনতো না বা অক্ষরই আবিষ্কার করতে পারে নি, তখন হিন্দুরা বেদ লিখেছে, তাই হিন্দুধর্ম নিয়ে চুলকানোর আগে বা হিন্দুদের সাথে জ্ঞান নিয়ে লাগার আগে নিজের পাছার কাপড়টা শক্ত করে বেঁধে, তারপর আসিস; কারণ, হিন্দুধর্ম নিয়ে চুলকালে কোনো মুসলমানের পাছার কাপড় রাখবো না বলে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি।
যারা ওজোন স্তরের ব্যাপারটা বোঝেন নি, তাদের জন্য বলছি- বায়ুমন্ডলের দ্বিতীয় স্তর স্ট্রাটোমন্ডলে এই ওজোন স্তর অবস্থিত, এটা ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ থেকে ৩০ কি.মি উপরে। অক্সিজেনের দুইটা রুপভেদ আছে, যার একটা সাধারণ অক্সিজেন, আরেকটা হল ওজোন। সাধারণ অক্সিজেন দুইটা পরমানু মিলে হলেও ওজোন গঠিত অক্সিজেনের তিনটা পরমাণু মিলে । আমাদের এই পৃথিবীর স্বাভাবিক অস্তিত্বের জন্য এই ওজোন স্তর অপরিহার্য। কারণ, সূর্য থেকে কিছু ক্ষতিকর রশ্মি আসে, যেগুলো এই ওজোন স্তর বিকিরণ করে মহাশুন্যে ফিরিয়ে দেয় এবং প্রয়োজনীয় ও উপকারী আলো ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠায়। যদি ঐসব ক্ষতিকর অতিবেগুণী রশ্মি, আমাদের পৃথিবীতে আসতো তাহলে আমরা বিভিন্ন রকমের মারাত্মক রোগে ভুগতাম, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- চোখে ছানি পড়া, ত্বকের ক্যান্সার প্রভৃতি।
এখন কেউ কেউ বলতে পারে, বিজ্ঞানীরা কোনো কিছু আবিষ্কার করার পর মুসলমানরা যেমন দেখতে পায় যে সেটা কোরানে ১৪০০ বছর আগেই লেখা হয়েছিলো, তেমনি আমিও বেদের একটি মন্ত্রের মধ্যে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করা একটি থিয়োরির মিল খোঁজার চেষ্টা করছি। যারা এমন ভাবছে, তাদের জন্য বলছি- হিন্দু শাস্ত্রের জ্ঞান পৃথিবীকে যে পথ দেখিয়েছে, মানুষ শুধু সেই পথে এগিয়ে চলেছে; হিন্দু শাস্ত্র তার আয়ুর্বেদ জ্ঞানের মাধ্যমে পৃথিবীকে এটা বলেছিলো যে মানুষের রোগ ব্যাধি হলে চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করা সম্ভব, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কাজ করেছে এবং করছে শুধু সেই পথে; কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ২৩০ কি.মি দূরে থেকে হস্তিনাপুরের প্রাসাদে সরাসরি দেখিয়ে হিন্দু শাস্ত্র এটা বলেছিলো যে, দূর দূরান্ত থেকেও মানুষ এক সময় সরাসরি সব কিছু দেখতে পারবে, বর্তমানের লাইভ টিভি সম্প্রচার, সেটারই বাস্তবায়ন; রামায়নের পুষ্পক রথ, বর্তমানের বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থারই ইঙ্গিত; এই ১০০ বছর আগের মানুষও সম্ভবত এটা ভাবতে পারে নি যে, এক অস্ত্রে একই সাথে শত শত বা হাজার হাজার বা লাখ লাখ মানুষ মারা সম্ভব, কিন্তু সেই ইঙ্গিত আমরা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অহরহ দেখতে পাই। এসব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি হিন্দুশাস্ত্রীয় জ্ঞানের কাছাকাছি পৌছতে পারলেও, এক জনের মাথা কেটে আরেকজনের মাথায় প্রতিস্থাপন করতে এখনও সফল হয় নি, যেটা গনেশের মাথা কাটার ঘটনার মাধ্যমে ইঙ্গিত দেওয়া আছে। এছাড়াও একটি মাত্র অস্ত্র, যেটা হিন্দু শাস্ত্রে বলে ব্রহ্মাস্ত্র, সেটা দিয়ে পৃথিবীকে ধ্বংস করা সম্ভব, যা বলা হয়েছে মহাভারতে তা বিজ্ঞানীরা এখনও আবিষ্কার করতে পারে নি। তাছাড়াও বিজ্ঞানীরা এখনও মাতৃগর্ভের বাইরে কোনো শিশুর বেড়ে উঠা ও জন্ম ঘটাতে পারে নি, যেটা বেদব্যাস করে গেছেন প্রায় ৫২০০ বছর আগে মহাভারতে, তবে বিজ্ঞানীরা বলছে, এটা তারা ২০২৫ সালের আগেই করতে পারবে, এ নিয়ে ২০১৬ থেকে জোর গবেষনা তারা চালাচ্ছে। তাই আমার কথার সমালোচকদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, হিন্দুরা বিজ্ঞানের সাথে নিজেদের ধর্মের মিল খুজে না, বরং বিজ্ঞান হিন্দুধর্মের দেখানো পথে চলে।
উপরে যা বললাম, অনেকেই বলবে, এগুলো না হয় বুঝলাম, কিন্তু অথর্ববেদের এই মন্ত্রে কিভাবে ওজোন স্তর বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া আছে ?
খেয়াল করুন মন্ত্রটা -“This eart is the pan for boiling of rice, and the heaven its cover” বা ‘এই পৃথিবী হচ্ছে চাল সিদ্ধ করার কড়াই এবং আকাশ হচ্ছে তার ঢাকনা।
এরপর ভাবুন, বেদ রচয়িতা মুনি ঋষিদের কি এমন দায় পড়েছিলো যে- পুরো পৃথিবীকে রান্নার একটি কড়াই এবং তার ঢাকনাকে আকাশের সাথে তুলনা করার ? সাধারণ কোনো লোক কি কখনো এটা ভাবতে পারবে ? সাধারণ কোনো লোক কি কখনো পুরো পৃথিবীকে দেখতে পেরেছে, না দেখতে পারবে ? তাহলে এটা এমনি ই ধরে নেওয়া যায় যে মুনি ঋষিরা কড়াইয়ে ভাত রান্নাকে বর্ণনা করার জন্য বেদে এই কথা বলেন নি, এই বলার পেছনে নিশ্চয় তাদের অন্য কোনো ইঙ্গিত বা উদ্দেশ্য আছে। মুনি ঋষিরা এখানে কথা বলেছে পুরো পৃথিবী এবং দৃশ্যমান আকাশ নিয়ে, তাহলে আমাদেরকে সেই রকম বিষয়ই ভাবতে হবে যা পুরো পৃথিবী এবং আকাশ সম্পর্কিত; পুরো পৃথিবী, আকাশ, পৃথিবী থেকে উৎপন্ন ক্ষতিকর গ্যাস, সেই গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলের স্তর ভেদ করে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে না পেরে পৃথিবীরই সর্বনাশ সাধন, ফুটন্ত বাষ্পের চাপ বেশি হলে ঢাকনাকে সরিয়ে বা শক্ত করে আটকানো ঢাকনাকে ছিদ্র করে গ্যাস বেরিয়ে যাওয়া ( ওজোন স্তরের ছিদ্র) - এই বিষয়গুলোর সাথে পৃথিবী এবং ওজোন স্তরের বিষয়টি কল্পনা করুন, তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন বেদের এই মন্ত্রে কিভাবে ওজোন স্তরের বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া আছে।
যা হোক, এরপর মুমিন তার কমেন্ট বলেছে,
“কোরানেও আকাশকে ছাদ বলা হয়েছে তবে কার্যকারিতার দিক থেকে তা ছাদের সাথেই মিলে যায় যেমন আমাদের বায়ুমন্ডলের স্তর ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি সহ আরো অনেক ক্ষতিকর পদার্থ হতে প্রথিবীকে রক্ষা করে ঠিক ছাদের মত, কিন্তু কোরানে কোথাও বলা হয় নি আকাশ শক্ত তবে রিগবেদ মন্ডল ৪ সুক্ত ৪২ মন্ত্র ৩ এ বলা হয়েছে, “ভরুনা আকাশকে বানিয়েছেন শক্ত” অর্থাৎ বেদে ঢাকনা রুপক অর্থে বুঝালেও তা যে শক্ত তা স্পস্ট।একি কথা আছে অথর্ববেদ ৬/৪৪/১ এ”
মুমিন বলেছে, “কোরানে আকাশকে ছাদ হিসেবে বলা হলেও কোথাও বলা হয় নি যে আকাশ শক্ত” ।
-কোরান পড়ে এই কথা বলছিস, না কোরান সম্পর্কে জাকির নায়েকের মিথ্যাচার শুনে এসব শিখেছিস ? আকাশকে ছাদের সাথে তুলনাই বা করা হবে কেনো ? একটা ছাদকে ধরে রাখতে মিনিমাম চারটা খুঁটি লাগে, আকাশের খুঁটি কোথায় ? একটা বাড়ির ছাদের সাথে আকাশকে তুলনা করেছে তোর আল্লা, তোদের প্রাণের কোরানে; আল্লা কত বড় বলদ, সেটা তুই একবার নিজেই বিচার কর, তার কত ক্ষমতা সেটা পড়ে ভাবিস। এখন দেখ কোরানে আকাশ সম্পর্কে কী কী বলা হয়েছে এবং তাতে কোরানের আকাশ শক্ত কি না, সেটাও দেখ-
“আর আকাশ মণ্ডল উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, ফলে তা কেবল দুয়ার আর দুয়ার হয়ে দাড়াবে।– (কোরান, ৭৮/১৯)
কোনো কিছু শক্ত না হলে কিভাবে তা উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব, আর শক্ত না হলে কিভাবে কারো সাথে দরজা লাগানো সম্ভব ?
“যখন নভোমণ্ডল দীর্ণ বিদীর্ণ হয়ে যাবে এবং লাল চামড়ার মতো রক্তবর্ণ ধারণ করবে।” -(কোরান, ৫৫/৩৭)
কোরানের আকাশ যদি শক্ত না হয় কিভাবে তা দীর্ণ বিদীর্ণ করা সম্ভব ? জলকে কেটে তুই দীর্ণ বিদীর্ণ করে দেখাস দেখি।
“তোমাদের উপর সাতটি সুদৃঢ় আকাশ মণ্ডল স্থাপন করেছি।”- (কোরান, ৭৮/১২)
-এখানের সুদৃঢ় শব্দ দ্বারা কী বোঝায়; শক্ত, না অন্য কিছু ? আর আকাশ কি সাতটি ? সাতটি আকাশ প্রমান করে দেখা বা গুনে দেখা। এই সাত আকাশ আছে আবার একটির উপরে একটি, যেন সাত তলা বিল্ডিং, দেখ নিচের
আয়াত-
“তোমরা কি লক্ষ্য করো না যে আল্লাহ কিভাবে সাত আসমান স্তরে স্তরে নির্মান করেছেন ?”- (কোরান, ৭১/১৫)
এই আয়াতটা কে বলেছে, আল্লা, না মুহম্মদ ? যদি আল্লা এই কথা বলে থাকে, তাহলে বাক্যটি এমন কেনো যা তা মুহম্মদের বলা মনে হচ্ছে ? আল্লা বললে, কথাটি তো হতো এমন- “তোমরা কি লক্ষ্য করো না যে আমি কিভাবে সাত আসমান স্তরে স্তরে নির্মান করেছি ?”
এই কোরানকে তোরা আবার আল্লার বানী হিসেবে মানিস, তোদের মতো মূর্খ এবং বলদা কি পৃথিবীতে আর কেউ আছে ? দেখ, নিচের এই কথাটিও তোদের আল্লা নয়, মুহম্মদই বলেছে-
“আল্লাই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ এবং এদের অনুরূপ পৃথিবীও।”– (কোরান, ৬৫/১২)
- আকাশের অনুরূপ নাকি পৃথিবী!
এই কোরানকে মুসলমানরা আবার ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মানে, এরা কি আর এমনি এমনি মূর্খ হিসেব সারা পৃথিবীতে পরিচিত ?
কোরানের আকাশ যে শক্ত এবং তা বিল্ডিং এর ছাদের মতো একটির উপর আরেকটি অবস্থিত, তা আমার কথাতে নয়, কোরানের উপরের ঐ কয়েকটি আয়াত দ্বারাই প্রমানিত।
কিন্তু এই মুমিন যে বলেছে, ঋগ্বেদের একটি মন্ত্র ৪/৪২/৩ এ বলা হয়েছে আকাশ শক্ত, এবার সেই বিষয়টি দেখা যাক-
ঋগ্বেদের এই মন্ত্রে বলা আছে,
অহমিন্দ্রো বরুণন্তে মহিত্বোর্বী গভীরে রজসী সুমেকে।
ত্বষ্টেব বিশ্বা ভুবনানি বিদ্বান্তসমৈরয়ং রোদসী ধারয়ং চ।।
এর অর্থ - আমি শক্তিমান ও মহান ইন্দ্র, আমি সর্বজ্ঞ এবং সর্বত্র পরিব্যপ্ত বরুন; এই চিরন্তন বিশাল পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করে সুখী এবং গৌরবান্বিত, সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে সংগতি সাধন করি এবং এই মহাবিশ্বকে ধারণ ও পরিচালনা করি।
এর মধ্যে কি কোথাও বলা আছে যে আকাশ শক্ত ? বেদ কি মুহম্মদের মতো কোনো মহামূর্খের রচনা যে তাতে বলা থাকবে আকাশ শক্ত, স্তরে স্তরে সজ্জিত, আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হবে, আকাশ দীর্ণ বিদীর্ণ হবে ?
এই শক্ত আকাশের কথা নাকি আবার বলা আছে অথর্ববেদের ৬/৪৪/১ নং মন্ত্রে, এই মন্ত্রটি পাওয়া যাবে হরফ প্রকাশনীর বেদের ১৫১ পৃষ্ঠায়, এখানে বলা আছে-
"অস্থাদ দৌরস্থাৎ পৃথিব্যস্থাদ বিশ্বমিদং জগৎ। আস্থানে পর্বতা অস্থ স্থাম্ন্যশ্বাঁ অতিষ্ঠিপম"অস্থাদ দৌরস্থাৎ পৃথিব্যস্থাদ বিশ্বমিদং জগৎ। আস্থানে পর্বতা অস্থ স্থাম্ন্যশ্বাঁ অতিষ্ঠিপম।।"
এর অর্থ- পর্বত যেমন তার স্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত, অশ্ব যেমন তার রজ্জুর দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত, তেমনি এই মহাবিশ্বও তার অবস্থানে সুনিয়ন্ত্রিত।
এর মধ্যে আকাশ শক্ত, এমন কি কিছু বলা আছে ?
না, নেই।
এরপর সে লিখেছে,
"তবে সেই সাথে এই মন্ত্রে আরো একটি ভুল আছে, তা হচ্ছে আমরা জানি প্রথিবী গতিশীল,ও তা সুর্যের চারদিকে ঘোরে। কিন্তু এই মন্ত্রে বলা হয়েছে, “প্রথিবী স্থির ও নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে।"
কিন্তু এই মন্ত্রে যে এমন কিছু বলা নেই, এই মন্ত্রে একটি সুনিয়ন্ত্রিত পৃথিবীর কথা বলা আছে, সেটা তো একটু আগেই প্রমান করে দিলাম।
তারপর মুমিন বলেছে,
"এই একবিংশ শতাব্দিতে এসে কেউ যদি বলে প্রথিবী স্থির, তাহলে আর কি বলা?"
-এই মুমিন বোধহয় জানে না যে, এই বেদ, তার কোরানেরও, মিনিমাম সাড়ে ছয় হাজার বছর আগে লেখা, এত প্রাচীন গ্রন্থ হওয়া সত্ত্বেও বেদে কোনো বৈজ্ঞানিক ভুল নেই, বরং বেদে এমন সব কথা লিখা আছে, যা বিজ্ঞানকে পথ দেখিয়েছে, দেখাচ্ছে; কিন্তু মাত্র ১৪০০ বছর আগে লিখা কোরান কিভাবে বলে যে পৃথিবী সমতল ? আর সমতল পৃথিবীই ঘুর্ণায়মান নয়, স্থির পৃথিবীর ধারণা দেয়, অনুধাবন কর নিচের এই আয়াত-
"ভূপৃষ্ঠকে আমিই বিস্তিীর্ণ করে বিছিয়েছি। আর আমি উত্তম সমতল রচনাকারী।"- ( কোরান, ৫১/৪৮)
এরপর মুমিন বলেছে, "
"বৈদিক ঈশরের নিশ্চয়ই ধারনা ছিল না যে অদুর বা সুদুর ভবিস্যাতে বিজ্ঞান কতখানি এগোবে।"
"অদুর বা সুদুর ভবিস্যাতে" বিজ্ঞান কতখানি এগোবে, সেটা হিন্দুশাস্ত্রেই বলে দেওয়া আছে, যেখানে বিজ্ঞান এখনও পৌছতেই পারে নি, বিজ্ঞান কি এখনও পেরেছে মাতৃগর্ভের বাইরে ভ্রুণের বিকাশ ও জন্ম ঘটাতে (মহাভারতে গান্ধারীর শতপুত্র জন্ম রহস্য) ? বিজ্ঞান কি পেরেছে এক মানুষের মাথা কেটে অন্য মানুষের দেহে জুড়ে দিতে (গনেশের মাথা রহস্য)? বিজ্ঞান কি পেরেছে এমন একটি অস্ত্র তৈরি করতে যা মূহুর্তে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস করে দিতে সক্ষম (ব্রহ্মাস্ত্র)? হিন্দুশাস্ত্রে এতখানি এ্যাডভান্স বিজ্ঞানের কথা বলা আছে যে, যে জায়গায় পৌছতে বিজ্ঞানীদের আরও হয়তো কয়েকশত বা কয়েক হাজার বছর লেগে যেতে পারে। কিন্তু ইসলামী বিজ্ঞান তো বলে- কালোজিরা সকল রোগের মহৌষধ, মানুষের জ্বর হয় দোযখের আগুনের তাপ থেকে, মাছির এক ডানায় থাকে জীবানু, অন্য ডানায় প্রতিষেধক, এমন আরো সব হাস্যকর ব্যাপার স্যাপার।
যা হোক, এরপর মুমিন বলেছে,
"একি কথা আবার আছে অথর্ববেদ ১২/১/২৬ এ “প্রথিবী স্থির তার অবস্থান ও তার অক্ষে”
-যখনই বলা হচ্ছে যে, পৃথিবী তার অক্ষে অবস্থিত, তখনই এটা বলা হয়ে যাচ্ছে যে, পৃথিবী সেই অক্ষ ধরে আবর্তন করে, তার মানে পৃথিবী স্থির নয়; কিন্তু মুমিনা বলছে পৃথিবী স্থির এবং তার অবস্থান অক্ষে, ব্যাপারটা বোরকা হিজাব পড়ে বেশ্যাবৃত্তি, মানে একই অঙ্গে দুই রূপ হয়ে গেলো না?
এরপর মুমিন আবার বলেছে, "এখানে তুলসীরাম একটি বাড়তি ‘অক্ষ’ যুক্ত করেছেন, তবে মুল মন্ত্রে অক্ষ শব্দটা নেই,"
-মুমিন নিজেই বলছে, অথর্ববেদের ১২/১/২৬ নং মন্ত্রের অনুবাদ "“প্রথিবী স্থির তার অবস্থান ও তার অক্ষে”, আবার বলছে মূল মন্ত্রে অক্ষ শব্দটা নেই। তাহলে দেখা যাক, মূল মন্ত্রে অক্ষ শব্দটা আছে কি না-
মন্ত্রটা হলো-
"শিলা ভূমিরশ্মা পাংসুঃ সা ভূমিঃ সন্ধৃতা ধৃতা। তস্যৈ হিরন্যবক্ষসে পৃথিব্যা অকরং নমঃ।।"
এখানের "হিরন্যবক্ষসে" মধ্যেই অক্ষ শব্দটা রয়েছে, কারণ এই সংস্কৃত শব্দের উচ্চারণ হলো 'হিরণ্যব+অক্ষ+সে'।
এরপর মুমিন বলেছে, "আর্য সমাজেরই আরেক অনুবাদক দেবীচাঁদ এই মন্ত্রের অনুবাদে লিখেছেন “প্রথিবী দাঁড়িয়ে আছে স্থির তার গুনাবলির কারনে“, আর বেদে যে পৃথিবি স্থির এটা প্রমান হিসেবে বেদাংগেও রয়েছে। বেদাংগ (নিরুক্ত ১০/৩২) সবিতা পৃথিবিকে স্থির করে রেখেছেন খুটি দ্বারা।"
বেদে বর্ণিত পৃথিবী যে স্থির নয়, তার প্রমান অক্ষ শব্দের মধ্যেই রয়েছে; কারণ, যেখানে অক্ষ বা পথের কথা বলা হয়েছে, সেই পথ ধরে পৃথিবী চলে বলেই তা বলা হয়েছে। এখানে মুমিন আরো বলেছে, বেদাঙ্গে নাকি আছে যে, "সবিতা পৃথিবিকে স্থির করে রেখেছেন খুটি দ্বারা", খুটির কথা তখনই আসবে, যখন ছাদের কথা আসবে, আর আকাশ যে ছাদ, সেটা কে বলে, বেদ, না কোরান ?
কেউ যদি ভুল গিয়ে থাকেন, স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি আকাশ সম্পর্কে কোরানের সেই মহান জ্ঞান
"তোমাদের উপর সাতটি সুদৃঢ় আকাশ মণ্ডল স্থাপন করেছি।" (কোরান, ৭৮/১২)
এখানে আকাশই যে ছাদ এবং তা খুটি দ্বারা স্থাপন করে হয়েছে, সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই।
তারপর মুমিন বলেছে, "এবার দেখুন আকাশ ও প্রথিবী সম্পর্কে বেদের সম্পুর্ন কাল্পনিক ধারনা, খালি চোখে প্রথিবীতে বসে মনে হয় আকাশ উপরে আর প্রথিবী নীচে, তাই বেদ বলছে, অথর্ববেদ ৯/৭/২ ” আলোর জগত(সৌরজগত) হচ্ছে উপরের চোয়াল আর প্রথিবী হচ্ছে নীচের চোয়াল।”
-কিন্তু এই মুমিন জানে না বা জানলেও হিন্দুধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন মানসে এটা গোপন করে গেছে যে, অথর্ববেদের ১১/৩/১১ মন্ত্রের মতো এটাও একটি রূপক মন্ত্র, এখানে মহাবিশ্বের সব কিছুকে গরুর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যেটা তুলসীরাম, তার অনুবাদে মন্ত্রের শুরুতেই বলে দিয়েছেন, কিন্তু যেটা বলা নেই হরফ প্রকাশনীর বেদে। রুপক হিসেবে না ভাবলে অথর্ববেদের ১১/৩/১১ মন্ত্রের যেমন সবকিছুই ভুল বলে মনে হয়, তেমনি রূপক হিসেবে না ভাবলে এই মন্ত্রকেও ভুল হিসেবে মনে হবে, দেখুন এই সূক্তের কয়েকটি মন্ত্র বা মন্ত্রের কিছু কিছু অংশ-
"ইন্দ্র হলো মাথা, মহাবিশ্বের তাপ অগ্নি হলো কপাল এবং যম বা আইন হলো দেহ ও মস্তিষ্ক্যের সন্ধিস্থল, ঘাড়"- (অথর্ববেদ, ৯/৭/১)
"সোমো রাজা হলো মস্তিষ্ক্য, আলোরজগত হলো উপরের চোয়াল, পৃথিবী হলো নিচের চোয়াল।"- (অথর্ববেদ, ৯/৭/২)
এভাবে এই সূক্তটি রূপক এবং রূপক হিসেবে না ভাবলে দেখুন এই সূক্তের সবগুলো মন্ত্রকে শুধু ভুল নয়, বোগাস হিসেবে মনে হবে। আর আপনি তখনই এই মন্ত্রগুলোকে রূপক হিসেবে না ভেবে বাস্তব হিসেবে ভাববেন, যখন আপনি বেদ রচয়িতা মুনিদের মেধা ও দিব্যদৃষ্টিকে উপলব্ধি করতে না পারবেন, অর্থাৎ আপনি যখন মুসলমানদের মতো নির্বোধ বা বলদা হবেন, যেমন এই কপিপেস্ট মুমিন ফ্রম জোকার নায়েক
সংগৃহীত