এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০

গোমুত্র অপপ্রচার

গোমূত্র নিয়ে কিছু মুসলিমদের করা কটুক্তির জবাবঃ
কথায় কথায় কিছু মুসলমানরা সবসময় হিন্দুদের কে বলতে থাকে, গোমূত্র কি শুদ্ধ জিনিস? ভালো হিন্দু হতে গেলে নাকি গোমূত্র পান করতে হয়। এইটা তো মানবতার লঙ্ঘন এর শামিল।
কিন্তু তারা গোমূত্রের পান করা নিয়ে কোনো রেফারেন্স দেয় না। আর আমি মনে করি যারা রেফারেন্স না দিয়ে কথা বলে, তারা রাস্তার পাগলা কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করার সমান। আর এরা রেফারেন্স দিবে বা কি করে, থাকলেই তো দিবেই। কারন এরা জানে সনাতন ধর্ম থেকে কাউকে দূরে সড়াতে হলে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
সনাতন ধর্মের প্রামান্য শাস্ত্র বেদ, উপনিষদ, মহাভারত, গীতা কোথাও গোমূত্র খাওয়ার কথা উল্লেখ নেয়। যদিও কেউ গোমূত্র খেয়েও থাকে তার জন্য সনাতন ধর্ম কোনোভাবে দায়ী নয়।
প্রকৃতপক্ষে এমন বিধি আছে ইসলামধর্মে। আরবের মুসলিমদের ভেতর উঠের মূত্র পান খুবই জনপ্রিয়। তার প্রমান হাদিস এ বলা আছে দেখুনঃ
"আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত আছে, উরাইনা হতে কয়েকজন লোক মাদীনায় আসল। এ অঞ্চলের আবহাওয়া তাদের স্বাস্থ্যের অনুকূল না হওয়ায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সাদকার উটের এলাকায় পাঠিয়ে দেন এবং বলেনঃ তোমরা এ দুধ ও প্রস্রাব পান কর। (সহীহ আত্-তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নাম্বার ১৮৪৫, প্রকাশনায়: হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী)
"লায়স আরো বলেছেন যে, ইউনুস (রহ.) ইবনু শিহাব (রহ.) থেকে আমার নিকট বর্ননা করেছেন, তিনি বলেছেন যে, আমি এ হাদিসের বর্ননাকারী (আবূ ইদরীস)-কে জিঙ্গেস করছি যে, গাধীর দুগ্ধ, হিংস্র প্রানীর পিত্তের রস এবং উটের পেশাব পান করা বা তা দিয়ে অযু বৈধ কিনা? তিনি বলেছেনঃ আগেকার মুসলিমগন উটের প্রস্রাবের সাহায্য চিকিৎসার কাজ করতেন এবং এটা তারা কোন পাপ মনে করতেন না।"(সহীহ বুখারী, হাদিস নাম্বার ৫৭৮১, প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স)
এই দুইটা হাদিস পড়েই আমরা এতক্ষনে বুঝতে পারলাম, ইসলামের উঠের মুত মহা ঔষধ যা ইসলামের নবী মোহাম্মদ নিজে বলে গেছেন।
যাইহোক আমি ভাবলাম উঠের মূত্র আবার কেউ খায় নাকি, কিন্তু সত্যিটা জানতে গিয়ে যা পেলাম সেটা হলো, মুসলিমরা সত্যি সত্যি উঠের মূত্র পান করে। দেখুন ভিডিওতে সৌদি আরবের মুসলিমরা কিভাবে উঠের মূত্র পান করে।
এছাড়াও আরবদেশ গুলোতে পেট্রোলের চেয়ে কয়েকগুন বেশি দামে এই উঠের মূত্র বিক্রি হয়ে থাকে। সম্প্রতি কয়েকটি দোকান সৌদি সরকার বন্ধ করে দিয়েছে, কারন উঠের মুতের পরিবর্তে নিজ প্রস্রাব বিক্রির দায়ে বন্ধ হয়ে গেলো বেশ কিছু সৌদি উঠের মুতের দোকান। বিস্তারিত লিংক এ গিয়ে দেখুন।
Link:
এরপর একদিন জানতে পারলাম, উঠের মুত না খাওয়ার জন্য মুসলমানদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিস্তারিত জানতে দেখুন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়।
Link:
পরে ভাবলাম মুসলমান ভাইয়েরা হাদিস পড়ে বা মোহাম্মদের কথা শুনে উঠের মুত খাবে তাতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমস্যা কীসের???
শেষে ঘেটে যা পেলাম তা অবিশ্বাস করার মত। মুসলমানদের মধ্যে এক ধরনের ভাইরাস পাওয়া গেছে যা ভয়ানক ধরনের শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত রোগ, এছাড়া জ্বর, সর্দি রোগও সৃষ্টি করছে। সেটি মধ্যপ্রাচ্চে অনেকটা মহামারী আকার ধারন করেছে। এই রোগটির নাম দেয়া হয়েছে Middle East Respiratory Syndrome (MERS). রোগটি শুধুমাত্র মুসলমানদের হচ্ছে এবং সেটি উঠের মুত পান করার জন্য তা নিশ্চিত হয়েছে বিশ্বের এই সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সংস্থা। তাই তারা কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে উঠের মুত না খাওয়ার জন্য। এই রোগে এই পর্যন্ত অনেকজন প্রান হারিয়েছেন এবং এটি ধীরে ধীরে সৌদিদের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারি এবং এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ
Link:
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সেইসব মুসলিমদের আমি বলতে চায় আপনারা যারা গোমূত্র নিয়ে শুদ্ধতার প্রশ্ন তুলেছেন, এখন বলেন তো উঠের মুত কী শুদ্ধতা?
উঠের মুত খাওয়ার ফলে অনেকের মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খুলে ঢুলে পড়ছে, যা এ পর্যন্তই অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। আপনাদের যখন মনে হয় হিন্দুরা গোমূত্রে খেলে মানবতার লঙ্ঘন হয়ে যায়। যদিও সনাতনধর্মে গোমূত্র খাওয়ার বিধান নেই। তো সেইসব মুসলিমদের আমি বলতে চাই, উপরোক্ত উল্লেখিত থেকে কি প্রমান হয়না যে, উঠের মুত খাওয়ার ফলে মানবতার লঙ্ঘন শামিল হচ্ছে?
তাছাড়া সেইসব মুসলিমদের আরেকটা দাবি হলো ভালো হিন্দু হতে গেলে নাকি গোমূত্র পান করতে হবেই। তাহলে আমি সেসব মুসলিমদের বলতে চাই, আপনাদের ভালো মুসলিম হতে গেলে তো অবশ্যই আপনাকে উঠের মুত পান করতে হবেই। তবে শেষ পরিনিতি কি হবে, উঠের মুত পান করার ফলে আপনার ভাইরাসজনিত মৃত্যু। তাহলে উঠের মুতের চেয়ে গোমূত্র খাওয়া আপনার জন্য মঙ্গলজনক নয় কী? তাহলে তো অনন্ত প্রানে বেঁচে যাবেন।
আশা করি গোমূত্র নিয়ে অপপ্রচারের জবাব দিতে পেরেছি, ভবিষ্যতে যাতে গোমূত্র প্রসঙ্গ নিয়ে সনাতনধর্মকে কটুক্তি করার আগে একবার হলেও ভেবে নিবেন। নয়তো গর্তে পড়লে সেখান থেকে আর বের হয়ে আসতে পারবেন না।
জয় শ্রীরাম জয় শ্রীকৃষ্ণ জয় হোক সত্য সনাতনের🙏
suvongkar deb shuvo

শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০

কৃষ্ণ ও তাকে নিয়ে অপপ্রচার

অনেকের দাবি হলোঃ



শ্রীকৃষ্ণ তার নিজ আপন মামী রাধার সাথে প্রেম করেছে, এমনকি ১৬১০৮টি মেয়েকে বিবাহ করেন, এই কেমন ঈশ্বর যে পরকিয়া লিপ্ত থাকে। আবার অনেকেই বলে, লক্ষ্মীদেবীর অংশ হলো রাধা, এই সূত্র তারা রাধাকৃষ্ণের প্রেম সত্য বলে ধরে নেই, অনেকে আবার হয়তো রাধাকে, শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী বলে ধরেও নেই।
এই প্রশ্নগুলো সচারচর মুসলমানরা সাধারন সনাতনী ব্যাক্তিদের করে থাকে, কিন্তু তারা এই প্রশ্নের গুলোর সম্মুখীন হলেও তাদেরকে সদুত্তর দিতে পারেনা, অনেক সময় এই প্রশ্নগুলো নিয়ে সাধারন সনাতনীরা হীনমন্যতা ভোগে এবং তারা নিজের ধর্মকে তখন ভ্রান্ত বলে মনে করতে থাকে। আজকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
এখন দেখা যাক রাধা কৃষ্ণের মামী কিনা?
আপনারা জানেন মামীর স্বামী হলো মামা, আর সেই মামা হলো মায়ের ভাই। মুমিনরা বলছে যে, রাধা কৃষ্ণের মামী। তাহলে রাধার স্বামীকে হতে হবে কৃষ্ণের মায়ের কোনো ভাই। এখন দেখা যাক রাধার স্বামী বলে যাকে বলা হয় সেই আয়ান ঘোষ, প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণের মায়ের ভাই কিনা।
কৃষ্ণের মা ছিলো দুইজন। জন্মদাত্রী দেবকী, আর পালক যশোদা। দেবকীর ভাই কংস, কংসের যেহেতু অন্য কোনো ভাই ছিলো না সেহেতু এই দিক থেকে কৃষ্ণের অন্য কোনো মামা থাকা সম্ভব নয়। বাকী রইলো যশোদা; কথিত রাধার কথিত স্বামী আয়ান ঘোষ যে যশোদার ভাই সেই ব্যাপারে শ্রীমদ্ভাগবত, যেটা শ্রীকৃষ্ণের প্রামান্য জীবনী এবং মহাভারত, যাতে কৃষ্ণের জীবনের অনেক কাহিনী আছে, এই দুটো গ্রন্থে কোনো তথ্য নেই। এছাড়া আয়ান ঘোষও যে একটা কাল্পনিক চরিত্র তার প্রমান তার ঘোষ পদবী দিয়ে।কারন কৃষ্ণের সময় ঘোষ পদবী বলে কিছু ছিলো না। এই ঘোষ পদবি মধ্যযুগের উৎপত্তি। সংস্কৃত ভাগবত এবং মূল মহাভারতে রাধা কৃষ্ণের প্রেমের কোনো কথা উল্লেখ নেই।
তারপর দেখা যাক রাধা, লক্ষ্মীদেবীর অংশ কিনা?
হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ অনুবাদকৃত মহাভারতে বলা আছে,
"লক্ষ্মীদেবীর অংশ, শ্রীকৃষ্ণেরই প্রীতির জন্য পৃথিবীতে আসিয়া ভীষ্মকরাজার কন্যারূপে রুক্মিণী নামে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন।।
(মহাভারতঃ আদিপর্ব, দ্বিষষ্টিতমোধ্যায় (৬২ অধ্যায়), শ্লোক ১৫৭)
সুতরাং, আমরা দেখতেই পাচ্ছি, রাধা কোনো লক্ষ্মীর অংশ নয়। একমাত্র লক্ষ্মীর অংশ হলো রুক্মিণী। তার মানে শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী হওয়ার যোগ্য রাখে শুধুমাত্র লক্ষ্মীদেবীর অংশ স্বয়ং রুক্মিণী ই। কারন যিনি রুক্মিণী তিনিই হলেন লক্ষ্মী এবং যিনি শ্রীকৃষ্ণ তিনিই হলেন নারায়ন। শ্রীকৃষ্ণই যে স্বয়ং নারায়ন, এই প্রসঙ্গে হরিদাশ সিদ্ধান্ত বাগীশ অনুবাদকৃত মহাভারতে বলা আছে,
" নারায়ন নামে যিনি সনাতন এবং দেবগনেরও দেবতা ছিলেন, তিনিই মর্ত্ত্যলোকে আসিয়া প্রতাপশালী কৃষ্ণরূপে জন্মগ্রহন করিয়াছিলেন।।
(মহাভারতঃ আদিপর্ব, দ্বিষষ্টিতমোহধ্যায় (৬২ অধ্যায়), শ্লোক ১৫২)
এরপর দেখা যাক শ্রীকৃষ্ণ কাকে বিবাহ করেছিলেন?
মহাভারত এর অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় ১৪, শ্লোক ৭ এবং আদিপর্ব, অধ্যায় ৬২, শ্লোক ১৫৬ এখানে বলা আছে, শ্রীকৃষ্ণের ১৬০০০ স্ত্রী ছিলো। কিন্তু বাস্তবে এই শ্লোক গুলো প্রক্ষিপ্ত। কেননা মহাভারতের আগে মোট শ্লোক ছিলো ৮৪,৮৩৬। এখন বর্তমানে শ্লোক ১,০৭,৩৯০। যা বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে অনেক গুলো শ্লোক প্রক্ষিপ্ত হয়েছে।
পুরান এর কাহিনি অনুসারে আমরা পাই, নরকাসুর থেকে শ্রীকৃষ্ণ এই ১৬০০০ মেয়েকে বন্ধি থেকে উদ্ধার করে বিবাহ করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে অনেকে বলে সেই সময়ে সমাজে এইসব মেয়েদের বিবাহ দেওয়ার সম্ভব ছিলো না বিধায় তাই তাদেরকে শ্রীকৃষ্ণ বিবাহ করে নেই। কিন্তু বাস্তবে এইসব ঘটেও নি সেটার প্রমান আমরা নরকাসুরের জন্মের বৃত্তান্ত থেকেই জানতে পারবো।
বিষ্ণু যখন বরাহ অবতার রূপ ধারন করে জলমগ্ন পৃথিবীকে উদ্ধার করেছিলেন, তখন পৃথিবী ও বরাহের সংস্পর্শে নরকাসুরের জন্ম, এই সূত্রে পৃথিবী মানে Earth হলো নরকের মা। এখন বলেন, বাস্তবে এটা কি সম্ভব? পৃথিবী কি মানুষ, যে সে সরাসরি কোনো মানব সন্তানের জন্ম দেবে?
নরকাসুরের জন্মের এই অবাস্তব কাহিনীই বলে দেয় যে, নরকাসুরের ঘটনা সম্পূর্ণ বানানো।
যদি কৃষ্ণ এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতো, তাহলে যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সময়, সেখানে উপস্থিত শিশুপাল, যে ছিলো কৃষ্ণের প্রধান শত্রু ও সমালোচক, সে কৃষ্ণ নিন্দার সময় এই ষোলহাজার একশ আটজন মেয়ের ঘটনার কথা অবশ্যই উল্লেখ করতো, কিন্তু শিশুপালও তা উল্লেখ করেনি, যেমন শিশুপাল উল্লেখ করেনি রাধার কথা। কারন, কৃষ্ণের জীবনে রাধা বলে যেমন কেউ ছিলো না, তেমনি তার জীবনে ১৬,১০৮ মেয়েকে উদ্ধার ও বিয়ে করার ঘটনাও ঘটেনি। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী একমাত্র রুক্মিণী ছিলেন, তাই সেই সময় শিশুপাল একমাত্র রুক্মিণী দেবীর কথা উল্লেখ করেছিলেন, শুধুমাত্র রুক্মিণী ই হলেন শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী।
যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সময় শিশুপাল এর শ্রীকৃষ্ণের নিন্দার সময়, শ্রীকৃষ্ণ বিদর্ভরাজ ভীষ্মক এর কন্যা রুক্মিণী কে তার সম্মতিতে হরন পূর্বক বিবাহ করেন। কারন রুক্মিণীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে শিশুপালের সহিত বিবাহ দেওয়া হচ্ছিলো। মহাভারতের সভাপর্বে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করে শ্রীকৃষ্ণ বলেন,
"এই মুমূর্ষু মূর্খটার রুক্মিণীকে লাভ করিবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু শুদ্র যেমন বেদবাক্য শুনিতে পারে না, এ মূর্খটারও তেমন রুক্মিণীকে লাভ করিতে পারে নাই। কিন্তু প্রতাপশালী শিশুপাল কৃষ্ণের সেই কথাগুলি শুনিয়া অট্ট হাস্য করিলেন এবং এই কথা বলিলেন।" (মহাভারতঃ সভাপর্ব, অধ্যায় ৪৪, শ্লোক ১৫-১৬)
এরপর শিশুপাল কৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
"কৃষ্ণ! সভার মধ্যে বিশেষতঃ বাজাদের সমক্ষে রুক্মিণী পূর্বে আমার পরিগৃহীত ছিলেন এইরূপ বলিতে তোমার লজ্জা হইল না কেন? (মহাভারতঃ সভাপর্ব, অধ্যায় ৪৪, শ্লোক ১৮)
" কৃষ্ণ! তুমি ভিন্ন অন্য কোন পুরুষ সভার মধ্যে নিজের স্ত্রীকে অন্যপূর্ব্বা জানিয়া তাহা কীর্ত্তন করিয়া থাকে। (মহাভারতঃ সভাপর্ব, অধ্যায় ৪৪, শ্লোক ১৯)
এখানে আমরা দেখতেই পাচ্ছি, একমাত্র দেবী রুক্মিণী যে একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী, তা শিশুপাল ও শ্রীকৃষ্ণের এই দুইজনের কথনে, শিশুপাল তা নিজেই স্বীকার করেছেন।
এছাড়াও মহাভারতের আরেকটা শ্লোক এ বলা আছে,
"শ্রীকৃষ্ণ নিজের পত্মি রুক্মিণীর সাথে হিমালয়ে ১২ বছরের মহান ঘোর ব্রহ্মচর্য ব্রত ধারন করে তপস্যা করেছিলেন। দুইজনে সনত্ কুমারের ন্যায় তেজস্বী পুত্র প্রদ্যুম্ন নামক পুত্র উৎপন্ন করেছিলেন।" (মহাভারতঃ সৌপ্তিক পর্ব, অধ্যায় ১২, শ্লোক ৩০-৩১)
এই শ্লোক থেকে আমরা দেখতেই পাচ্ছি, শ্রীকৃষ্ণের একমাত্র স্ত্রী ছিলেন রুক্মিণীদেবী, যিনি ছিলেন পরম ধার্মিক, বিদুষী ও পতিব্রতা। সন্তান জন্মদানের পূর্বে তাঁরা উভয়েই বদরিকাশ্রমে যান ও দীর্ঘ বারবছর কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করেন। এরপর রুক্মিণীদেবী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন যার নাম রাখা হয় প্রদ্যুম্ন।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমানিত যে, শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী বলতে ছিলেন একমাত্র স্বয়ং রুক্মিণীদেবী। ১৬,১০৮ টি মেয়ে ও রাধা নিয়ে যা গল্প রয়েছে, তা আজাগুরি অবাস্তব গল্প মাত্র। সেই হেতু রাধা কোন শ্রীকৃষ্ণের মামী নয়, এমনকি প্রেমলীলা তা কোনোদিন ঘটেও নি।
ॐ শ্রী পরমাত্মানে নমঃ
:সংগৃহীত
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏

Bikash sarker

সনাতনীরা দুর্বল নয়

#সততা_যদি_দূর্বলতা_হয়, তবে মনে রেখো অামরা দূর্বল।


✅হ্যাঁ সনাতনী ছেলেরা দূর্বল,
 কারন সনাতনীরা চাচী মামিকে মা মনে করে, যৌনদাসী না।

✅হ্যাঁ সনাতনী ছেলেরা দূর্বল কারন সনাতনীরা মনে করে একের অধিক বউ রাখা মানে নারীদের স্বামীর ভালবাসা ভাগ করা ।

✅হ্যাঁ সনাতনী ছেলেরা দূর্বল কারন, সনাতনীরা বৌমাকে মেয়ের মতই মনে করে, যৌনদাসী না।

✅হ্যাঁ সনাতনী ছেলেরা দূর্বল কারন,
সনাতনীরা কাকাতো, জেঠাতো বোনদের বিয়ে করতে জানে না। ইহা বৈদিক শাস্ত্রে নিষেধ।

✅হ্যাঁ সনাতনী ছেলেরা দূর্বল,
কারন সনাতনী ছেলেরা বৌদি/ভাবীকে দ্বিতীয় মা মনে করে, যৌনদাসী না।

✅হ্যাঁ সনাতনী ছেলেরা দূর্বল কারন, সনাতনী ছেলেরা মেয়েকে ধর্ষণ করতে জানে না।

✅হ্যাঁ সনাতনী ছেলেরা দূর্বল কারন,
সনাতনীদের শাস্ত্রে অাছে ইন্দ্রিয়গুলোকে দমন করতে পারলে যোগী হওয়া যায় অার সেই যোগই অাত্মাকে দিতে পারে মোক্ষের সন্ধান।

✅হ্যাঁ সনাতনী ছেলেরা দূর্বল,
কারন তারা কামকে সবসময় মনে ধারন করে না।
তাইতো কোনদিনও শুনলাম না কোন সনাতনী গরু, ছাগল, পশুকে ধর্ষণ করছে।

এদের সম্বন্ধে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ গীতায় যথার্থই বলেছেন,

🎇প্রবৃত্তিং চ নিবৃত্তিং চ জনা ন বিদুরাসুরাঃ৷
ন শৌচং নাপি চাচারো ন সত্যং তেষু বিদ্যতে৷।

অর্থ: অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা ধর্ম বিষয় প্রবৃত্ত হতে জানে না এবং অধর্ম বিষয় থেকেও নিবৃত্ত হতে জানে না। তাদের শৌচ নেই, সদাচার নেই এবং সত্যও নেই(১৬/৭)

🎇অসত্যমপ্রতিষ্ঠং তে জগদাহুরনীশ্বরম্৷
অপরস্পরসম্ভূতং কিমন্যত্কামহৈতুকম্৷।

অর্থ: অসুর স্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলে এই জগৎ মিথ্যা, অবলম্বনহীন এবং অবিনশ্বর। কামবশত স্ত্রীপুরুষের সংযোগেই এই জগত্ উৎপন্ন হয়েছে এবং কাম ছাড়া অন্য কোন কারণ নেই(১৬/৮)

🎇এতাং দৃষ্টিমবষ্টভ্য নষ্টাত্মানোল্পবুদ্ধয়ঃ৷
প্রভবন্ত্যুগ্রকর্মাণঃ ক্ষয়ায় জগতোহিতাঃ

অর্থ: এই প্রকার সিদ্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্তহীন অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন উগ্রকর্মা অসুরস্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জগত্ ধ্বংসকারী কার্যে নিয়োজিত থাকে(গীতা ১৬/৯)
sk roy

শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০

জাকির নায়েক ও রবিশঙ্করের তথাকথিত বিতর্কের মূল রহস্যটা আসলে কী ?

জাকির নায়েকের চাপাতি টিভি, চাপাতি টিভি এজন্যই বললাম যে, জাকিরের টিভির নাম তো পিস টিভি, আর পিস মানে শান্তি, কিন্তু মুসলমানরা শান্তি বলতেই তো বোঝে তরোয়াল-চাপাতির মাধ্যমে অর্জিত শান্তি, এজন্যই বললাম চাপাতি টিভি।

এখানে একটা প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসলাম মানে যদি শান্তি হয়, তাহলে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বললে, মুসলমানরা ক্ষেপে যায় কেনো বা চাপাতি দিয়ে কোপাতে চায় কেনো ? কেনো ওরা শান্তি পূর্ণ পদ্ধতিতে আলোচনায় বসে না ? মুসলমানদের রাগ আর সন্ত্রাস কি এটা প্রমান করে যে, ওদের ধর্মের নাম বা ধর্মের বিষয় শান্তি ?

যা হোক, ফিরে যাই মুল আলোচনায়। জাকিরের পিস টিভিতে, রবিশঙ্কর এবং জাকির নায়েকের একটি একটা অনুষ্ঠান খুব ঘটা করে প্রচার করা হতো, যাতে রবিশঙ্কর পরাজিত নয়, বিব্রত হয়। আর এটা নিয়ে মুসলমানরা এটা প্রচার করে বা প্রমান করার চেষ্টা করে যে, যেহেতু রবিশঙ্কর জাকির নায়েকের কাছে পরাজিত হয়েছে, সেহেতু হিন্দুধর্মের চেয়ে ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং হিন্দুদের উচিত, হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে ফেলা।

যেসব হিন্দু বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখে নি, তারাও এই সংশয়ে থাকে যে, সত্যিই মনে হয়, ইসলাম, হিন্দুধর্মের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, না হলে রবিশঙ্কর জাকির নায়েকের কাছে পরাজিত হলো কেনো ?

প্রত্যেকটি মুসলমানের আজীবনের একটি লালিত স্বপ্ন হলো- কোনো একজন অমুসলিমকে মুসলমান বানানো, তাহলে তারা নাকি বিনা বিচারে বেহেশতে যেতে পারবে। আর বেহেশতে গিয়ে তাদের একমাত্র কাজ হলো ৭২ হুর নিয়ে যৌনলীলায় মেতে থাকা, যদিও মেয়েদের জন্য এরকম কোনো ব্যবস্থা নেই এবং এই একটি কারণেই মুসলমানরা প্রাণপাত করে ইসলাম পালন করে, বোঝেন ইসলাম কত মহান ধর্ম!

যা হোক, জাকিরের এই পিস টিভি খোলার পেছনে উদ্দেশ্যও ছিলো এই এক, ইসলাম প্রচারের আড়ালে ধর্মান্তর করা; এখন যেহেতু ঘাড়ে তলোয়ার ধরে বলার যুগ নাই যে ইসলাম গ্রহণ কর, না হলে মৃত্যু; তাই মুসলমানরা বেছে নিয়েছে ব্রেইন ওয়াশ থিয়োরি, এতে বছরে যদি একজন করেও অমুসলিম ধোকায় প’ড়ে বিভ্রান্ত হ’য়ে, ইসলাম গ্রহন করে, তবুও তো ইসলামের লাভ।

জাকিরের কাজ যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশে এবং এখানকার বেশিরভাগ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তাই জাকিরের টার্গেট হলো হিন্দুরা এবং হিন্দুদের ব্রেইন ওয়াশের জন্য তার থিয়োরি হলো- কল্কি অবতারই মুহম্মদ, বেদ পুরানে আল্লা মুহম্মদের নাম আছে, রবিশঙ্করের ডিবেট, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

“কল্কি অবতার ই মুহম্মদ” এবং “বেদ পুরানে আল্লা মুহম্মদ” বিষয়ে আমার আলাদা দুটি পোস্ট আছে, তাই আজকে শুধু রবিশঙ্করের ডিবেট নিয়েই কথা বলবো।

ভারত এবং ভারতের বাইরে শত শত মানুষ জাকিরকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে, তাদের সাথে তর্ক বির্তকে বসার জন্য, জাকির তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে নি। কিন্তু কেনো ? তার ভয় কিসের ?
আমি যদি সত্য হই, পৃথিবীর সকল জায়গাতেই আমি নিজেকে সত্য বলে প্রমান করতে পারবো; তাহলে সকলের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে আমার অসুবিধা কোথায় ? আমি তো আমার অনেক পোস্টে খোলা খুলি এই চ্যালেঞ্জ দিই যে, আমার পোস্টের জবাব কেউ যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে দিতে পারে আমি ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যাবো, কেউ তো আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে না। আমি এই চ্যালেঞ্জ দিতে পারি, কারণ, আমি জানি সত্যটা কী এবং তা কোথায় ? তাহলে জাকির, সকলের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে না কেনো ?

অনেকে আমাকে জাকিরের সাথে ডিবেটে যেতে বলে, কিন্তু মুসলমানরা যেহেতু হিংস্র জাতি এবং যেহেতু তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি বোঝে না বা তা মেনে নিতে পারে না বা শুনতেই চায় না, তাই মুসলমানদের সাথে তর্কে জেতা অসম্ভব; যদিও বা আপনি কাউকে তর্কে পরাজিত করেন, সে সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে, নবীর নামে কটূক্তি করেছে ব’লে আপনার উপর চাপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে বা দল বল নিয়ে এসে আপনার বাড়িতে হামলা করবে বা বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে বা গ্রাম জ্বালিয়ে দেবে। ফলে শেষ পর্যন্ত জয় হবে মুসলমানদেরই। তাই মুসলমানদের সাথে ফেস টু ফেস বিতর্কে যাওয়া অসম্ভব; কারণ, আপনি যত বড়ই জ্ঞানী বা শক্তিশালী হোন না কেনো, আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, একজন মূর্খ মুসলমানের একটি চাপাতির কাছে আপনি অসহায়, যেটা আমি সব সময় মাথায় রাখি।

উপরের এই পদ্ধতির জন্য, ইন্টারনেট আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত মুসলমানদের প্রচার ছিলো একতরফা; কারণ, তারা যা বলেছে, তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার কোনো উপায় ছিলো না। শেষ পর্যন্ত ইন্টারনেট এবং ফেসবুক, সেই দুঃসহ অবস্থা থেকে পৃথিবীর মানুষকে মুক্তি দিয়েছে। মুসলমানরা মাঝে মাঝেই ইসলামের বিরুদ্ধে ইহুদি নাসারাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলে, যদি ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের কোনো ষড়যন্ত্র থেকেই থাকে, তা হলো এই ইন্টারনেট এবং ফেসবুক আবিষ্কার এবং আমার হিসেবে এটাই হলো ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় যড়যন্ত্র; যার মজা এখন মুসলমানরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

আমি এত ইসলামের বিরুদ্ধে লিখি এবং মুসলমানদের চ্যালেঞ্জ দিই সেগুলোর জবাব দিয়ে আমাকে মুসলমান বানানোর জন্য, কিন্তু এখন পর্যন্ত এক হারামজাদাও আমাকে মুসলমান বানানোর জন্য জবাব দিতে এগিয়ে এলো না, যোগ্য জবাবের পরিবর্তে তারা যা দেয় তা হলো ইনবক্সে বা কমেন্টে গালি গালাজ; যেগুলোকে আমি রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের ঘেউ ঘেউ বলেই মনে করি এবং যেগুলোকে আমি আমার বাল দিয়েও গুরুত্ব দিই না।

যা হোক, ইউটিউবে একটি ভিডিও পাওয়া যায়, ৫ মিনিটে ২৫ মিথ্যা নামে, এতে জাকির নায়েকের একটি ৫ মিনিটের বক্তব্যে, সে যে ২৫ টি মিথ্যে তত্ত্ব দিয়েছে, সেই পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। এরা জাকির নায়েককে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলো, তাদের সাথে বিতর্ক করার জন্য, কিন্তু জাকির তা গ্রহণ না করায়, তারা ওর ঐ বক্তব্যের পোস্টমর্টেম করে ইউটিউবে ছাড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জাকিরের এত চ্যালেঞ্জকারী থাকতে সবাইকে বাদ দিয়ে জাকির তার টিভিতে রবিশঙ্করক নিয়ে এলো কেনো ? রবিশঙ্কর যে জাকিরকে কোনো দিন চ্যালেঞ্জ করেছিলো, এমন কি কেউ কোনোদিন শুনেছেন ? শুনেন নি। তাহলে পিসটিভিতে রবিশঙ্কর কেনো ?

বাংলাদেশে অনেক ব্যক্তিমালিকানাধীন টিভি চ্যানেল আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত মালিক হচ্ছে, এটিএন বাংলার মালিক মাহফুজুর রহমান। অন্য চ্যানেলগুলোর মালিক কে বা কারা এটা দেশের ৯৫% মানুষ না জানলেও, দেশের ৯৫% মানুষ, যারা নিয়মিত টিভি দেখে, তারা জানে যে, এটিএন বাংলার মালিক মাহফুজুর রহমান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই মাহফুজুর রহমান, তার চ্যানেলে কি এমন কোনো অনুষ্ঠান দেখাবে, যাতে তার ইমেজ খারাপ হয় ? আপনাদের কমনসেন্স কী বলে, দেখাবে ? দেখাবে না ? তাহলে জাকির নায়েক, তার নিজস্ব টিভি চ্যানেলে এমন কোনো প্রোগ্রাম কেনো দেখাবে, যাতে সে কারো কাছ পরাজিত হয় ?

তাছাড়া পিস টিভিতে বিতর্কমূলক কোনো অনুষ্ঠান কিন্তু লাইভ দেখানো হয় না; তার মানে, এডিট করে, কেটে ছেঁটে সে সব অনুষ্ঠানই দেখানো হয়, যাতে জাকির নায়েকের মান বজায় থাকে এবং সে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ই দেখানো হয়, যাতে জাকিরের জবাব যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। পিস টিভিতে রবিশঙ্করের অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছে এজন্যই যে, সেই অনুষ্ঠানে রবিশঙ্কর আপাতদৃষ্টিতে পরাজিত হয়েছে, যদি জাকির নায়েক পরাজিত হতো, তাহলে সেটা কি তারা দেখিয়ে ইসলামের বারোটা বাজাতো ? এই ব্যাপারটি পরিষ্কারভাবে বোঝে না বলেই অনেক হিন্দু রবিশঙ্করের ব্যাপারটি নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে এবং তাদের মনে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে সন্দেহের সৃষ্টি হয়, হিন্দুদের মনে যে সন্দেহটি সৃষ্টি করা শুধু জাকির নায়েক কেনো, সব মুসলমানদের মরণপণ জিহাদী উদ্দেশ্য।
তাছাড়া, কে এই রবিশঙ্কর ? সে কি হিন্দুদের মনোনীত কোনো ব্যক্তি, যাকে হিন্দুরা জাকিরের সাথে ডিবেট করতে পাঠিয়েছে ? দেখে নিন উইকিপিডিয়াতে তার সম্পর্কে কী বলা হয়েছে ?

“রবি শঙ্কর, যিনি সাধারণত শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর নামে পরিচিত, হলেন ভারতের একজন আধ্যাত্মিক নেতা যিনি ১৩ মে ১৯৫৬ সালে তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে শ্রী শ্রী উপাধিতে বা গুরুদেব বা গুরুজি নামেও ডাকা হয়। ১৯৮১ সালে তিনি আর্ট অব লিভিং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যার মূল লক্ষ্য হল মানুষের ব্যক্তিগত মনোদৈহিক চাপ, সামাজিক সমস্যা এবং সহিংসতা দূর করা।“

এছাড়াও Art of living পৃথিবীর বৃহত্তম একটি "হিউমেনিটারিয়ান & এডুকেশনাল এনজিও" এর প্রতিষ্ঠাতা রবিশঙ্কর একজন যোগ বিশেষজ্ঞ এবং পতঞ্জলি যোগসূত্র দ্বারা উদ্বুদ্ধ একজন দার্শনিক নেতা। বজ্রাসন ও সুখাসন এর মাধ্যমে কৃত সূদর্শন ক্রিয়া এর একজন অনন্য পরিচালক তিনি যার মাধ্যমে তিনি পৃথিবীতে বিদ্যমান হানাহানি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় এর অবসান ঘটাতে চান। তিনি কখনোই একজন হিন্দুধর্ম বিশারদ নন এবং একজন বেদজ্ঞানী তো নন বটেই!

যার উদ্দেশ্যই হলো পৃথিবীর হানাহানি বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, সে যাবে জাকিরের সাথে তর্ক বিতর্ক করতে! যেখানে তর্ক বিতর্কই হলো সকল অশান্তির মূল ? এছাড়াও এই তথ্যগুলো থেকে কি এটা প্রমান হচ্ছে যে, তিনি হিন্দুদের কোনো ধর্মগুরু ? তাহলে তার জয় বা পরাজয় নিয়ে হিন্দুদের এত মনোব্যথার কী আছে ?

এবার দেখুন, কোন প্রেক্ষাপটে জাকিরের পিস টিভি সেই ভিডিওটি তৈরি করেছিলো ?
রবিশঙ্কর যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলো, সেটা ছিলো "Concept of GOD in Hinduism & Islam" শীর্ষক একটি আলোচনা সভা, এটা মোটেই পূর্ব ঘোষিত কোনো বিতর্ক সভা নয়। রবিশঙ্কর সেখানে গিয়েছিলেন নিজে থেকেই কোনো হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন বা হিন্দুদের পক্ষ থেকে নয়। কিন্তু ধূর্ত জাকির পুর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী সেখানে কাদিয়ানী লেখক মাওলানা আব্দুল্লা হক বিদ্যার্থীর বই থেকে হুবহু তোতা পাখির মতো কিছু মুখস্ত উদ্ধৃতি দেয় যে পবিত্র বেদ এ মোহাম্মদ এর কথা বলা আছে এবং ভবিষ্য পুরানেও মোহাম্মদ এর কথা বলা আছে। একজন ব্যক্তি যিনি কোনো বিতর্কের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান নি বা তার সেই বিষয় নিয়ে বিতর্ক করার ইচ্ছা আছে কিনা সেটাও সন্দেহ, তাকে হঠাৎ করে বেদের খুঁটি নাটি বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে বিব্রত হবে না তো কী হবে ?

ধান্ধাবাজ জাকিরের এই ভিডিও নিয়ে মুসলমানরা জোর গলায় বলে,

“জাকির নায়েক তো হিন্দুদের গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর এর সাথে বিতর্ক করেছে এবং জয়লাভ করেছে। রবিশঙ্কর তো আপনাদের চেয়ে বেশী জানেন। উনি যখন জাকির নায়েকের ভূল দেখাতে পারেনি তো আপনারা কে ?”

জাকির নায়েক, রবিশঙ্করের সাথে কী ধরণের তর্ক বিতর্ক করেছে এবং কোন সিচুয়েশনে করেছে, আশা করছি, উপরের বর্ণণায় তা বুঝতে পেরেছেন, তাই এটা নিয়ে আর বলার কিছু নেই।

এরপর মুসলমানদের তথ্য হলো-

“রবিশঙ্কর তো আপনাদের চেয়ে বেশি জানেন।”

রবিশঙ্কর কতটা জানে, সেটা আপনারা সার্টিফিকেট দিচ্ছেন কেনো ? আপনাদের কী মনে হয়, আমি ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে কম জানি ? আপনারা আমার কথার জবাব গালিগালাজ ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় দেন না কেনো ? ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে কলম ধরেন।

মুসলমানদের আরো প্রশ্ন হলো, রবিশঙ্কর যখন জাকির নায়েকের ভূল দেখাতে পারেনি তো আপনারা কে ?”

রবিশঙ্কর কি জাকির নায়েকের ভুল ধরে তার সা্থে ঝাগড়া করতে গিয়েছিলো যে রবিশঙ্কর জাকির নায়েকের ভুল ধরবে ?

এছাড়াও মুসলমানদের প্রশ্ন হলো- “জাকির যদি ভুলই হয় তবে হিন্দুধর্মীয় নেতারা তাকে ধরিয়ে দিচ্ছে না কেন ?”

পিস টিভি যখন রবিশঙ্করের এই ভিডিও প্রচার করে, তখন সবাই বুঝতে পারে যে, শান্তিবাদী রবিশঙ্করকে জাকির ফাঁসিয়েছে। এরপর বেদ নিয়ে প্রকৃত বিতর্কের জন্য বিখ্যাত বৈদিক সংগঠন আর্যসমাজ এর পক্ষ থেকে পর পর তিন বার অফিসিয়ালি ইমেইল এর মাধ্যমে IRF এর জাকির নায়েককে বিতর্কের জন্য আহবান জানানো হয়। কিন্তু ভীত ও ধূর্ত নায়েক জানেন যে বিখ্যাত বেদ গবেষনা সংগঠন আর্যসমাজের পন্ডিতগন, যাদের বেদ এর প্রতিটি অক্ষর পর্যন্ত মুখস্থ, তাঁদের সামনে বেদ নিয়ে অপপ্রচার চালানো সম্ভব হবে না, তাই সে কোনো সারা দেয় নি। শেষ পর্যন্ত চতুর্থবার বিতর্কের চ্যলেঞ্জ জানানোর পর IRF এর পক্ষ থেকে মাওলানা আব্দুল্লাহ তারিক কে পাঠানো হয় বিতর্কে অংশগ্রহনের জন্য। তখন আর্য সমাজের পন্ডিত মাহেন্দ্র পাল আর্য, যিনি নিজেও ৩০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত হন, আব্দুল্লাহ তারিককে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। কিন্তু এই বিতর্কটি কি জাকির তার পিস টিভিতে দেখিয়েছ ?
এছাড়াও কথা হল IRF এর অনুষ্ঠানসমূহে জাকির যখন হিন্দুধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন দাবী করেন তখন সেখানে কোন হিন্দুশাস্ত্রবিশারদদের আমন্ত্রন জানানো হয়না কেন ? ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে মুসলমানরা তো সব সময় ফাঁকা মাঠেই গোল দিতে অভ্যস্থ, জাকির সেখান থেকে বের হবে কিভাবে ? জাকিরের যদি সেই সৎসাহস থাকতো বা তার ইসলাম নিয়ে এত আত্মবিশ্বাস থাকতো, তাহলে তার, সকলের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার মতো সৎ সাহস থাকতো।

জাকিরের আরেকটি ভন্ডামীর কথা জেনে রাখেন, তার অনুষ্ঠানে, যে সব লোক ধর্মান্তরিত হতো, সেগুলো সবই ছিলো সাজানো নাটক। জাকিরের পিস টিভি বন্ধ হওয়ার পর তার ব্যক্তিগত ড্রাইভারের কাছ থেকে জানা গেছে এই তথ্য।

শেষের দিকে এসে আরেকটি তথ্য আলোচনা না করেই পারছি না- জাকির, রবিশঙ্করকে যে অনুষ্ঠানে হাজির করেছিলো, তার নাম দিয়েছিলো, "Concept of GOD in Hinduism & Islam"। এখানে খেয়াল করবেন, হিন্দুধর্ম বোঝাতে Hinduism শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যে সব হিন্দুর “ism” শব্দের মানে জানা নেই, তারা হয়তো বলবেন যে, কেনো এখানে সমস্যাটা কী ? কিন্তু এর মানে বোঝার পর জানতে পারবেন যে, আসলে এর পেছনের গভীর ষড়যন্ত্রটা কী এবং কোথায় ?

‘ইজম’ মানে হলো ব্যক্তিগত মতবাদ, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো মতবাদ দেয়, সেই মতবাদ বোঝাতে তার নামের শেষে ইজম ব্যবহার করা হয়, যেমন কার্ল মার্ক্স এর মতবাদের নাম মার্ক্সিজম= মার্ক্স+ইজম। কিন্তু হিন্দু ধর্ম কি কোনো একজনের ব্যক্তিগত মতবাদ, যে জাকির হিন্দু শব্দের সাথে ইজম লাগিয়েছে ? আর হিন্দু কি কোনো একজন ব্যক্তির নাম যে, এর সাথে ইজম যুক্ত হবে ? এই হিন্দুইজম শব্দটি শুধু প্রয়োগের দিক থেকেই ভুল নয়, গঠনের দিক থেকেও ভুল। কিন্তু এখানে জাকিরের উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু ধর্মের বিশালত্বকে ইজম শব্দের মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে নিয়ে আসা, ষড়যন্ত্রটা এখানেই। হিন্দুধর্ম বোঝাতে হিন্দু শব্দের সাথে কখনো ইজম শব্দ যুক্ত হবে না; কারণ, হিন্দুধর্ম কোনো একজন ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার ফল নয়, যেমন একজন ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার ফল হলো- ইসলাম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ সকল ব্যক্তিগত ধর্ম, যদিও এগুলোকে এখন ধর্ম বলে চালানো হচ্ছে, আসলে এগুলো ধর্ম নয়, এগুলো এক একটি ব্যক্তিগত মতবাদ।

প্রকৃতির সৃষ্টি যে কোনো কিছুর ধর্ম থাকে, যেমন- ধর্ম আছে আগুন, জল বা লোহার। মানুষ এগুলোর ধর্ম বানাতেও পারে না আবার তার পরিবর্তনও করতে পারে না। ধর্ম বানানো তাই প্রকৃতি নামক ঈশ্বরের কাজ, কোনো মানুষের কাজ নয়। এই সূত্রে প্রকৃতির বিধিবদ্ধ নিয়মের নির্যাস হিসেবে পৃথিবীর মানুষের জন্য একমাত্র ধর্ম হলো সনাতন মানবধর্ম, আর বাকিগুলো কোনো ধর্ম নয়, ওগুলো ব্যক্তিগত মতবাদ।

যা হোক, জাকির ও রবিশঙ্কর প্রসঙ্গে শেষ কথা হলো- জাকিরের সাথে রবিশঙ্করের বিতর্ক বলে যা প্রচার করা হয়, সেটা যে আসলে বিতর্ক নয়, ধান্ধাবাজ জাকির কোম্পানির কৌশলে তোলা আলোচনা চক্রের একটি ভিডিও মাত্র, যাতে অপ্রস্তুত অবস্থায় রবিশঙ্করকে বেদ থেকে কিছু প্রশ্ন করে বিব্রত করা হয়েছে এবং রবিশঙ্কর হিন্দুদের যে কোনো ধর্মগুরুও নয়, বাবা রামদেব এর মতো একজন যোগসাধক মাত্র, তাই জাকিরের সাথে রবিশঙ্করের তথাকথিত পরাজিত হওয়া, আসলে যা পরাজিত হওয়া নয়- আশা করছি সেই সম্পর্কে আমার বন্ধুদের কাছে প্রকৃত সত্যটা উদঘাটন করতে পেরেছি।

জয় হিন্দ।
জয় হোক সনাতনের।।
 from Jorder Boney