এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বুধবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২১

শবদাহ নিয়ে মিথ্যাচার

 শব দাহের সময় কি হিন্দুরা আল্লা এবং মুহম্মদের নাম নেয় ?

বাংলাদেশের এক নোয়াখাল্যা হুজুর মানে মুসলমান, সামনে বসা একদল গাধার সামনে মাইকে বলেছে হিন্দুরা শবদাহের সময় যে মন্ত্র বলে সেটি হলো-

অহিংস পদম বৈষ্ণং লাইলং ব্রমত্তম ব্রম্ম লাইলাং
বৈষ্ণ সদাসত্য বিষ্ণং বিষ্ণং ব্রম্ম বিষ্ণং মুহম্মদং
লাইলাং লাইলাং আল্লা ব্রম্মানং বৈষ্ণং তাপসং বিনাবতি
সতং তাপস্য বৈশ্য আল্লাহা ব্রম্ম তাপস্য বিষ্ণু

এই সব বলে হিন্দুরা নাকি শবদেহকে মুহম্মদের নামে আল্লার কাছে ন্যস্ত করে!

এই মিথ্যাচারের জবাব একটা তথ্যেই দেওয়া যায়, সেটা হলো- পৃথিবীতে মুহম্মদ এবং আল্লার জন্মের অন্তত ১০ হাজার বছর আগে থেকে সনাতনী হিন্দুরা শবকে দাহ করে আসছে, তাহলে সেই সময় তারা কোন মন্ত্র বলে মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতো ?

যারা ইসলাম নামক মহামিথ্যার ধারক বাহক এবং প্রচারক, তাদের মিথ্যাচারের কোনো সীমা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক, এটা নিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমাদেরকে শুধু প্রকৃত সত্যটা জানতে হবে এবং সবাইকে তা জানাতে হবে, তাহলেই কোনো হিন্দু, মুসলমানদের মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত হবে না এবং মুসলমানদের কথায় বিশ্বাস করে নিজের সর্বনাশ করবে না।

যা হোক, নিচে দেখে নিন- পুরোহিত দর্পণের ভিত্তিতে, শবদাহের সময় আসলেই কোন কোন মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় এবং সেগুলোর মধ্যে আল্লা, মুহম্মদ জাতীয় কোনো হারামজাদার নাম আছে কি না ?

শবদেহকে স্নান করানোর সময় যে মন্ত্র বলতে হয়, সেটা হলো-

"ওঁ গয়দীনি চ তীর্থানি যে চ পুন্যাঃ শিলোচ্চয়াঃ।
কুরুক্ষেত্রঞ্চ গঙ্গাঞ্চ যমুনাঞ্চ সরিদ্বরাম।
কৌশিকীং চন্দ্রভাগাঞ্চ সর্ব্বপাপপ্রণাশিনীম্।।
ভদ্রাবকাশাং সরযুং পনসং গণ্ডকীং তথা।
বৈনবঞ্চ বরাহঞ্চ তীর্থং পিণ্ডারকং তথা।।
পৃথিব্যাং যানি তীর্থানি সরিতঃ সাগরস্তথা।
ধাত্বা তু মনসা সর্ব্বে কৃতস্নানং গতায়ুষং।।"

এরপর পিণ্ডদানের সময় উচ্চারিত মন্ত্র হলো-

"ওঁ অপহতাসুরা রক্ষাংসি বেদিষদঃ।"

তারপর প্রেতকে আহ্বানের মন্ত্র হলো-

"ওঁ এহি প্রেত সোম্য গম্ভীরেভিঃ পথিভিঃ পূর্ব্বিণেভিঃ।
দেহ্যস্মভং দ্রবিণেহ ভদ্রং রয়িঞ্চ নঃ সর্ব্ববীরং নিযচ্ছ।।"

এবং

"অমুকগোত্র প্রেত অমুকদেবশর্ম্মন্নবর্নেনিক্ষ্ব।"

এবং

অমুকগোত্র প্রেত অমুকদেবশর্ম্মন্নেতত্তেহমুপতিষ্ঠতাম্ ।।

এরপর চিতার উপর শবদেহ স্থাপন করার সময়ের মন্ত্র হলো-

"ওঁ দেবাশ্চাগ্নিমুখা এনং দহন্তু।"

এবং শেষে দাহধিকারী, অগ্নি হাতে নিয়ে চিতা প্রদক্ষিণ করতে করতে যে মন্ত্রটি পাঠ করে, সেটি হলো-

“ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্যজানতা ।
মৃত্যুকালবশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগমত্।।
ধর্ম্মাধর্ম্মসমাযুক্তং লোভমোহসমাবৃতম্
দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু।।”

অনুবাদঃ তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ- ধর্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্রভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার দেহের সকল অংশ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান।

শেষে বলবো, আমার এই প্রবন্ধের সাথে এই মিথ্যুক মুসলমানের ওয়াজের যে লিঙ্কটি আমি শেয়ার করেছি, সেখানে দেখুন তার হাজার লাইক এবং শেয়ার, তার মানে মুসলমানরা তার কথা বিশ্বাস করেছে এবং মৃত হিন্দুদেরকে মুহম্মদের নামে আল্লার কাছে ন্যস্ত করা হয়, এটা শুনে তারা ব্যাপক খুশি হয়েছে; এর জবাব আমি লিখে দিলাম, এখন এটাকে ব্যাপকভাবে শেয়ার করে এইসব মুসলমানদের মুখে শুয়োরের গু ভরে দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।

জয় হিন্দ।

https://web.facebook.com/260154374846842/posts/735581100637498/?_rdc=1&_rdr

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২১

সনাতন ধর্ম নিয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব।

 Md Rashidul এর সনাতন ধর্ম নিয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব।


#Repost from Arya sudipto kumer

রাশেদুলের দাবী-
১/পবিত্র বেদে সনাতন শব্দ নেই।
২/সনাতনে শাখা, সিঁদুরের স্বীকৃতি নেই।
৩/সনাতনে ঢাক ঢোল স্বীকৃত নয়।
৪/পবিত্র বেদে লক্ষী,সরস্বতীসহ কোন দেবদেবীর নাম স্বীকৃত নয়।

অথর্ববেদে 10/8/22 এ সনাতন শব্দটি আছে-

★Bhogyo bhavadatho annamadad bahu.
Yo devamuttaråvantamupåsåtai sanåtanam.

>Whoever worships and meditates on Eternal
Brahma, highest object of worship, would receive
unbounded food of life and joy, and indeed Brahma itself
would reveal its presence as food for his joyous
experience in meditation.�

অথর্ববেদ 10/8/23 এও সনাতন শব্দটি আছে-

★Sanåtanamenamåhurutådya syåtpunarƒava¨.
Ahoråtre pra jåyete anyo anyasya rμupayo¨�

>They say this Brahma is Sanatana, Eternal,
beyond time and age, and yet it arises ever anew in time
and presence, as the day and night arise anew and follow
each other in relation to the form and time of the
occasion.�

অথর্ববেদ 18/3/1 এ ও সনাতন নাম আছে। 
★ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।
.
★ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।
.
পদার্থ:---- মর্ত্য-হে মনুষ্য, ইয়ং নারী-এই স্ত্রী, পতিলোকম-পতিলোককে অর্থাত্ বৈবাহিক অবস্থাকে, বৃণনা-কামনা করিয়া, প্রেতম-মৃত পতির, অনু-পরে, উপ ত্বা-তোমার নিকট, নিপদ্যতে-আসিতেছে, পুরাণম-সনাতন, ধর্ম্মম-ধর্মকে, পালয়ন্তী-পালন করিয়া, তস্য-তাহার জন্য, ইহ-এই লোকে,
প্রজাম্-সন্তানকে, দ্রবিণং-এবং ধনকে, ধেহি-ধারন করাও।
.
★বঙ্গানুবাদঃ---হে মনুষ্য!এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে।সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।
,মনুস্মৃতিতে সনাতন নাম আছে।
★সত্যং ব্রুয়াৎ প্রিয়ং ব্রুয়ান্নব্রুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম্।
.
★প্রিয়ং চ নানৃতং ব্রুয়াদেষ ধর্ম্মঃ সনাতনঃ।।
.
অনুবাদ--: অপরের হিতকর প্রিয় সত্য কথা বলিবে, অপ্রিয় সত্য কথা কখনো বলিবেনা যাহা লোকের মর্মভেদ করে, অপরকে প্রসন্ন করার সহিতে মিথ্যা বলিবে না, ইহাই বেদবিহিত সনাতন ধর্ম।
(4/138)
শ্রীগীতাতে সনাতন আছে।
আর না ই দিলাম যেহেতু বেদ থেকে উত্তর চেয়েছেন তা দেয়া হয়েছে । এছাড়া মনুস্মৃতি 9/54 এ ও বেদবিহিত সনাতন ধর্মের কথা আছে।
■ কোনো ধর্মগ্রন্থে কি শাঁখা সিঁদুরের কথা আছে??
আদি পিতা মনু কর্তৃক আইনে অলঙ্কার বেশভূষণের ব্যবহারের কথা পাওয়া যায়।
অলঙ্কার বলতে শাঁখা সিঁদুর,সোনা রুপা গহনার ব্যবহার ,,দেখি কি বলেছেন আমাদের আদি পিতা !
পিতৃভির্ভ্রাতৃভিশ্চৈতাঃ পতিভির্দেবরৈস্তথা ।
পুজ্যা ভূষয়িতব্যাশ্চ বহুকল্যাণমীপ্সুভিঃ ।।
অনুবাদঃ-- বিবাহের সময়ে বরই কন্যাকেব ধন দেবেন এমন নয়। বিবাহোত্তর কালেও পিতা, ভ্রাতা, পতি, দেবর, এরা সকলেই যদি অতুল কল্যাণরাশির অভিলাষী হয়, তাহলে ঐ কন্যাদের ভোজনাদির দ্বারা পুজা করবে ও বস্ত্র- অলঙ্কারাদির দ্বারা ভূষিত করবে । (মনুস্মৃতি :--৩/৫৫, )
এখানে অলঙ্কারের ব্যবহারের কথা পাওয়া যায় । 
আরও দেখি কি বলেছেন অলঙ্কার ভূষণ নিয়ে ,,
যত্র নার্য্যস্তু পুজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ ।
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ।।
অনুবাদ:-- যে বংশে স্ত্রীলোকেরা বস্ত্রালাঙ্কারাদির দ্বারা পুজা বা সমাদর প্রাপ্ত হয়, সেখানে দেবতারা প্রসন্ন থাকেন, আর যে বংশে স্ত্রীলোকদের সমাদর নেইন, সেখানে ( যাগ ,হোম, দেবতার আরাধনা প্রভৃতি ) সমস্ত ক্রিয়াই নিষ্ফল হয়ে যায় । (মনুস্মৃতি:--৩/৫৬)
এখন বুঝেন সনাতন নারীরা কেন অলঙ্কার পরিধান করে ,, শাঁখা সিধুর পরে ,, 
তারপরের রেফারেন্স হলো ,,
তস্মাদেতাঃ সদা পূজ্যা ভূষণাচ্ছাদনাশনৈঃ ।
ভূতিকামৈর্নরের্নিত্যং সৎকারেষুৎসবেষু চ । ।
অনুবাদ:-- অতএব যারা ভৃতি অর্থাৎ ঐশ্বর্য বা সম্পদ কামনা করে, এই রকম পতিসম্বন্ধীয় লোকেরা বিভিন্ন সৎকার্যের অনুষ্ঠানে এবং নানা উৎসবে অলঙ্কার, বস্ত্র ও ভোজনাদির দ্বারা নিত্য স্ত্রী- লোকদের সন্তুষ্টির বিধান করবে ।( মনুস্মৃতি :-৩/৫৯)

■ কোনো গ্রন্থে কি ঢাক ঢোল আদি বাদ্যের উল্লেখ আছে??
সামবেদে গানের কথা পাওয়া যায় মন্ত্রঃ
পান্তমা বো অন্ধস ইন্দ্রমভি প্র গায়ত। বিশ্বাসাহং শতক্রতুং মংহিষ্ঠং চর্ষণীনাম্‌।।১।
প্র ব ইন্দ্রায় মাদনং হর্যশ্বায় গায়ত। সখায়ঃ সোমপাব্‌নে।।২।।
অনুবাদঃ
তোমাদের মঙ্গলের জন্য ইন্দ্রের উদ্দেশে পানযোগ্য সোমরস নিবেদন করে’ গান কর; তিনি বিশ্বজিৎ, শতকর্মা, মানুষের শ্রেষ্ঠদাতা।।১
হে সখাগণ, হরিতবর্ণ রশ্মিযুক্ত (=হর্ষশ্ব); সোমপায়ী (=জলরাশির পালক), ইন্দ্রের উদ্দেশে আনন্দজনক গান গাও।।২ 
(সামবেদ ২/৫)
এখন না বুঝার কিছু নেই, আশা করি উত্তর পেয়েছেন ,, ।
আর ঢাকঢোলের ব্যবহার যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহার হতো ,, সেই সুবাদে পরিবর্তণ হয়ে সনাতন ধর্মের পূজা পালিতে ব্যবহার্য হয়ে উঠে ,, ঢাক ঢোল শ্রীগীতাতে ব্যবহার করার উল্লেখ পাওয়া যায় । যেহেতু শ্রীগীতা সনাতন ধর্মের তাহলে ঢাক ঢোল সনাতন ধর্মের ব্যহার্য । তাহলে দেখি রেফারেন্স গুলো ,,
তস্য সঞ্জনয়ন্‌ হর্ষ্‌ম্ কুরু-বৃদ্ধঃ পিতামহঃ ।
সিংহ নাদম্‌ বিনদ্য উচ্চৈঃ শঙ্খম্‌ দধ্‌মৌ প্রতাপবান ।১২।
অর্থ- তখন কুরু বংশের বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম দুর্য্যধনের হর্ষ উত্পাদনের জন্য সিংহের গর্জ্জনের মত অতি উচ্চনাদে তার শঙ্খ বাজালেন।
ততঃ শঙ্খাঃ চ ভের্যঃ চ পনবআনক গোমুখাঃ ।
সহসা এব অভ্যহন্যন্ত সঃ শব্দঃ তুমুলঃ অভবত্ ।১৩।

অর্থ- তারপর শঙ্খ ভেরী পনক আনক ঢাক এবং গোমুখ সিংঙ্গা সমুহ হঠাত্ একত্রে ধনিত হয়ে এক তুমুল শব্দের সৃষ্টি হল।
ততঃ শ্বেতৈঃ হয়ৈঃ যুক্তে মহতি স্যন্দনে স্থিতৌ ।
মাধবঃ পান্ডবঃ চ এব দিব্যৌ শঙ্খৌ প্রদধ্‌মতুঃ ।১৪।
অর্থ- অন্যদিকে শ্বেত অশ্বসমুহ যুক্ত একদিব্য রথে স্থিত শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন উভয়ে তাদের দিব্য শঙ্খ বাজালেন।
পাঞ্চজন্যম্‌ হৃষীক-ঈশঃ দেবদত্তম্‌ ধনঞ্জয়ঃ ।।
পৌন্ড্রম্‌ দধ্‌মৌ মহাশঙ্খম্‌ ভীমকর্মা বৃক-উদর ।১৫।
অর্থ- তখন শ্রীকৃষ্ণের পাঞ্চজন্য নামক তার শঙ্খ বাজালেন।এবং অর্জুন বাজালেন তার দেবদত্তক নামক শঙ্খ এবং বিপুল ভোজন পৃয় ভীমকর্মা সেন বাজালেন পৌন্ড্র নামক তার ভয়ঙ্কর শঙ্খ।
অনন্ত বিজয়ম্‌ রাজা কুন্তীপুত্রঃ যুধিষ্ঠিরঃ ।
নকুলঃ সহদেবঃ চ সুঘোষ-মনিপুস্পকৌ ।১৬।
কাশ্যঃ চ পরম-ইষু-আসঃ শিখন্ডী চ মহারথঃ ।
ধৃষ্টদ্যুম্নঃ বিরাটঃ চ সাত্যকি চ অপরাজিতঃ ।১৭।
দ্রুপদঃ দ্রৌপদেয়াঃ চ সর্বশঃ পৃথিবী পতে ।
সৌভদ্রঃ চ মহা বাহু শঙ্খান দধ্‌মুঃ পৃথক্‌ পৃথ্‌ক ।১৮।
অর্থ- কুন্তীপুত্র মহারাজ যুধিষ্ঠির অনন্ত বিজয় নামক শঙ্খ বাজালেন, এবং নকুল এবং সহদেব বাজালেন সুঘোষ এবং মনিপুস্পক নামক শঙ্খ। হে মহারাজ তখন মহান ধনুর্ধর কাশিরাজ, প্রবল যোদ্ধা শিখন্ডি,ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট এবং অপরাজিত সাত্যকি, দ্রুপদ দ্রৌপদীর পুত্রগন, সুভদ্রার মহা বলবান পুত্র এবং অন্য সকলে তাদের নিজ নিজ পৃথক শঙ্খ বাজালেন।
সঃ ঘোষঃ ধার্তরাষ্ট্রাণাম্‌ হৃদয়ানি ব্যদারয়াত্ ।
নভঃ চ পৃথিবীম্‌ চ এব তুমুলঃ অভ্যনুনাদয়ন ।১৯
(শ্রীমদভগবদগীতার ১ম অধ্যায়)
■ গীতায় কি অন্য দেবদেবীর পূজার অনুমতি আছে??
শ্রীমদভগবদগীতা বরাবর ই দেবদেবীর পূজার অনুমতি দেয়।
গীতাতে অন্য দেবদেবীর উপাসনাঃ
যো যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি৷
তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্৷৷
গীতা 7/21
সরলার্থ: পরমাত্মারুপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখন কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে আমি তাদের শ্রদ্ধানুসারে সেই সেই দেবতাদের প্রতি ভক্তি বিধান করি।
স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে৷
লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্৷৷
গীতা 7/22
সরলার্থ: সেই ভক্ত শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু লাভ করেন।
■ বেদ কি লক্ষ্মী সরস্বতী দূর্গা কালী রূপে ঈশ্বরের আরাধনার অনুমতি দেয়???

ঋগবেদ ১০/১২৫- দেবী সূক্ত
অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ।
অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোমা।।১।
সরলার্থঃ আমি দুষ্টের দমনকারী এবং পৃথিবী আদি সমস্ত লোকের সাথে ব্যাপ্য। আমি ১২ মাস এবং সমস্ত তেজোময় পদার্থের সাথে ব্যাপ্য। দিন এবং রাত্রী উভয় কে আমিই ধারণ করি। সূর্য ও অগ্নি, দ্যুলোক ও পৃথিবীলোক উভয় কেও আমিই ধারণ করি।।১।।
অহম সোমাহনসং বিভর্ম্যহং ত্বষ্টারমুত পুষণং ভগম্।
অহং দধামি দ্রবণং হবিষ্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে।।২।।
সরলার্থঃ আমি সব দুষ্ট কে নাশকারী শাসক কে ধারণ করি। আমি কান্তিমান সূর্য কে এবং সর্বপোষক ভূমি কে এবং সমস্ত ঐশ্বর্য্য কে ধারণ করি। আমি অন্নাদি হবিষ্য পদার্থ সম্পন্ন দানশীল যজ্ঞকর্তা এবং সুখ পূর্বক উত্তম রীতি দ্বারা সবাইকে রক্ষাকারী উপসনাশীল, ঐশ্বর্য্যযুক্ত শাসক কে ধন প্রদান করি।। ২।।
অহং রাষ্ট্রী সঙ্গমনী বসুনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্যবেশ্যন্তীম্।।৩।।
সরলার্থঃ আমি রাষ্ট্রের স্বামিনী। আমি নানা ঐশ্বর্য্য কে প্রাপ্ত করানোকারী, যজ্ঞ দ্বারা উপাস্য, সব থেকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানবতী। সেই আমাকেই বহু প্রকার দ্বারা বিদ্যমান এবং বহু তত্ব বা শক্তির প্রদানকারী আমাকেই বিদ্বান জন বিবিধ প্রকার দ্বারা প্রতিপাদন করেন।
ময়া সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি য ই শৃণোত্যুক্তম্।
অমন্তবো মাং ত উপ ক্ষিয়ন্তি শ্রুধি শ্রুত শ্রুদ্ধিবং তে বদামি।। ৪।।
সরলার্থঃ আমার দ্বারা অনুমোদিত তিনি ভোজন করেন, যিনি বিশিষ্টরূপে দেখেন, যিনি প্রাণ ধারণ করেন, যিনি উক্ত শ্রবন করেন। আমাকে অমান্যকারী তিনি নাশ প্রাপ্ত হয়, তোমাকে শ্রদ্ধাযুক্ত সত্যবচন বলছি - হে বিশ্রুদ্ধ শ্রবন করো ৪।।
অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবেভিরুত মানুষেভিঃ।
যং কাময়ে তংমুগ্রং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমৃষি তং সুমেধাম্।।৫।।
সরলার্থঃ আমিই ইহা স্বয়ম উপদেশ করি যাকে বিদ্বান এবং মননশীল জন প্রেমপূর্বক শ্রবন এবং মনন করে। আমি যাকে ইচ্ছা করি তাকে তাকে বলবান করি তাকে চতুর্বেদবিত্ করি তাকে ঋষি এবং তাকে উত্তম মেধাযুক্ত করি।। ৫।।
অহং রুদ্রায় ধনুরাতনোমি ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ।
অহং জনায় সমদং কৃণম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আ বিবেশ।।৬।।
সরলার্থঃ আমি ব্রাহ্মণ, বেদের হিংসক শত্রুবর্গকে নাশের জন্য দুষ্টের রোদনকারী ধনু কে বিস্তার করি। আমি মনুষ্যের উপকারের জন্য সংগ্রাম করি, আমি আকাশ এবং ভূমি উভয়ের মধ্যে ব্যাপ্য।।৬।।
অহং সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্মম যোনিরপ্স্বন্তঃ সমুদ্রে।
ততো বি তিষ্ঠে ভূবনানু বিশ্বোতামূ দ্যাং বর্ষ্মণোপ স্পৃশামি।। ৭।।
সরলার্থঃ আমি এই সংসারের সবার উপরে এই জগতের পালক সূর্যকে উৎপন্ন করি। জলের মধ্যে তথা সমুদ্রের প্রতিটি পরমাণুতে আমার নিবাস ।সেই আমিই সমস্ত লোক কে বিশেষ রুপ দ্বারা ব্যাপিয়া আছি। এবং আমি সুখপ্রদ রূপ দ্বারা এই মহান আকাশ বা সূর্য্য কে প্রাপ্ত হই।
অহমেব বাত ইব প্র বাম্যারভমাণা ভূবনানি বিশ্বা।
পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈতাবতী মহিনা সম্বভূব।।৮।।
সরলার্থঃ আমিই বায়ুর ন্যায় প্রগতি করি। আমি সমস্ত ভূবন কে নির্মাণ করি, দ্যুলোক থেকে পরেও এই পৃথিবী থেকে পরেও আমার মহানত্ব এতটাই হয়।।৮।।
ঋগ্বেদের দেবী সূক্তে এভাবে ই নারীরূপে ঈশ্বরের আরাধনা করা হয়। পৌরাণিক দেবী লক্ষ্মী সরস্বতী দূর্গা কালীরূপী ঈশ্বরের নারীসত্তার উৎপত্তি বিষয়ে বেদে ই পাওয়া যায়।
☆☆☆ এছাড়া বেদে সরাসরি লক্ষ্মী ও সরস্বতী রূপে ঈশ্বরের আরাধনার কথা আছে।।
●●●
আর্যগণ পূর্বেও লক্ষ্মীর আরাধনা বা উপাসনা করতো, এখনো করে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু হিন্দুগণ এখন যে চিন্তনে লক্ষ্মী পূজা করে (ছবিতে যা দেখছেন ও বছরে একক দিন যা হয়), তার সাথে বৈদিক ঋষি তথা আর্যগণের উপাসনা পদ্ধতি ভিন্ন। আর্যরা প্রতি নিয়তই লক্ষ্মীর উপাসনা তথা আরাধনা করে। দেখুন লক্ষ্মী মানে কি-
লক্ষ্মী- (লক্ষ দর্শনাঙ্কনয়োঃ) এই ধাতু থেকে লক্ষ্মী শব্দ সিদ্ধ হয়।
'য়ো লক্ষয়তি পশ্যতঙ্কতে চিহ্নয়তি চরাচরং জগৎ অথবা
বেদৈরাপ্তৈর্য়োগিভিশ্চ য়ো লক্ষ্যতে স লক্ষ্মীঃ সর্বপ্রিয়েশ্বরঃ'
অথাৎ যিনি সমস্ত চরাচর জগৎকে দেখেন, তা চিহ্নিত অর্থাৎ দর্শনীয় করিয়া নির্মাণ করেন অর্থাৎ যিনি শরীরে নেত্র ও নাসিকা, বৃক্ষের পত্র, পুষ্প, ফল, মূল, পৃথিবী ও জল(অগ্নি) আদি কৃষ্ণ রক্ত ও শ্বেত মৃত্তিকা পাষাণ চন্দ্র ও সূর্য্যাদি চিহ্ন রচনা করেন, তথা সকলকে দেখেন, তিনি সকল শোভার শোভা এবং যিনি বেদাদি শাস্ত্র বা ধার্মিক বিদ্বান যোগীদিগের লক্ষ্য অর্থাৎ দর্শনীয়, এই কারণে সেই পরমেশ্বরের নাম লক্ষ্মী।
এখন বেদ থেকে আমরা লক্ষ্মী সম্পর্কিত একটি মন্ত্র দেখি, সেখানে কিভাবে আমরা লক্ষ্মীর আরাধনা করি তার উল্লেখ পাওয়া যায়-
"সক্তুমিব তিতউনা পুনন্তো যত্র ধীরা মনসা বাচমক্রত।
অত্রা সখায়ঃ সখ্যানি জানতে ভদ্রৈষাং লক্ষ্মীর্নিহিতাধি বাচি।। 
ঋগবেদ ১০।৭১।২.
.
সরলার্থঃ চালনী দ্বারা পরিস্কৃত সুক্তের সমান যেখানে ধীর বিদ্বান মন দ্বারা পবিত্র বাণী বলে সেখানে পরস্পর মিলে জ্ঞানের চর্চাকারী বিদ্বান প্রকৃত মিত্রতাকে অনুভব করে। এদের বাণিতে কল্যাণময়ী লক্ষ্মী নিহিত হয়।"
অর্থাৎ লক্ষ্মী আলাদা কোন দেবী নয়। বরঞ্চ স্বয়ং পরমেশ্বরেরই একটা গুণবাচক নাম।
●●● ঋগ্বেদ 1/3/10 মন্ত্রটিতে সরস্বতীরূপে ঈশ্বরের আরাধনার কথা বলা আছে।
পবকা নঃ স্বরস্বতী বাজেভির্বাজিনীবতী।যজ­্ঞং বষ্টু ধিয়াবসুঃ।।ঋগ্বেদ ১/৩/১০
অনুবাদঃ
May Sarasvati, goddess of divine speech, mother knowledge of arts, science and divinity, come with gifts of food for the mind and intellect and purify us with the light of knowledge. May the mother grace our yajna of arts and sciences and bless us with the light divine. (Dr. Tulsi Ram)
বাংলাঃ সরস্বতী,স্বর্গীয় বাকশক্তির অধিষ্ঠাত্রী,শিল্পকলা,বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের জননী,যেন আমাদের চিত্তের খাদ্য দান করেন এবং জ্ঞানের আলো দ্বারা পরিশুদ্ধি সাধন করেন।মাতা যেন শিল্পকলা ও বিজ্ঞান বিষয়ে আমাদের সাধনা কে ফলদায়ক করেন ও আমাদের স্বর্গীয় আলো দ্বারা আশীর্বাদ করেন।
Special Thanks to:
Jatindra Barman Tanmoy
Kanchan Das
সুমন মিত্র 

বাংলাদেশ অগ্নিবীর

সোমবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২১

আবেস্তা কি বেদ কপি

 

#আবেস্তা_কি_বেদ_কপি_না_সনাতনধর্মের_ইতিহাস?

 এখানে আবেস্তা বা জোরোস্টানজম যে সনাতন ধর্মের ই অংশ ছিল তা প্রমান করা হয়েছে।

প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেই অতিরিক্ত সময় নেওয়ার জন্য। আসলে এই পোস্ট টা অনেক কঠিক ছিল ; কারন এই সম্পর্কে ধারনা বাহিরে ইতিহাস লুকায়িত। ঘাটাঘাটি করে মুল বিষয় টা বুঝতে সময় লাগছে। আর কিছু হলেও আমার আলসেমি 😛। যাই হোক এখন মুল কথায় আসি।

☞ সনাতন ধর্ম সবচেয়ে পুরনো ধর্ম বলে সনাতনি রা দাবী করে। এর জন্য কিছু দাবী ও রাখে তারা, যেমন তাদের ইতিহাস। 
,,, বর্তমানে কিছু মানুষ একটা দাবী তুলছেন যে " আবেস্তা” নামক গ্রন্থ থেকে ( ঋগ্বেদ) এসেছে। তার জন্য তারা আবেস্তা গ্রন্থ সাথে ঋগ্বেদ এর কিছু শব্দের মিল দেখায়।

★ সর্ব প্রথম আমরা জেনে নেই আবেস্তা কি?

☞ আবেস্তা হল একপ্রাচীন ধর্ম গ্রন্থ। সেই ধর্মের নাম "জোরোস্ট্রাইনিজাম” (zoroastrainusm)। 
আবেস্তা গ্রন্থ পুরো নাম ”জেন্ডা আবেস্তা ” ( zenda avesta) বলে থাকে থাকে। এটা মুলত একটি পার্সি ধর্ম। এর প্রধান উৎপক্তি স্থল উত্তর ইরান।

 " জেরোস্ট্রাইনিজাম " এর প্রধান হলেন 
Zoroaster " জোরোস্ট্রার। বিশেষজ্ঞ রা মনে করেন তার জন্ম ২০০০ BC থেকে ১৫০০ বিসি বলা হয়। তিনি মুলত অই এলাকায় ধর্মিয় পরিবর্তন এ সাহায্য করেন। এবং নিরাকার ঈশ্বর পুজ করেন। যাকে তিনি আহুরা মাজদা বলেন।

⁂★ জেরোস্ট্রাইনিজাম মুলত " Duelism” বা দুটি বিপরীত তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে থাকে। তারা মুলত পজিটিভ এবং নেগেটিভ শক্তি তে বিশ্বাস করে থাকে।
,,, তারা বিশ্বাস করে পৃথিবীতে যেমন ভাল শক্তি আছে ঠিক তেমনে আসুরিক শক্তি ও আছে। যারা আমাদেরকে বিপথে নেওয়ার চেষ্টা করে।

 এখানে জোরোস্ট্রাইনরা একজন কে আসুরিক,, আর আরেক জনকে শুভ শক্তি বলে থাকে। তাদের নাম হলঃ

☞ আসুরিক : #Angra_mainyu 
☞শুভ শক্তি : #AhuraMazda

 #Angra_Mainyu : Angra Mainyu হলেন জোরোস্ট্রাইনদেরবিশ্বাসকারী সেই অশুভ শক্তি। যিনি তাদের কে তাদের ইশ্বর এবং শুভ শক্তি থেকে সরিয়ে অশুভ শক্তি দিকে নিয়ে যাচ্চে। Angra mainyu মুলত একজন বহুঈশ্বর বাদী ব্যাক্তি, যিনি একজন মুলত দেবতা দের বিভিন্ন মুর্তি বানিয়ে পুজ করেন এবং তাদের কে পুজ করতে বলেন। জোরোস্টার Angra mainyu কে একজন অশুভ শক্তি বলেছেন। যে ইশ্বর এর শত্রু তথা মুর্তি পুজারী বলা যায়।

 #Ahura_mazda : আবেস্তা তে Ahura mazda হলেন সেই পরম ব্রম্ম। জোরোস্ট্রাইমদের পিতা/নবী Zoroaster আহুরা মাজদা কেই সর্ব শক্তি শালি বলে থাকে। আবেস্তা তে অনেক বার আহুরা মাজদা নিয়ে কথা আছে। এবং এখানে তাকে ইশ্বর রুপে বা যজ্ঞ দেবতা মত সম্মান দেওয়া হয়। তিনি জারোস্টাইন্দের সব চেয়ে প্রিয় ব্যাক্তি ও বটে।

,,,, তাছাড়া কিছু ব্যাক্তি মনে করেন, আহুরা মাজদা বৈদিক বরুন। যেমন: (Kuiper. IIJ I, 1957; Zimmer. Münchner Studien 1984:187–215) মনে করেন আহুরা মাজদা বৈদিক বরুনা মিত্র থেকে এসেছে। 
আবার William W Malandra মনে করেন এটা ইন্দো ইরানিয়ান দের ধর্মের উপাস্যের নাম যার অর্থ জ্ঞ্যানি প্রভু।
,,, এখানে Mazda বলতে কোন জ্ঞ্যানি বিষয় বোঝায়। ঠিক এই বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় এটা medha ( মেধা) বোঝায় যা অর্থ জ্ঞ্যানি। Ahura শব্দের এক অর্থ হল Ashura বা মহৎ বা সর্বশ্রেষ্ঠা বোঝায়। এখানে " Ahura mazda " বলতে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞ্যানি বোঝায়। যা সংস্কৃত ভাষার সাথে একত্য প্রকাশ ও করে বটে।

 বেদ ও আবেস্তা তে এত ভাষাগত মিল কেন ?

☞ আবেস্তা সাথে ঋগ্বেদ এর শব্দগত মিল সমুহ।

https://parsikhabar.net/culture/ancient-persian-influence-on-hinduism/750/?_gl=1*g6hhyw*_ga*YW1wLS0wUmxLVDlORFBjdmZtRDZDeGF2c3c.#disqus_thread

#উত্তর: এর প্রধান কারন হল " Linguistic language ”। যে সব ভাষা সাথে আরো প্রাচীন অন্যান্য ভাষার এবং বর্তমানের ভাষার সাথে মিল থাকে, তাকে linguistic language বলে। আর সংস্কৃত হল অই ধরনের ই একটা ভাষা। কোন একটি শব্দের মিল সাথে অন্যান্য শব্দের উচ্চারন গত মিল থাকলে, তাকে বিজ্ঞানিরা এক গুত্রের ভাষা বলে। 
,,,সংস্কৃত এর লিংগুইস্টিক এর অনেক বই সহ প্রমান।

https://libguides.anu.edu.au/c.php?g=918497&p=6621763

এই কারনের জন্য আপনারা আবেস্তা সাথে অনেক মিল দেখতে পারেন শব্দগত ( সামনে আমরা এ নিয়ে বিস্তারিত একটা একটা করে জানব)। 
,,, এখানে সংস্কৃত এর সাথে জোরোস্ট্রাইন্দের জায়গার অন্যতম ভাষা পার্সিয়া ভাষার মিল গুলা আলোচনা মাধ্যমে বলা হয়েছে।

পারস্য ভাষা এবং সংস্কৃত ভাষার মিল

https://youtu.be/1Q_WGmt-fZw

রাশিয়ান ভাষার সাথেও মিল আছে
★রাশিয়া এবং সংস্কৃত ভাষার মিল

https://youtu.be/-b-OjaPV4m8

☞ এই পৃথিবী তে অনেক ভাষার সাথে অনেক ভাষার মিল পাওয়া যায়, একে মুলত লিংগাস্টিক ভাষার শ্রেণিগত রাখা হয়ে থাকে। সংস্কৃত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ লিংগাস্টিক ভাষার মধ্যে পড়ে।
❐ আর আমরা এও জানি যে বর্তমান ইরাক ইরান ( আগে কার পারস্য) প্রাচীন ভারতের এর প্রতিবেশি দের মধ্যে পড়ত।

 জোরোস্ট্রাইন্দের ধর্মগ্রন্থ " আবেস্তা” তে আসলে কি আছে তা দেখার জন্য আমাদের আবেস্তা গ্রন্থ টা পড়া ও দরকার, তার জন্য এখানে আবেস্তা এর পিডিএফ দেওয়া হল, দেখে নিবেন।

https://drive.google.com/file/d/14K_7TDtZsQJT1ozvoTKnqdshyq0MLWYN/view?usp=drivesdk

☞ আপনি এখানে দেখে নিতে পারেন আবেস্তা তে কি আছে বা ঋগ্বেদ কি আবেস্তা এর কপি না কি। এখানে আপনি জোরোস্ট্রাইনদের সম্পর্কে প্রায় সব জানতে পারবেন। 
,,,, আবেস্তা তে মুলত ২ টি ভাগ আছে।

১: gathas বা প্রি হিস্টরিক আবেস্তা। 
২: বর্তমান আবেস্তা।

 আবেস্তা তে Devas কারা ?

#উত্তর: আবেস্তা তে Angra mainyu এর বর্নিত মুর্তি কে Deaves বলা হইছে। Angra mainyu প্রাচীন পারস্যে কিছু মুরতি কে পুজ করাতেন, তার মত অনুসারে অই এলাকার মানুষ ও এই সব মুর্তি কে পুজ করত। জোরোস্ট্রার আসার পর তিনি এসব মুর্তি বাদ দিয়ে নিরাকার ব্রম্মের পুজ শুরু করেন। যাকে আহুরা মাজদা বলে।

 আমরা এখন আবেস্তা তে গাথা / gathas নিয়ে আলোচনা করব।

☞ Gathas বা গাথা মুলত মুল ভাষার আবেস্তা মন্ত্র বলা হয়। যাকে অনেকে avestain আবেস্তাইন ভাষা বলে থাকে। এটাকে তারা জেন্ডা আবেস্তা এর মুল ভাষা বলে। অই " Gathas ” এ মুলত hymns হিম এর কাজে লাগে। এখানে অই গাথা গুল গানের সুরের মত ব্যাবহার করে 
” Yasna " তে ব্যাবহার করে। অইখানে যজ্ঞ মত করে অই গাথা গুল পাঠ করা হত। যাতে তাদের কামনা পুর্ন হয়। অই খানে gathas গুলা hymn (হিম) করে Yajna (যজ্ঞ) তে দেওয়া হত 😀। না ভাই, এগুল আবেস্তা এর ই ধর্মিয় রীতি। সামনে এর প্রত্যেক টা নিয়ে আলোচনা হবে।

 hymn ( হিম) কাকে বলে?

☞ এক কথায় বলতে গেলে " hymns” (হিম) গুল আবেস্তা এর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র সমুহ। বিশেষত ১৭ টি মন্ত্র আছে বা hymns আছে আবেস্তা তে। 
∇ নিম্নে তা দেওয়া হল।

★28–34 Ahunavaiti Gatha (cf. Ahuna Vairya), 100 stanzas, (3 verses, 7+9 syllable meter)

★43–46 Ushtavaiti Gatha 'Having Happiness', 66 stanzas (5 verses, 4+7 syllable meter)

★47–50 Spenta Mainyu Gatha 'Bounteous Spirit', 41 stanzas (4 verses, 4+7 syllable meter)

★51 Vohu Khshathra Gatha 'Good Dominion', 22 stanzas (3 verses, 7+7 syllable meter)

★53 Vahishto Ishti Gatha 'Best Beloved', 9 stanzas (4 verses, two of 7+5 and two of 7+7+5 syllables)

★54 Airyaman ishya Gatha 'The invocation of the divinity Airyaman'

এই মন্ত্র গুল মুলত জোরোস্ট্রান্দের যজ্ঞে ( yazna) তে ব্যাবহার করা হয়। বর্তমানে আবেস্তান ভাষা তাদের প্রাইস্ট ( পুরোহিত) ছাড়া তেমন কেউ জানে না তাই এগুল বর্তমানে বিলুপ্ত এর মধ্যে পড়ে।

 আবেস্তা তে Yazna কি বোঝায় ?

☞ জোরোস্ট্রাইনদের প্রধান গ্রন্থে " Yazna ” এর উল্লেখ আছে। এখানে Yazna বলতে সমর্পন করা বোঝায়। বিশেষত অগ্নি মাধ্যমে সমর্পন যজ্ঞ করা হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে পানি কেও ব্যাবহার করে থাকে।
☞ অগ্নি বায়ু জল সুর্য চন্দ্র এগুল বৈদিক দেবতা। এদের কে মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার হয়ে থাকে।

★ জেন্ডা আবেস্তা এর yasna তে ১৭/১১ এ পাচ প্রকার অগ্নি যজ্ঞ কথা উল্লেখ আছে। 
#উল্লেখ: সনাতন বৈদিক ধর্মে বেদে ও পাচ প্রকার যজ্ঞের কথা উল্লেখ করেছে।

❐ ব্রম্মযজ্ঞ্য: ঋগ্বেদ: ১/৬/১। 
❐দেবযজ্ঞ্য: যজুর্বেদ :৩/১। 
❐ পিতৃযজ্ঞ: যজুর্বেদ : ২/৩৪।
❐ অতিথি যজ্ঞ: অথর্ববেদ : ৯/৬৩ /১-৮ 
❐ ভৃতযজ্ঞ : ২/১৩/৪

★ কিন্তু মুলত জোরোস্ট্রাইনরা অগ্নি যজ্ঞের ৩ টি প্রকার করেছে। 
 যা হল : ১ : Atash brahram. 
২ : Adaran. 
৩: Dadgha.

 Atash brahram যজ্ঞ কি ?

#ঊত্তর: মুলত Atash brahram বলতে শবদাহ করা বোঝাইছে। মৃতদেহ কে পর্যাপ্ত কাঠ ইত্যাদি দিয়ে পরিপুর্ন পবিত্র টার সহিত দাহ করা কেই Atash brahram বুঝাইছে। এখানে মৃত দাহ করার সাথে কিছু ছোট যজ্ঞ করার কথাও আছে। যা মুলত কয়েক দিন যাবত চলার বিধান দেওয়া হইছে। 
☞ এখানে মৃত দেহ থেকে ছোট যজ্ঞ ( Avestan fire altar) ইত্যাদি কোন বিজ্ঞ প্রাইস্ট বা পুরহিত কে করতে বলা হয়েছে। 
আর এর কাজে জোরোস্ট্রাইন ছাড়া ব্যাক্তি দের ও থাকার অনুমিত আছে, এবং তাদের দাহ করার ও অনুমিত আছে। 
,,,যা সনাতন বেদের প্রতিফলন ঘটায়।

 Atash adaran কাকে বলে ?

#উত্তর: এটি মুলত দ্বিতীয় স্তর এর যজ্ঞ। এখানে সামাজিক যজ্ঞ যাতে সমাজের ৪ স্তরের মানুষ থাকে ( উল্লেখ সনাতন ধর্মে ৪ টি স্তর) যেমন পুরহিত বা প্রাইস্ট, সৈনিক বা যোদ্ধ্যা, কৃষক এবং শিল্পি আছে ( প্রাচীন কালে শিল্পের খুবি দরকারি এক উপাদান ছিল)। 
,,, এই যজ্ঞে, hymns গুলা ৩ বার করে ৩ দিন সবার জন্য করা হবে,,, এবং মুল যজ্ঞ বেদি টা কোন উচু স্থানে থাকতে হবে। অগ্নি তে সমর্পন জন্য শস্যাদি ব্যাবহার কথা আবেস্তা তে বর্নিত রয়েছে। 
☞ অই যজ্ঞ বেদি টা মহিষ এর মুত্র দ্বারা শুদ্ধ করতে হবে। ( আমরা সনাতনি রা পঞ্চগব্য - দধি, দুগ্ধ, ঘৃত, গোমূত্র, গোময়।) দিয়ে শুদ্ধ করে।

 Atash Dadgah কি এবং কেমন ?

#উত্তর: Atash dadgah হল জোরোস্ট্রানদের সর্বনিম্ন স্তুরের যজ্ঞ, যা মুলত কোন নির্দিষ্ট ব্যাক্তি করার কথা বলেছে। তারা মহিষের মুত্র কে দিয়ে যজ্ঞ বেদি শুদ্ধ্য করতে বলেছে। 
,,, এখানে মুলত খুব সল্প সময় তা স্তরের জন্য ব্যাবহার করা হয়। এতে জিনিষ এর প্রয়জনিতা এর ও কম পড়ে। যাতে সব ধরনের শ্রেণী মানুষ ঘড় বাড়িতে ও করতে পারে তার সুবিধা আছে।

প্রাচীন জোরোসট্রানের অগ্নি পুজ বা যজ্ঞ করার অনেক আর্কিওলজিক প্রমান পাওয়া গেছে, এখানে তার কিছু প্রমান সমুহু ( যজ্ঞ বেদি) এর চিত্র দেওয়া হল।

https://drive.google.com/file/d/10HlWjLs9E-r1OkidlsjthQoIKnAjyGMr/view?usp=drivesdk

উল্লেখ: এখানে প্রাচীন এবং বর্তমান এর অগ্নি বেদি/ যজ্ঞ বেদি এর চিত্র দেওয়া আছে। মুলত বর্তমান অগ্নি বেদি আগের কালের বেদির সাথে তেমন মিল নেই। এর মুল কারন বর্তমান পরিস্থিতি। যার কারনে সম্পদের সিমাবদ্ধ এর এক প্রভাব ফেলে।

 জেন্ডা আবেস্তা তে ইন্দ্র, সুর্য

https://drive.google.com/file/d/10STN_EIFUNS-D5uXVjkVY8B4hw6nBUtr/view?usp=drivesdk

 জোরোস্ট্রাইনে বরুন।

☞ জোরোস্ট্রাইন ধর্মের অন্যতম ব্যাক্তি Athur lenormant এর বক্তব্য তে বরুন উল্লেখ। এবং তিনি আহুরা মাজদা কে বরুনা উল্লেখ করেছেন।

★Ahura Mazda has created asha, purity, or rather the cosmic order; he has crested the moral and the material world constitution; he has made the universe; he has made the law; he is, in a word, creator (datar), sovereign (ahura), omniscient (mazdao), the god of order (ashavan). He corresponds exactly to Varuna, the highest god of Vedism."[197] - Arthur Lenormant

☞ বেদে বরুন সম্পর্কে কিছু তথ্য।

Many a year I have lived with them; I shall now accept Indra and abjure the Father Varuna, along with his fire and his soma (haoma) has retreated. The old regime has changed. I shall accept the new order.

—Rig Veda 10.12.4

 আবেস্তা এবং পারস্যে রাম।

☞ প্রাচীন পারস্যে রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। সাম্প্রদায়িক কালে ইরানে এক পাহাড়ে পুরুষ শ্রেষ্ঠ রাম জি এর চিত্র পাওয়া যায় যা আনুমানিক ৪০০০ বছর আগের। এখন আমরা আবেস্তা তে রামের উল্লেখ দেখব।

★ Zoroastrianism and Hinduism We sacrifice unto Mithra, the lord of wide pastures; we sacrifice unto Rama Hvastra.
We sacrifice unto Asha-Vahiśta and unto Atar, the son of Ahura Mazda.

—Khorda Avesta 2.7

আরো প্রমান :

https://mobile.twitter.com/davidfrawleyved/status/1181732925450014720

https://indictales.com/2018/07/12/rama-worship-in-2nd-millenium-bce-zoroastrian-literature/

☞ এখন ইরানে পাওয়া ভগবান রামের চিত্র দেখব। যা বলা হয় ৪০০০ তথা জেন্ডা আবেস্তা এর শুরু কালের।

1 : https://detechter.com/6000-year-old-ram-hanuman-carvings-silemania-iraq/

2: https://youtu.be/m0sOZ2Vkt1A

3: https://m.timesofindia.com/city/lucknow/ram-footprints-on-iraqs-cliff-indian-embassy-tracks-mural/articleshow/69950327.cms

উপসংহার : এমন অনেক কিছুই আছে যা স্পষ্ট জেন্ডা আবেস্তা আর বেদ কে যমজ ভাই হিসেবে প্রমান করতে পারে। কিন্তু সনাতন বৈদিক ধর্ম সাথে অনেক মিল থাকা সত্যেও আমরা এটা বলতে পারব না জোরোস্ট্রানরা ১০০% বৈদিক ছিল। এর কারন তাদের ইশ্বর আহুরা মাজদা এর চিত্র বা আকার দেওয়ার চেষ্টা। কিন্তু এটা বলতে পারি যে অবশ্যই জোরোস্ট্রাইনরা প্রাচীন বৈদিক সমাজের সাথে সম্পর্ক যুক্ত ছিল। এবং হতে পারে তারা সনাতনের ই কোন অংশ ছিল। 
,,, কিন্তু কোন মতেই বেদ আবেস্তা এর থেকে কপি হতে পারে না। কারন বেদ এর থেকে অনেক পুড়নো, আর অনেক বিশালতা ও বটে।

শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২১

রাম ইতিহাস নাকি কল্পকাহিনী

 


#রামায়ণ_ইতিহাস_নাকি_কল্পকাহিনী_জেনে_নিন 
রাম সেতু বর্তমান ভারতে আলােচনার কেন্দ্রবিন্দু। ভারত সরকার উচ্চ আদালতে ঘােষণা করেছে যে, রাম নামের কেউ পৃথিবীতে কখনাে ছিল না। যাই হােক অন্য রাজনৈতিক দল এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের তীব্র বিরােধিতা ও অন্যদিকে আপিল বিভাগের রামায়ণের সত্যতা স্বীকার করে নেয়া এক সময়ের আলােচিত বিষয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত হিন্দু সংগঠনগুলাে দাবি করেছে যে, রামের অস্তিত্ব নিয়ে যে বিতর্ক তা শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

রামের অস্তিত্ব লক্ষ লক্ষ লােকের কাছে বিশ্বাসের ব্যাপার। এই কারণে কোনাে সরকারই রামের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীদের এই তত্ত্ববিদগণ কট্টরভাবে সরকারকে আক্রমণ করেনি এবং প্রমাণ করেছে যে রামায়ণ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। তা সত্ত্বেও তারা অপ্রত্যাশিতভাবে কাশ্মীরের ‘হারিয়াত’ কনফারেন্স থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। 'হারিয়াত কনফারেন্স এ দাবি করা হয় যে, শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহাসিক প্রমাণগুলােকে ধর্মের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়কে পরিমাপের মাপকাঠিকে ব্যবহার করা উচিত নয়। এই কারণে রামের অস্তিত্ব ছিল কি ছিল না সেটা শুধুই একপাক্ষিক ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সাপেক্ষে বিচার্য নয়। কারণ এটি যেমন লক্ষ লক্ষ লােকের ধর্মীয় অনুভূতির সাথে সহম্পর্কিত তেমনি প্রাচীন এই ইতিহাসের অনেক নির্দশন আজ প্রায় বিলুপ্ত। সেকারণে এব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ অপ্রত্যাশিত। ইতােমধ্যে কিছু বিজ্ঞানী জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে দাবি করেছে যে, ৫০৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রামের অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিল। এই রকম একটি হতবম্ভকর অবস্থায় সাধারণ লােকের পক্ষে রামের অস্তিত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন কাজ। এই কারণে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে রাম এবং মহাকাব্য রামায়ণ নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ করা প্রয়ােজন।

#কে_এই_রাম

মহাঋষি বাল্মীকি এমন একটি ঐতিহাসিক মহাকাব্য লিখতে চেয়েছিলেন যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পথপ্রদর্শকের, নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। এই বিষয়ে লিখতে গিয়ে তাঁকে গভীর বেগ পেতে হয়েছিল। যখন তিন নারদ মুনির সাথে পরামর্শ করেছিলেন, নারদ মুনি রঘুবংশে জন্মগ্রহণকারী দশরথের পুত্র রামকে নিয়ে মহাকাব্য রচনার পরামর্শ দেন। এখানে একটি বিষয় মনেরাখা দরকার যে, বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন রামের জন্মের বহু পরে। এটা বিদ্যমান কিংবদন্তীর তথা বর্তমান প্রচলিত ধারণা রামের জন্মের পূর্বে রামায়ণের রচনা তার সাথে সাংঘর্ষিক। এই বিষয়ে বাল্মীকি রামায়ণে যথাযথ বর্ণনা করা হয়েছে। একইভাবে মহাকবি কালিদাস লিখেছেন রঘুবংশ। এই পুস্তকে রঘুবংশ পরম্পরার উপর আলােকপাত করা হয়েছে। যারা রামের পরে দেশ শাসন করেছেন। এখন তর্কের বিষয় হতে পারে যে রাম যদি কল্পকাহিনীর চরিত্র হয় বাল্মীকি কিভাবে রামের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস আলােচনা করেছেন। সেখানে রঘুবংশে কালিদাস রামের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন এবং উত্তর পুরুষদের বর্ণনা করেছেন যারা পরবর্তীকালে দেশ শাসন করেছেন। বর্তমান সময়ে রামের গল্প নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই ভারতে ও সমস্ত বিশ্বে বিদ্যমান।

#রাম_কখন_জন্ম_গ্রহণ_করেছিলেন?

এই বিষয়ে আলােচনা করার আগে আমাদের প্রথমত জানতে হবে যে, আমাদের মুনিঋষিরা মন্বন্তর তত্ত্বে পদ্ধতিগতভাবে সৃষ্টির সময়কাল নিয়ে আলােচনা করেছেন। প্রত্যেকটা মন্বন্তরকে আবার চারটি যুগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক চতুর্যুগ সত্য, ক্রেতা, দ্বাপর ও কলি দ্বারা গঠিত। বর্তমান মন্বন্তরের নাম বৈবশ্বত্য। ইতােমধ্যে এই মন্বন্তরে ২৭টি চতুর্যুগ বিগত হয়েছে। বর্তমান চতুর্যুগটি ২৮ তম এবং এবং প্রথম দিকের সময় চলমান। এটা সর্বজন বিদিত যে, ত্রেতাযুগের শেষভাগে এসে রাম জন্ম গ্রহণ করেন। একারণে এটা যদি ধারণা করা হয় যে রাম বর্তমান চতুর্যুগের সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাহলে এটা বােঝায় যে তিনি ১০ লক্ষ বছর আগে জন্মেছিলেন। তাঁর জন্মের এই সময় আরাে পিছিয়ে যেতে পারে। যাই হােক বায়ুপুরাণে রামায়ণের ঘটনাপঞ্জির সঠিক সময় দেয়া আছে। একটি প্রমাণ দ্বারা ঘটনার সত্যতাকে বিচার করা যায় যখন হনুমান সীতার খোঁজে লঙ্কায় গিয়েছিল তখন সে চার দাঁতওয়ালা হাতি দেখতে পায়। একারণে প্রত্নতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানীদের কাছেই প্রশ্ন যে কত বছর পূর্বে চার দাঁতওয়ালা হাতি বর্তমান ছিল।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাল্মীকি রামায়ণে উল্লেখ করা হয়েছে তা হলাে ভরত এবং শত্রুদ্নের পিতৃভূমিতে এমন যানবাহন ব্যবহার করা হতাে যেটি কুকুর বা হরিণ চালিত ছিল। যখন দুই ভাই মামাবাড়ি থেকে অযােধ্যায় ফিরে আসে পথিমধ্যে তারা অনেক পথ অতিক্রম করেছিলেন যেগুলাে বরফে ঢাকা ছিল এবং শীত থেকে রক্ষা পেতে উলের গরম কাপড় ব্যবহার করেছিলেন। এখানে যে জায়গার কথা বলা হয়েছে তা বিবেচ্য বিষয়। আমাদের যুক্তিতে এই জায়গাটি 'রাশিয়া কারণ 'রাশিয়া' শব্দটি 'ঋষি শব্দ থেকে এসেছে। উল্লিখিত বিষয়টি বলে দেয় যে রাম কোন সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

সুতরাং যারা রামকে কল্পকহিনীর চরিত্র হিসেবে দাঁড় করাতে চায় তাদেরকে আমরা এমন কিছু প্রমাণ দিতে পারবাে যা প্রমাণিত করবে খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্মের অনেক আগে রাম সমস্ত বিশ্বে একজন অপরিসীম শ্রদ্ধার ধর্মীয় ব্যক্তি ছিলেন।

#বিশ্বের_বিভিন্ন_প্রান্তে_রামায়ণের_কিংবদন্তী

১) রাশিয়া এবং মঙ্গোলিয়াতে রামায়ণ— ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর ডেকান হেরাল্ড এর প্রথম পাতায় একটি খবর ছাপা হয়। যেখানে বলা হয় রাশিয়ার কল্মিক এর রাজধানী এলিস্টাতে বিভিন্ন গল্প প্রচলিত ছিল যেগুলাে রামায়ণ থেকে নেয়া। ঐ সংবাদে আরও বলা হয় রামায়ণের বিভিন্ন কিংবদন্তী কল্মকের লােকজনের মধ্যে এখনাে জনপ্রিয়। কল্মিকের গ্রন্থাগারে রামায়ণের অনেক সংস্করণ এখনাে সংরক্ষিত আছে। এই সংবাদ থেকে পরিস্কার যে রামায়ণের কাহিনী সুপ্রাচীনকাল থেকেই রাশিয়ায় জনপ্রিয় ছিল। রাশিয়ার লেখক ডমােডিন সুরেন মঙ্গোলিয়া এবং কলািকের লােকের মধ্যে প্রচলিত এধরনের কিংবদন্তীর সংকলন করেন। অধ্যাপক সি. এফ. গােস্টানকির পাণ্ডুলিপি, 'একাডেমি অব সাইন্স সােভিয়েত ইউনিয়নের সাইবেরিয়ান শাখায় সংরক্ষিত রয়েছে। ওই বইগুলােতে ভােলগা নদীর তীরবর্তী লােকজনের মধ্যে প্রচলিত জনপ্রিয় কিংবদন্তী নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে যা রামায়ণ সংশ্লিষ্ট। এই পাণ্ডুলিপিটি কলিক ভাষায় রচিত। লেনিনগ্রাদের রাশিয়ান এবং মঙ্গোলিয়ান ভাষায় লেখা রামায়ণের বিভিন্ন গল্প সংরক্ষিত আছে।

২) চীনে রামায়ণ— চীনে ক্যাং সেং হু কর্তৃক জাতকের গল্পসংগ্রহে রামায়ণের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, যেগুলাে ২৫১ খ্রিস্টাব্দে সংকলিত হয়েছিল। রামকে বনবাসে পাঠানাের আদেশ দেওয়ার পর পিতা দশরথের মানসিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে রচিত গ্রন্থ যা ৭৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় সেটি এখনাে চীনে প্রচলিত। একইভাবে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে হিজ-ইঈ-চি কপি(বানর) নামে একটি উপন্যাস লেখেন যেটি রামায়ণে বর্ণিত হনুমানের কাহিনী নিয়ে রচিত।

৩) শ্রীলংকায় রামায়ণ— নরেশ কুমার ধাতুসেনা ওরফে কুমারদাসা যিনি ৬১৭ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলংকার শাসক ছিলেন তিনি জানকী হরণ নামে একটি গ্রন্থ লেখেন। এটি হচ্ছে শ্রীলংকায় প্রচলিত সংস্কৃত সাহিত্যগুলাের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন। বর্তমান সময়ে সি ডন বােস্তান এবং জন ডি সিলভা রামায়ণের ওপর ভিত্তি করে গল্প রচনা করেছেন। বর্তমান সময়েও অধিকাংশ লােকই রাম এবং সীতাকে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান করে থাকেন।


৪) কম্বােডিয়ায় রামায়ণ— কম্বােডিয়ার খেমার অঞ্চলে ৭০০ খ্রিস্টাব্দের পুরাতন বিভিন্ন পাথর খােদাইয়ের চিত্র পাওয়া যায়। এই পাথর খােদাইয়ের চিত্রগুলাে রামায়ণের গল্পের ওপর ভিত্তি করে চিত্রিত। প্রাচীন খেমার বংশের শাসনামলে সেখানে বিভিন্ন মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল যেগুলাের দেয়ালে রামায়ণের গল্প চিত্রিত হয়েছে। রামায়ণ ও মহাভারতের গল্পের জন্য পৃথিবীর সর্ববৃহৎ হিন্দু মন্দির অ্যাংকার ভাট গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্দিরটির নির্মাণ সময় ৪০০-৭০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। এই ছবিগুলাের মধ্যে একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার লক্ষণীয় হনুমান এবং অন্য বানরগুলাের ছবিতে লেজ ব্যবহৃত হয়নি। যেটি সাধারণ লােকের বিশ্বাসের বিপরীত।

৫) ইন্দোনেশিয়ায় রামায়ণ— ডি ক্যাপ্রিস এর মতানুসারে ইন্দোনেশিয়াতে চান্দিরােলাে জংরং' নামে একটি মন্দির ছিল যার দেয়ালে রামায়ণের গল্পের বিভিন্ন চিত্র আঁকা ছিল। এই মন্দিরটি নবম শতাব্দীতে নির্মিত। ইন্দোনেশিয়ায় ‘ককাভিন নামে রামায়ণের ভিন্ন সংস্করণ খুবই জনপ্রিয়। প্রামবানানের গল্প থেকে এর কিছুটা পার্থক্য লক্ষ করা যায়। রামায়ণের বিভিন্ন সংকলন ছাড়াও যিশুখ্রিস্টের জন্মের পূর্বে যেসমস্ত গল্প ইন্দোনেশিয়ায় প্রচলিত ছিল সেগুলাে প্রমাণ করে যে ইসলাম আক্রমণের অনেক পূর্বেই ইন্দোনেশিয়ার লােকজনের মধ্যে রামায়ণের গল্পগুলাে জনপ্রিয় ছিল। উল্লেখ যে রামায়ণে বর্ণিত রাজা সুগ্রীবের রাজত্ব ছিল ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে। সেখানে আজও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে রামায়ণের প্রথম আন্তর্জাতিক কনভেনশন ইন্দোনেশিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়। এমনকি ইন্দোনেশিয়ার বিমানের প্রতীক গারুদা অর্থাৎ গরুড় পাখি যা ভগবান বিষ্ণুর বাহন।

৬) লাওসে রামায়ণ— লাওসে স্থানীয় লােকজন যখন লাওস শব্দটি উচ্চারণ করে তখন তা শুনতে রামের ছেলে লবের মতাে শােনায়। এছাড়াও ভ্যাট-সি-ফম ও ভ্যাট-পা-কেভ এর মন্দিরের দেয়ালে রামায়ণের গল্পের চিত্র অঙ্কিত আছে। এই মন্দিরগুলােতে মহাকাব্য রামায়ণ পুস্তকাকারে সংরক্ষিত আছে। ফরাসি পরিব্রাজক 'ল্যাফন্ট, 'পা লাকা-পা লাম' বইটি ফ্রান্সে 'পিওমমাচক নামে অনুবাদ করেন। এই বইয়ে লাওসের সাধারণ লােকজনের মধ্যে প্রচলিত রামায়ণের গল্পের বিষয়ে আলােকপাত করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের সাধারণ মানুষের মধ্যে রামায়ণে গল্প অত্যধিক প্রচলিত। যিশু খ্রিস্টের ঠিক পরবর্তী সময়ে রাজারা তাদের নামের আদ্য ও অন্তে রাম শব্দটি ব্যবহার করত। যেরকমভাবে আমরা উপমহাদেশে রামায়ণের নাটক মঞ্চস্থ করি, থাইল্যান্ডে আজ পর্যন্ত রামায়ণের নাটকের বিভিন্ন

৭) থাইল্যান্ডে রামায়ণ— সংকলন মঞ্চস্থ হয়। একইভাবে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলাে যেমন ইন্দোনেশিয়া, মালেয়শিয়া, কম্বোডিয়াতে রামায়ণের নাটক মঞ্চস্থ হয়।

৮) মালেশিয়াতে রামায়ণ— চতুর্দশ শতাব্দীতে লেখা 'হিকায়ায়াদ সেরি রামা'র গল্পের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নাটক মালেশিয়াতে মঞ্চস্থ হয়। দালাং সমাজ ২০০-৩০০টি রামায়ণ সংশ্লিষ্ট নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এই নাটকগুলাে শুরুর আগে লােকজনরা রাম ও সীতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রার্থনার আয়ােজন করে।

৯) বার্মাতে রামায়ণ— রাজা কায়ানযিথা ১০৮৪-১১১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বার্মা শাসন করেছিলেন যিনি রামের বংশধরের একজন বলে পরিচিত ছিলেন। রামায়ণের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গল্প যেগুলাে পনেরাে শতাব্দীতে লেখা সেগুলাে বার্মাতে এখনাে পর্যন্ত বর্তমান। বার্মার সাহিত্যে 'কাব্যদাশ', ও সুভাসিত রাতানিধি বই দুইটি রামায়ণের গল্প অবলম্বনে রচিত। তারানাথ কর্তৃক লিখিত 'ঝাং-বুং-পা (রামভাষ্য) বইটি বর্তমানে পাওয়া যায় না। বার্মাতেও রামায়ণের গল্পের ওপর রচিত বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ হয়।

১০) নেপালে রামায়ণ— ১০৭৫ খ্রিস্টাব্দের পুরাতন রামায়ণের সংকলনটি নেপালে অদ্যাবধি বর্তমান।

১১) ফিলিপাইনে রামায়ণ— ফিলিপাইনের সাধারণের মধ্যে রামায়ণের গল্পের প্রভাব তাদের ঐতিহ্য, প্রথা এবং কিংবদন্তীতে লক্ষণীয়। অধ্যাপক জুঅন আর ফ্রান্সিসকো দেখিয়েছেন যে, মেরিনিও মুসলিমদের মধ্যে রামায়ণের কিংবদন্তী খুবই জনপ্রিয়। যেখানে রামকে ঈশ্বরের অবতাররূপে মানা হয়। একইভাবে ম্যাজেন্ডানাও অথবা সুলুফোক মুসলমানদের মধ্যে রামের গল্প জনপ্রিয়।

১২) ইরানে রামায়ণ— অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী হায়দারাবাদে সালারজুং নামের একটি জাদুঘর আছে। সেখানে একটি স্থূলকায় বানরের ছবি আছে। যার একহাতে একটি বড় পাথর। এই চিত্রটি সেই হনুমানের কথা মনে করিয়ে দেয় যে দ্রোণাগিরি ধরে রেখেছিল । একইভাবে মারকো পােলাে তার ভ্রমণ বইয়ের ৩০২ নং পৃষ্ঠার দ্বিতীয় খণ্ডে এমন একটি বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত একটি অসামঞ্জস্য বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। যেটি আফগানিস্তান থেকে মরক্কো এবং আলজেরিয়া পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এই মুসলিমরা বিশ্বাস করত যে, ত্রিবজান রাজ্যের রাজকীয় পরিবারের সদস্যদের ছােট লেজ ছিল। আরব ও ইউরােপের দেশগুলােতে প্রচলিত গল্পগুলােকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের অনেক আগে রামায়ণ এবং মহাভারতের কহিনী এই এলাকাগুলােকে প্রচলিত ছিল। এই এলাকার লােকজনের উগ্র বর্বরােচিত কর্মকাণ্ডের ফলে সেই সমস্ত গল্প এবং স্থাপনাগুলাে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে গেছে।

১৩) ইউরােপে রামায়ণ— ইতালিতে 'এস্ট্রোকন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের খননকাজ শুরু হয় তখন সেগুলাের দেয়ালে কিছু অদ্ভুত ধরনের চিত্রকর্ম পাওয়া যায় সেসব চিত্রকর্মের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয় যে সেগুলাে রামায়ণের গল্পের ওপর ভিত্তি করে চিত্রিত। কিছু চিত্র কর্মে দেখা যায় লেজযুক্ত একজন ব্যক্তির পাশে তীরধনুক কাধে দুই ব্যক্তি এবং তাদের পাশে দণ্ডায়মান এক নারী। এই সমস্ত চিত্রকর্ম ৭ম খ্রিস্টপূর্বাব্দের। এটা মনে রাখা উচিত যে এস্ট্রোগণ সভ্যতা ইতালির ৭৫ টি অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছিল। মার্কোপােলাের লেখা অনুবাদ করতে গিয়ে স্যার হেনরি ইউল দেখিয়েছেন যে মধ্যযুগে ইউরােপীয়দের মধ্যে যেসমস্ত বিশ্বাস প্রচলিত ছিল তার মধ্যে ছােট্ট লেজযুক্ত পূর্বপুরুষদের অস্তিত্বের বিশ্বাস অন্যতম। মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তার লেখা 'সত্যার্থপ্রকাশ এ এই বিষয়ে আলােকপাত করেছেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন ইউরােপের লােকদের একসময় মানকি বলা হতাে। বর্তমান আলােচনার প্রেক্ষিতে যদি এই উক্তি বিবেচনা করি তাহলে আমরা অষ্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিমকে ক্যাঙ্গারু, বাংলাদেশ দলকে টাইগার বলার বিষয়টি কিভাবে বিবেচনা করব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর বর্ণনায় এই ধরনের গুণবাচক শব্দ ব্যবহার করা হতাে। যেমন: ভারতের 'চিতা নামে একটি হেলিকপ্টার আছে। যেহেতু এসমস্ত শব্দগুলাে বিভিন্ন বর্ণের লােকদের বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় তাই রাক্ষস ও বানর শব্দগুলােও হিন্দু কিংবদন্তীগুলােতে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের লােকদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। এই বিষয়গুলাে থেকে বােঝা যায় যে রামায়ণ কোনাে কল্পকাহিনী নয়, তা সমস্ত বিশেই খুব জনপ্রিয় ছিল।

১৪) আফ্রিকায় রামায়ণ— ইথিওপিয়ার লােকজন তাদেরকে 'কুশিথস বংশের বলে দাবি করে। কুশ শব্দটি মূলত রামের ছেলে কুশের নাম থেকে এসেছে। এ বিষয়টি শতপথ ব্রাহ্মণে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। বেদের মন্ত্রগুলােকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই ব্রাহ্মণটি অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করেছে। আশ্চার্যজনকভাবে শতপথ ব্রাহ্মণে আমরা দেখি রােডেশিয়ার রাজা ভরতের(কৌরব ও পাণ্ডবদের পূর্বপুরুষ)কথা উল্লেখ আছে। এছাড়াও মহাকাব্য রামায়ণ দ্বারা অনুপ্রাণিত বিভিন্ন অসঙ্গতিমূলক গল্প আফ্রিকার সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত আছে। সেগুলাে বানরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের উপর রচিত। ইজিপ্ট" শব্দটি মূলত 'আজপাতি' শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। যেটি রামের পূর্বপুরুষদের একজনের নাম। মিশরে বিদ্যমান বিভিন্ন লােকগল্পকে যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে রামের পিতা দশরথের দেখা মিলবে।

১৫) উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় রামায়ণ— কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের পূর্বে ইউরােপের লােকজন এসম্পর্কে জানত না। যদিও এ ডি কোয়ান্ট্রিফেজেস তার বই 'দি হিউম্যান স্পেসিস'-এ বলেছেন- চীনের লােকজনেরা আমেরিকা মহাদেশ সম্পর্কে জানত। এবং তাদের সাথে বাণিজ্যের সম্পর্ক ছিল। চীনারা আমেরিকানদের 'ফাৎ সাং' নামে উল্লেখ করতাে। একইভাবে জাপানিদের কাছে তা ফাৎ সি' নামে পরিচিত ছিল। একইভাবে আমরা যদি রামায়ণ-মহাভারতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাকে লক্ষ করি আমরা দেখব যে সেখান আমেরিকা মহাদেশকে পাতাল দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভৌগােলিকভাবে যদি আমরা আমেরিকা মহাদেশকে বিচার করি তাহলে দেখা যাবে আমেরিকা মহাদেশ ঠিক ভারতের নিচে অবস্থিত।


#প্রচলিত_জনপ্রিয়_দুটি_কিংবদন্ত

ক) মেক্সিকোর উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় সুন্দরী মেয়েদেরকে এখনাে উলুপী নামে ডাকা হয়। মহাভারতে আমার দেখতে পাই অর্জুন উলুপী নামে একজন মেয়েকে বিবাহ করেন যিনি ছিলেন পাতাল দেশের রাজকন্যা।

খ) ডব্লিউ এইচ প্রেসকট তার বই হিস্ট্রি অব কনকুয়েস্ট অব মেক্সিকো' তে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করেছেন যেটা প্রমাণ করে যে আমেরিকা মহাদেশের প্রাচীন সভ্যতার সাথে ভারতীয় আর্য সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে। বর্তমানেও মেক্সিকোর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে 'রামাসীততাভ একটি জনপ্রিয় নাটক। বাইবেলের নিউস্টেটামেন্টেMathewch ২/১৮, তে বলা হয়েছে তাঁর কণ্ঠ রামের কণ্ঠে শোনা যায়। রাম শব্দটিকে সেখানে সর্বনাম পদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন এটা বাইবেলিয় সমাজের দায়িত্ব রাম কে তা বিশ্লেষণ করা এবং কেন তাকে বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি রাজা দশরথ এবং অযােধ্যার নামও বাইবেলে আছে।

#ঐতিহাসিকদের_উদ্দেশ্য_কিছু_প্রশ্নঃ
ক) মুসলিমরা কেন রােজার মাসকে রামাজান > রমজান বলে?
খ) গাজা উপত্যাকা কেন রামাল্লা নামে পরিচিত?
গ) লন্ডনের রামসগেট কেন রামসগেট বলা হয়?
ঘ) কেন ইতালির রাজধানীকে রােম (রাম থেকে উৎপন্ন) বলা হয়?

আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যায় যেখানে রাম শব্দটি উপসর্গ বা অনুসর্গ রূপে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন স্থান ও ব্যক্তির নামকরণের ক্ষেত্রে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারতের ঐতিহাসিক প্রমাণ সাপেক্ষে সেগুলােকে বিশ্লেষণ করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্টিজনক উত্তর পাওয়া যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি যে, যদি খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের মতাে মতবাদ জনপ্রিয়তা না পেতাে তাহলে উক্ত নামগুলাের বুৎপত্তিগত অর্থ ব্যাখ্যা করতে সহজ হতাে। এই দুটি ধর্মের বহু শাসক ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত ও স্থাপনার ওপর নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন গ্রন্থাগার ও স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে যা তাদের মতের বিরােধী। তবুও আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে আমরা বিশ্ব ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জিগুলোকে অনেকটা সঠিকভাবে পেয়েছি। আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেছিল তা সর্বজন বিদিত। কোনাে রকম ঐতিহাসিক প্রমাণ ছাড়াই আমরা এটি গ্রহণ করি। যা একটি হাস্যকর ব্যাপার। অপরপক্ষে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমরা রামকে কল্পকাহিনীই বলতে চাই। ঐতিহাসিকেরা রামের অস্তিত্বের বিরােধিতা করতে গিয়ে এমন কিছু হাস্যকর তত্ত্বের উপস্থাপন করেছেন যা পুরাতন বিবর্তনবাদ তত্ত্বের মতই বৈজ্ঞানিক প্রমাণহীন। বিবর্তনবাদ তত্ত্বটি দেয়া হয়েছিল চার্চের স্বৈরতান্ত্রিক হস্তক্ষেপকে রুখে দেয়ার জন্য। সেসময় চার্চ দাবি করত গড পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন শূন্য থেকে এবং এ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বয়স ১০ হাজার বছরের বেশি হবে না। বিবর্তনবাদ তত্ত্ব দ্বারা চার্চের একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছিল।

এখন পাঠকের দায়িত্ব তারা রামকে কিভাবে বিবেচনা করবেন। আমরা আশাবাদী পাঠকদের চিন্তার জন্য যথেষ্ঠ পথ প্রদর্শিত হয়েছে। যারা অনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট তারা এখনাে রামের অস্তিত্বকে অস্বীকার করবে এবং যারা বিশ্বাস করে যে নিছক একটা পৌরাণিক চরিত্র সমস্ত বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধা পাওয়ার উপযুক্ত হয় না তারা রামকে ব্যাপক ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিবেচনা করবে। এখানে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলােকে পরিস্কার করতে চাই।

ক) রাম ছিলেন মহানায়ক, এমন এক রাজা ও কিংবদন্তী যিনি অবতারের মর্যাদা পেয়েছেন। যার আদর্শ আজকের পৃথিবীতেও অনুসরণযােগ্য।

খ) রাম সেতু বর্তমানে নাসা বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রমাণিত।

গ) বাল্মীকির রামায়ণ কোনাে কল্পকাহিনী নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক প্রমাণ। যারা রামের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে চান না তারা যে সমস্ত যুক্তি দিয়ে রামকে প্রমাণ করতে চান ঠিক সেই সমস্ত যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে তাদের আপন পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় কিনা তা তাদের খতিয়ে দেখা উচিত।

(Lord Rama: Myth or truth, By Dr. Vivek Arya : থেকে অনূদিত)

সবার অপ্রিয় শনি।
(সনাতন ধর্মের প্রচারক)