এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩

রাধারমন পেছনে যা লুকিয়ে

 


শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম কি রাধারমন ?

আমি মাঝে মাঝে কীর্তন শুনি, তো একদিন এক কীর্তনে শুনলাম, গাইছে-

"গোবিন্দ বলো হরি, গোপালও বলো, রাধারমনও হরি গোবিন্দ বলো"

সঙ্গে সঙ্গে কীর্তন বন্ধ করলাম এবং ভাবলাম, কী নির্বোধ এরা, তথা হিন্দুরা ? সনাতন ধর্মের পরম পুরুষ পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে এরা যে কী খারাপভাবে সম্বোধন করছে, সেটা তারা নিজেরাই জানে না বা বোঝে না। যদি জানতো বা বুঝতো, তাহলে তারা শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমন বলে সম্বোধন করতো না। কারণ, এই "রাধারমন" শব্দটাই ভয়াবহরকমভাবে অশ্লীল বা আপত্তিকর, যা আমার এই প্রবন্ধের আলোচনা শেষে সকলে বুঝতে পারবেন বলে আশা করছি।

অভিধান অনুযায়ী রমণী শব্দের অর্থ পত্নী বা স্ত্রী, এককথায় বউ, যার সাথে সমাজস্বীকৃত বৈধ পন্থায় সেক্স বা যৌন ক্রিয়া করা যায়। এই রমণী শব্দটি রমণ শব্দ থেকে উৎপন্ন, অভিধান অনু্যায়ী যার অর্থ- কেলি, শৃঙ্গার, মৈথুন বা রতিক্রিয়া। খেয়াল করে দেখুন রমণী শব্দের যতগুলো অর্থ সবগুলো দ্বারাই যৌনক্রিয়া বোঝায়, একারণেই যার সাথে বৈধভাবে যৌনক্রিয়া করা হয় বা করা যায় তাকে বলে রমণী, যার অর্থ স্ত্রী।

এই রমণ শব্দের সাথে রাধা যুক্ত করে বানানো হয়েছে রাধারমণ শব্দটি, যার অর্থ রাধার সাথে যিনি রমণ বা যৌনক্রিয়া করেন, তাই তিনি রাধারমণ এবং ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে- এই রাধারমণ শব্দ দ্বারা শ্রীকৃষ্ণকে বোঝানো হয় এবং শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমণ বলে সম্বোধন করে এটা বোঝানো হয় যে, শ্রীকৃষ্ণ রাধার সাথে যৌনক্রিয়া করেছে। কিন্তু শাস্ত্র প্রমাণ দিচ্ছে যে, মূল সংস্কৃত ভাগবত, হরিবংশ, মহাভারত, যা শ্রীকৃষ্ণের প্রামাণ্য জীবনী সেগুলোতে রাধার অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই, তাই কৃষ্ণের সাথে রাধার প্রেম বিয়ে বা যৌনতার কোনো ব্যাপারই নেই। শুধু তাই নয়, শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ছিলেন বিদর্ভের ভীষ্মক রাজার কন্যা রুক্মিণী, যার গর্ভে শ্রীকৃষ্ণ প্রদুম্ন্য নামের এক পুত্রের জন্ম দিয়েছিলেন, এই সূত্রে শ্রীকৃষ্ণকে রুক্মিণীরমন বলা যায়, রাধারমণ বলা যায় না কিছুতেই।

তাহলে শ্রীকৃষ্ণকে যেসব কীর্তনীয়া রাধারমন বলে প্রচার করছে এবং যে সব হিন্দু তা শুনছে এবং বিশ্বাস করছে, তারা সেই কীর্তন গেয়ে বা শুনে পাপ করছে, না পুণ্য করছে ?

শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধার কোনো অস্তিত্ব নেই এবং যে বলা হয়- রাধা, আয়ান ঘোষের স্ত্রী, সে গল্পটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা; কারণ, ঘোষ পদবীর উৎপত্তি মধ্যযুগে, শ্রীকৃষ্ণের যুগে ঘোষ পদবী বলে কিছু ছিলো না; রাধা সম্পর্কিত এই মিথ্যা গল্পটিকে স্বীকার করে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমণ বললেও শ্রীকৃষ্ণকে লম্পট বলেই প্রচার করা হয়, যেহেতু রাধা, শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ছিলো না, সেহেতু শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমণ বলে এটা প্রচার করা হয় যে- রাধার সাথে শ্রীকৃষ্ণ যৌনক্রিয়া করেছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।

সব শেষে বলছি- এই যদি হয় প্রকৃত সত্য, তাহলে শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমণ বলে কেউ কৃষ্ণের সুনাম করছে, না কৃষ্ণের বদনাম করছে ? আর এই প্রচারের ফলে মুসলমানরা যদি শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে কোনো রকম বাজে মন্তব্য করে, তাহলে সেই দোষ কি মুসলমানদের, না আমাদের কিছু বলদা হিন্দুদের ?

প্রশ্ন রইলো আপনার কাছে।

জয় সনাতন।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

বি.দ্র : একটি ফটো পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে রুক্মিণী দেবী ও শ্রীকৃষ্ণ, অনেকে বলে থাকেন, কৃষ্ণের সাথে এটা যে রুক্মিণী, তার প্রমাণ কী ?

যারা এই ধরণের প্রশ্ন করে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনার ঠাকুরদাদার জীবনে যদি দ্বিতীয় কোনো নারীর অস্তিত্ব না থাকে এবং আপনার ঠাকুরদাদার ছবির সাথে যদি কোনো নারীর ছবি থাকে, সেটা যে আপনার ঠাকুরমার ছবি, তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে ?

এই সূত্রে, কৃষ্ণের জীবনে যদি রাধা বা অন্য কোনো নারীর কোনো অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে কেউ যদি কৃষ্ণের ছবির সাথে অন্তরঙ্গভাবে কোনো নারীর ছবি জুড়ে দেয়, সে যে কৃষ্ণের স্ত্রী রুক্মিণী হবে, তাতে কোনো সন্দেহ আছে ? নেই। এইভাবেই কৃষ্ণের সাথে থাকা নারী হলেন কৃষ্ণপ্রিয়া দেবী রুক্মিণী।