এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

ভগবানের চেয়ে কি ভক্ত বড়

 


ভগবানের চেয়ে কি তার নাম বড়, নামের চেয়ে কি ভগবানের ভক্ত বড় ?

যেকোনো হরিবাসর বা হরিসভায় গেলেই শুনবেন, প্রতিটি কীর্তনীয়া মঞ্চে উঠে একবার হলেও বলে- ভগবানের চেয়ে তার নাম বড়, নামের চেয়ে তার ভক্ত বড় ? আর মঞ্চের আশে পাশ বসা নির্বোধ হিন্দুরা সেগুলো বসে বসে গিলতে থাকে। কারো মনে এ বিষয়ে একটি প্রশ্নও উঠে না এবং "ভগবান ও তার নামের চেয়ে তার ভক্ত বড়", একথা শুনে নিজেকে ভগবানের চেয়ে বড় মনে ক'রে আত্মগর্বে ভুগতে থাকে। এভাবে বৈষ্ণব মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হরিবাসরগুলো সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ভুলভাল তথ্য প্রচার ক'রে হিন্দু সমাজকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে হিন্দু সমাজের সর্বনাশ করে যাচ্ছে।

যা হোক, যারা এটা প্রচার করে এবং যারা এটা বিশ্বাস করে যে- "ভগবানের চেয়ে তার নাম বড়, ভগবানের নামের চেয়ে ভগবানের ভক্ত বড়", তাদের কাছে আমার কয়েকটি প্রশ্ন, যদি আপনাদের এত শাস্ত্রজ্ঞান থাকে, তাহলে আমার প্রশ্নগুলো জবাব দিয়ে আমাকে ধন্য করেন।

প্রথম প্রশ্ন- আপনাদের এই তথ্যের সনাতন শাস্ত্রীয় রেফারেন্স কী ?

খেয়াল করবেন, এখানে কিন্তু আমি বলেছি, সনাতন শাস্ত্রীয় রেফারেন্স, তার মানে রেফারেন্স দিতে হবে সনাতন ধর্মীয় কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থ থেকে, ভাগবত বা বৈষ্ণব মতবাদের কোনো গ্রন্থ থেকে নয়। যেহেতু ভগবান শব্দটি সনাতন ধর্মের সাথে যুক্ত এবং ভাগবত বা বৈষ্ণব মতবাদের গ্রন্থগুলো কোনো শাস্ত্রগ্রন্থ নয়।

দ্বিতীয় প্রশ্ন- ভগবান এবং তার নাম কি কোনো আলাদা বিষয় ? কোনো ব্যক্তি এবং তার নাম দ্বারা কী আলাদা কিছু বোঝায় ? কোনো ব্যক্তি বা বস্তু এবং তার নাম একই ভাবকে বোঝায়, আলাদা কোনো ভাবকে নয়; এই সূত্রে ভগবানের চেয়ে ভগবানের নাম কিভাবে বড় ?

তৃতীয় প্রশ্ন - ভগবানের নামের চেয়ে ভগবানের ভক্ত যদি বড় হয়, তাহলে বিপদে আপদে পড়লে ভক্তরা ভগবানের নাম ধরে নিজের উদ্ধারের জন্য ভগবানকে স্মরণ করে কেনো ? ভগবানের চেয়ে ভক্ত যদি বড় হয়, তাহলে ভগবানের চেয়ে ভক্তের ক্ষমতা হয় বেশি। ক্ষমতাবান কেউ কি তার চেয়ে কম ক্ষমতাবান কারো কাছে নত হয় বা প্রার্থনা করে ?

চতুর্থ প্রশ্ন- ভক্ত যে ভগবানের চেয়ে বড়, সেই বড়র মাপকাঠি কী ?

আমি জানি কোনো ইসকনী বা পদাবলী / লীলা কীর্তনীয়ার পাছার ধুতি এত শক্ত করে বাঁধা নয় যে, তারা আমার এই সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে। তাই আমার পাঠক বন্ধুদেরকে বলছি- আপনারা যদি কোনো হরিবাসর অনুষ্ঠানে যান এবং আপনাদের সামনে যদি কেউ এই ধরণের কথা বলে তাকে ডাইরেক্ট উপরের প্রশ্নগুলো দিয়ে চ্যালেঞ্জ করবেন, দেখবেন আসর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে।

মূলতঃ ভগবান এবং তাঁর নাম আলাদা কোনো বিষয় নয়, একই বিষয়। তাই এখানে বড় ছোটর কোনো বিষয়ই নেই; আর ভক্ত কখনো ভগবানের চেয়ে বড় হতে পারে না, ভক্ত চিরদিনই তার আরাধ্যর চেয়ে ছোট, তাই সে ভক্ত। ভক্ত, ভগবানের চেয়ে বড়, এমন কথা শুধু বলা নয়, ভাবাও পাপ, আর এই পাপই সাধারণ হিন্দুদেরকে করাচ্ছে বৈষ্ণব মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত লীলাকীর্তনীয়ারা

ভগবানের চেয়ে ভক্ত বড়, এই কথা বলা আছে ভাগবতের একাদশ স্কন্ধের ঊনবিংশ অধ্যায়ে, যা হাজার প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য এবং অবশ্যই বেদ গীতা বিরোধী। আর যে গ্রন্থ বেদ গীতা বিরোধী কথা বলে সেটা কোনো ভাবেই সনাতন ধর্মের কোনো শাস্ত্রগ্রন্থ হতে পারে না, আর একারণেই ভাগবতকে আমি সনাতন ধর্মীয় কোনো গ্রন্থ মনে করি না।

জয় সনাতন।

সনাতনে বৈজ্ঞানিক বিবর্তনবাদ

 #Subinoy_Saha_Arpita_Dey, আপনাদের প্রশ্নের সমাধান পাবেন নিচের এই প্রবন্ধে-



ঈশ্বরকে সৃষ্টি করেছে কে ?


ইনবক্সে আমাকে একজন প্রশ্ন করেছে, “আমি জানি ভগবান আছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো ভগবানকে কে সৃষ্টি করেছে ?” এই প্রশ্নের উত্তরে সাধারণত অনেকেই যেটা বলে থাকে, তা হলো- “ঈশ্বরকে কেউ সৃষ্টি করে নি, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে।” আমিও যাতে এই কথা না বলে আমার দায়িত্ব শেষ না করি, সেজন্য সে প্রশ্নের সাথেই শর্ত জুড়ে দিয়েছে যে, ওটা আমি শুনতে চাই না, যুক্তিসঙ্গত একটা বড় পোস্ট চাই।


ঈশ্বরকে কে সৃষ্টি করেছে ? এই প্রশ্নের উত্তর- “ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে।” এই এক বাক্যের উত্তর ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ বিস্তারিত কোনো উত্তর দিতে পারে নি, সেটা আমি জানি। তবু আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো, দেখি ঈশ্বর আমাকে দিয়ে কী বলায় ?


সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে নাস্তিকদের একটা সিদ্ধান্ত হলো- ঈশ্বর, ভগবান, আল্লা বা গড বলে কেউ নেই; এই পৃথিবী বা মহাবিশ্ব একটি নিয়মের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এবং এই পৃথিবীর সকল কিছুর স্রষ্টা প্রকৃতি, এই হিসেবে নিরীশ্বরবাদীরা প্রকৃতিকেই ঈশ্বর হিসেবে মানেন। একেই বলে নাস্তিক্যবাদ, আর নাস্তিক্যবাদও সৃষ্টিকর্তা হিসেবে কাউকে মানে, কিন্তু সেটা তাদের মতে সপ্ত আসমান বা উর্ধ্ব আকাশে বসে থাকা কোনো সর্বশক্তিমান নয়, সেটা এই প্রকৃতি, আমাদের চারপাশের জগৎ।


আমরা জানি, মোটামুটি ৪৫০ কোটি বছর আগে সূর্য থেকে আমাদের এই পৃথিবী এবং আমাদের এই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহের সৃষ্টি। সূর্য থেকে আমাদের এই পৃথিবীর যখন জন্ম, তখনই পৃথিবী ৯৪টি মৌলিক পদার্থ (উইকিপিডিয়া মতে) সূর্য থেকে লাভ করেছে। তার মানে জন্ম সূত্রে আমাদের এই পৃথিবীর সম্পদ হলো শুধু মাত্র মৌলিক পদার্থগুলো। পরে এই মৌলিক পদার্থগুলো একটার সাথে একটা মিশ্রিত হয়ে একের পর এক তৈরি করেছে নানা রকমের যৌগিক পদার্থ; যেমন- জল, লবন, চিনি ইত্যাদি। আবার এভাবেও বলা যায়, পৃথিবীর সব যৌগিক পদার্থ ভাঙলে পাওয়া যাবে শুধু ঐ ৯৪টি মৌলিক পদার্থই। যেমন- বাংলায় লিখিত যেকোনো বই এর শব্দগুলো বিশ্লেষণ করলে শুধু ৫০ টি বাংলা বর্ণ ই পাওয়া যাবে, যদিও সেই বইয়ে থাকতে পারে হাজার হাজার বা লাখ লাখ শব্দ, কিন্তু সেই শব্দগুলো শুধু মাত্র ৫০ টি বর্ণেরই বিভিন্ন ধরণের মিশ্রণ। একইভাবে যত জটিল যৌগিক পদার্থই থাক না কেনো, সেগুলোকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যাবে শুধু মাত্র ৯৪টি ই মৌলিক পদার্থ। সহজ ভাষায় বললে, এই ৯৪টি মৌলিক পদার্থ দিয়েই তৈরি- মানুষ, গরু, হাঁস মুরগী, ছাগল, চেয়ার টেবিল, পাহাড়, জল, বাতাস সবকিছু। যেহেতু প্রকৃতিতেই এগুলো সব পাওয়া যায় এবং প্রকৃতিতে এগুলোর মিশ্রণেই বিভিন্ন বস্তুর বা প্রাণীর সৃষ্টি হয় বা হয়েছে, সেহেতু প্রকৃতিই আমাদেরকে সৃষ্টি করেছে এবং প্রকৃতিই আমাদের স্রষ্টা, নিরীশ্বরবাদীদের এই মত বা সিদ্ধান্ত কিন্তু একেবারে ফেলনা বা মিথ্যা নয়, কিন্তু খুব সাধারণ এবং অল্প চিন্তা শক্তিসম্পন্ন মানুষদের জন্য এই থিয়োরি প্রযোজ্য নয়, তাদের জন্য সহজ থিয়োরি হলো- উপরে একজন সৃষ্টিকর্তা আছে, তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; ব্যস, সব ল্যাঠা চুকে গেলো, ব্রেইনকে আর চাপ সহ্য করতে হলো না।


কোনো এক অলৌকিক সৃষ্টিকর্তাকে ভিত্তি করে, সাধারণ মানুষকে, সহজ ভাবে সৃষ্টিতত্ত্ব বোঝানোর জন্যই তৈরি হয়েছিলো ধর্মের। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু বিজ্ঞান বলছে সাত আসমান বলে কিছু নেই এবং তার উপরে আল্লা নামে কেউ বসেও নেই এবং মহাবিশ্ব এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না দোযখ-বেহেশতের, সেহেতু সর্বশক্তিমান ব’লে একক কোনো ঈশ্বর নেই; এছাড়াও প্রত্যেকটা পদার্থের যেহেতু কিছু না কিছু ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য আছে, সেহেতু সেই পদার্থগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং শক্তির উপর নির্ভর করেই চলছে পৃথিবী বা মহাবিশ্ব; এটাই নিরীশ্বরবাদীদের শেষ কথা।


বিজ্ঞান, আদম-হাওয়া বা মনু-শতরুপার মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির থিয়োরিকে অস্বীকার ক’রে এবং বলে, বিবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের উদ্ভব। কিন্তু এই কথা বললেই, ধর্মবাদীরা চেপে ধরে বলে যে, তাহলে বলেন, পৃথিবীতে কিভাবে মানুষের সৃষ্টি বা মানুষ এলো কিভাবে ? কিন্তু যারা এই প্রশ্ন করে, তাদের কাছে এই থিয়োরি বলা এজন্য মুশকিল যে, তাদের মস্তিষ্ক্য এই থিয়োরিকে ধারণ করবার মতো উপযুক্ত নয়, তাই তাদের কাছে এগুলো বললে শুধু নানা উল্টা পাল্টা প্রশ্নেরই সম্মুখীন হতে হয় এবং যেহেতু তারা ধর্মীয় থিয়োরিতে বিশ্বাসী, তাই শত যুক্তি দিলেও তাদের সেই বিশ্বাসকে টলানো যায় না; কারণ, এই বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করা মানেই- উর্ধ্ব আকাশে বসে থাকা কোনো এক ঈশ্বরের উপর ভিত্তি করে যে ধর্ম, সেই ধর্ম বিশ্বাসের সমাপ্তি; এটা অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসের লোকেদের কাছে তেমন মারাত্মক কিছু না হলেও মুসলমানদের কাছে এক ভয়াবহ ব্যাপার; কারণ, তাদের কাছে ধর্মের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না, এমন কি নিজের জীবনও নয়; তাই তো জঙ্গীরা আল্লাহু আকবার বলে নিজের অমূল্য জীবনকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে পারে!


এটা সত্য যে, পৃথিবীর বাইরে, পৃথিবীর জীব জগতকে নিয়ন্ত্রণকারী কোনো একক শক্তি, যাকে আমরা অল্পজ্ঞান বা পৈতৃক বিশ্বাসের প্রভাবে ব’লে থাকি ঈশ্বর বা আল্লা, তার কোনো অস্তিত্ব নেই, পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে তা পৃথিবীর শক্তিগুলোর সমন্বয়েই ঘটছে। তাহলে এখানে একটা প্রশ্ন আসে যে, এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে কে ? যখন আপনি এই প্রশ্নের বিজ্ঞান সম্মত উত্তর জানবেন না, তখনই মানসিক শান্তির জন্য আপনাকে ধরে নিতে হবে যে, উর্ধ্ব আকাশে কোনো এক সৃষ্টিকর্তা আছে, যে সব কিছুকে বানিয়েছে এবং সে ই সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে।


আদম হাওয়া বা মনু শতরুপার মাধ্যমে পৃথিবীতে যদি মানুষ সৃষ্টি না হয়, তাহলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে- এই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি হলো বা এলো কিভাবে ? শুরুতেই বলেছি, পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভব হয়েছে বিবর্তনের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, তাই মানুষ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে, সেটা না ব’লে প্রথমেই ব’লে নেওয়া দরকার, পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম কোথা থেকে এবং কিভাবে হলো ?


একটু আগেই বলেছি, ৯৪ টি মৌলিক পদার্থ নিয়ে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে। সূর্য থেকে যেহেতু পৃথিবীর সৃষ্টি, সেহেতু পৃথিবী প্রথমে আগুনের মতো ছিলো, পরে আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হওয়ায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মিশ্রনে তৈরি হয়েছে জল এবং অন্যান্য গ্যাসীয় মৌলিক পদার্থগুলো মিশ্রিত হয়ে সৃষ্টি করেছে বাতাস এবং বাকি পদার্থগুলো একত্রিত হয়ে তৈরি হয়েছে মাটি। এই অবস্থায়- মাটি ও জল থাকতে থাকতে কমপক্ষে ১০০ কোটি বছর পর, মাটি ও জলের মিলন স্থানে আরও কিছু মৌলিক পদার্থ একটার সাথে একটা মিশ্রিত হতে হতে প্রথম তৈরি হয়েছে এককোষী জীব, যার নাম এ্যামিবা। যারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন, তারা আমার কথা ভালো বুঝতে পারবেন।

এই এক কোষী প্রাণী বা জীব একটা আজব জিনিস, এরা এতো ছোট যে, খালি চোখে এদেরকে দেখা যায় না। শুধু তাই নয়, এদের দেহে মাত্র একটি কোষ থাকে ব’লে, যখন যা করার দরকার হয়, তখন সেই অনুযায়ী এর অঙ্গ তৈরি হয়, যেমন যখন খাবারের প্রয়োজন হয়, তখন তৈরি হয় মুখ; আর যখন সাঁতরানোর দরকার হয় তখন মুখ মিলিয়ে গিয়ে দেহে তৈরি হয় হাত পা; আবার হাত পা মিলিয়ে গিয়ে মল ত্যাগের জন্য তৈরি হয় পায়ু। এককোষী জীবের জীবনযাত্রা এইরকম ই।


ব্যাপারটি এমন- সংসারে যদি মাত্র একজন মানুষ থাকে, এই একজন মানুষকেই, তার বেঁচে থাকার যাবতীয় কাজ করতে হয়; কখনো তাকে রান্না করতে হয়, কখনো হাটবাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয়, কখনো চাকরি বা ব্যবসা করে তাকে টাকা রোজগার করতে হয়; কিন্তু যখনই সে বিয়ে করে, তখন তার রান্নার দায়িত্বটা নেয় তার স্ত্রী, যখন তার সন্তান হয়, সেই সন্তান তার বাজার বা অন্যান্য কাজের দায়িত্ব নেয়, এভাবে পরিবারের লোকজন বাড়লে যেমন দায়িত্ব ভাগ হয়ে যায়, তেমনি অনেকগুলো এক কোষী প্রাণী যখন একত্রে যুক্ত অবস্থায় থাকতে শুরু করলো, তখন কেউ নিলো মুখের কাজের দায়িত্ব, তার কাজ শুধু খেয়ে যাওয়া; আর কেউ নিলো হাত পায়ের দায়িত্ব, তার কাজ বিপদ দেখলে ছুটে পালানো এবং এইরকম আরও নানা কাজ। জীবন যাপনের সুবিধার জন্য বহু মানুষ একত্রিত হয়ে যেমন সমাজের সৃষ্টি করেছে, তেমনি প্রাণীজগতে টিকে থাকার সুবিধার জন্য অনেকগুলো এককোষী প্রাণী পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি বহুকোষী প্রাণীর উদ্ভব ঘটিয়েছে।


যারা- এককোষী, বহুকোষীর ব্যাপারটা এখনও বোঝেন নি; তাদের জন্য বলছি, আমরা যেসব প্রাণীকে খালি চোখে দেখতে পাই, তাদের প্রত্যেকটা লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি এককোষী প্রাণীর সমষ্টি। সহজ কথায়, যে প্রাণীর দেহ যত বড়, তার দেহে কোষের সংখ্যা তত বেশি; আর এই প্রত্যেকটা কোষ এক একটা প্রাণ এবং এই সকল প্রাণের সমন্বিত রূপ ই হলো একেকটা বৃহৎ আকারের বহুকোষী প্রাণী; যারা শত শত কোটি বছর ধরে একত্রে থাকতে থাকতে একদেহে পরিণত হয়েছিলো এবং তারপর সেই প্রাণী বিবর্তিত হতে হতে এবং নিজেদের সন্তান জন্ম দিতে দিতে বহু প্রজাতির প্রাণী সৃষ্টি করেছিলো এবং বহুকোষী দেহে যে যার দায়িত্ব পালন করতে করতে নিজেদের স্বাতন্ত্র্যতা হারিয়েছে, তাই একটা কোষকে যদি এখন কোনো বহুকোষী দেহ থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়, একলা বেঁচে থাকার দীর্ঘদিনের অনভ্যস্ততা হেতু, সে আর বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারবে না; যেমন- সমাজ থেকে বিচ্যুত হয় কোনো লোক একলা বেঁচে থাকতে পারে না।


প্রত্যেকটা প্রাণীর দেহের- চামড়া, মাংস হলো কোষ এবং হাড়গুলো হলো ক্যালসিয়াম। আগেই বলেছি, প্রত্যেকটা কোষ একেকটা প্রাণ, এই সকল প্রাণ মিলিত হয়ে বহুকোষী জীবদেহে তৈরি হয় একটা সেন্ট্রাল প্রাণ, যা স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রত্যেকটা কোষের সাথে যুক্ত থাকে এবং সেই সেন্ট্রাল প্রাণটি নিয়ে তৈরি হয় ঐ প্রাণীটির মাথা। তাই কোনো প্রাণীর মাথা কেটে ফেললে, সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রাণীর সেন্ট্রাল প্রাণের সাথে দেহের অন্যান্য কোষের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায়, দেহের অন্যান্য কোষগুলো আস্তে আস্তে মরতে থাকে, এজন্যই কোনো প্রাণীকে জবাই করার পরও দেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে কিছুক্ষণ শক্তি থাকে এবং সেই শক্তিতে তারা ছটফট করতে থাকে এবং আস্তে আস্তে যখন সব কোষ মরে যায়, তখন প্রাণীটি নিস্তেজ হয়ে যায় এবং তার সম্পূর্ণ মৃত্যু ঘটে।


প্রতিটি প্রাণীর মাথা যেহেতু তার সেন্ট্রাল প্রাণকেন্দ্র হিসেবে তৈরি, তাই মাথা কাটলে সেই প্রাণীর দ্রুত মৃত্যু হয় এবং অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাটলে সাধারণত মৃত্যু হয় না।


বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা জানি যে, প্রথম প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিলো জলে, সেই প্রাণ আর কিছুই নয় এককোষী প্রাণী এ্যামিবা। এই এককোষী প্রাণী এ্যামিবারা জলের মধ্যে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে একটার সাথে আরেকটা যুক্ত হতে হতে তৈরি হয় নানা ধরণের জলজ প্রাণী, (যেটা উপরেও বলেছি); তারপর শত্রুর হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে, দ্রুত সাঁতরানোর জন্য দেহের ভেতরে থাকা ক্যালসিয়ামগুলো সেই সব জলজ প্রাণীর দেহের ভেতর সৃষ্টি করে কাঁটা, উদ্ভব হয় প্রথম মাছ; সৃষ্টির এই স্তরের স্মরণ, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং স্বীকৃতির জন্য হিন্দু ধর্মের প্রথম অবতার হলো মৎস্য অবতার।


ক্যালসিয়ামের মাধ্যমে দেহের মধ্যে কাঁটা সৃষ্টির করে জলের মধ্যে লড়াইয়ে কিছু প্রাণী নিজেদের জন্য সুবিধা সৃষ্টি করতে পারলো, আর কিছু প্রাণী তা পারলো না; যারা দেহের মধ্যে ক্যালসিয়ামের সমন্বয়ে কাঁটা সৃষ্টি করে নিজেদেরকে শক্তিশালী করতে পারলো না, তারা কোনোভাবে দেহের উপরে ক্যালসিয়ামের শক্ত আবরণ তৈরি করতে সক্ষম হলো, এই ভাবেই উদ্ভব হলো কাঁকড়া, চিংড়ি মাছ বা কচ্ছপের মতো প্রাণী; এভাবে কয়েক শ কোটি বছরে জলের ভেতরে প্রভূত প্রাণী সৃষ্টি হওয়ায় সেখানে খাদ্য সংকট থেকে বাঁচতে এবং শিকার হয়ে অন্যের পেটে যাওয়ার সম্ভাবনা কমাতে কিছু প্রাণী গভীর জলে বাস করা বাদ দিয়ে জল ও স্থলের সংযোগ স্থলে থাকতে আরম্ভ করে এবং এভাবে উদ্ভব হলো কিছু উভচর প্রাণী। সৃষ্টির এই স্তরের স্মরণ, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং স্বীকৃতির জন্য হিন্দু ধর্মের দ্বিতীয় অবতার হলো উভচর প্রাণী কচ্ছপ বা কূর্ম অবতার।


জল ও স্থলের মাঝে থাকতে থাকতে কিছু প্রাণী এমন সুবিধা সৃষ্টি করতে সক্ষম হলো, যাতে তারা চতুর্ভূজী হয়ে স্থলেই থাকতে এবং চলাফেরা করতে সক্ষম হলো; এমন সব প্রাণী স্তরের স্মরণ, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং স্বীকৃতির জন্য হিন্দু ধর্মের তৃতীয় অবতার হলো স্থলজ চতুর্ভূজ প্রাণী শুকর বা বরাহ অবতার।


এই স্থলজ চতুর্ভূজ প্রাণী বিবর্তিত হতে হতে নানা রকম চতুর্ভুজ প্রাণীর সৃষ্টি হলো এবং বানর শিম্পাঞ্জীর মতো চতুর্ভুজ প্রাণীগুলো আস্তে আস্তে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে চলার চেষ্টা করে দ্বিপদ প্রাণীর দিকে অগ্রসর হতে লাগলো, এই আধা মানুষ এবং আধা প্রাণীর সম্মিলিত রূপই হলো হিন্দু ধর্মের চতুর্থ অবতার নৃসিংহ; যা মানুষ এবং চতুর্ভূজ প্রাণী সিংহের সমন্বিত রূপ।


বানর, শিম্পাঞ্জীর চার হাত পায়ে চলার পরিবর্তে দ্বিপদ হওয়ার চেষ্টা থেকে উদ্ভব হলো সম্পূর্ণ দুই পায়ে দাঁড়ানো প্রাণী মানুষ, যা অপেক্ষাকৃত খর্বাকৃতির, যার অবতারিক স্বীকৃতি হলো বামন, যিনি হিন্দু ধর্মের পঞ্চম অবতার। খোঁজ নিলে জানত পারবেন, পৃথিবীতে প্রথম উদ্ভাবিত মানুষের উচ্চতা ছিলো মাত্র ৪ ফুট, যার বামন অবতার তত্ত্বকে সাপোর্ট করে। এখানে আর একটু বলে রাখি, অনেকেই বামনকে ব্রাহ্মণের সাথে গুলিয়ে ফেলেন, আসলে তা নয়, বামন মানে Short বা খাটো। অনেকেই জানেন যে, বামন অবতারের তিন পা, এর মানে হলো, মানুষ দুই পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তখনও সম্পূর্ণ সফল হয় নি, তাই তার দাঁড়ানোর জন্য অন্য কিছুর সাপোর্ট লেগেছে।


যা হোক, খাটো আকারের মানুষের উদ্ভবের পর বনের পশুদের সাথে লড়াই ক’রে শিকার ধরে মানুষকে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো, এই স্তরটি ছিলো প্রস্তর যুগ অর্থাৎ এই সময় কেবল মানুষ হাতিয়ার বানাতে শিখছে; বনের হিংস্র পশুদের সাথে লড়াই করার জন্য এবং গাছপালা কেটে মানুষের বসবাস উপযোগী বাসস্থান বানাতে মানুষের সেই স্তরের প্রতীক হলো কুঠার বা পরশু। এজন্য, এই স্তরের স্মরণ, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং স্বীকৃতির জন্য হিন্দু ধর্মের ৬ষ্ঠ অবতার হলো কুঠার বা পরশুধারী ভগবান পরশুরাম।


এর পরের অবতার হলো রাম, যখন মানুষ বসবাসের জন্য ঘর বাড়ি তৈরি করতে পারলেও, শিকারই ছিলো জীবিকার প্রধান বিষয় এবং তখন শিকার ধরতে মানুষকে আর পাথরের তৈরি কুড়াল বা বর্শা জাতীয় অস্ত্রের উপর আর নির্ভর করতে হতো না, কারণ মানুষ আবিষ্কার করেছিলো তীর ধনুক; এজন্যই রামের প্রধান অস্ত্র তীর এবং তাকে জীবনের অনেকটা সময় বনে বাস করতে হয়েছে এবং বনের পশু শিকার করে জীবন ধারণ করতে হয়েছে।


রামের পরের অবতার হলো বলরাম, যার অস্ত্র হলো লাঙ্গল, এটা আর কিছুই নয়, কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতীক।


এই ভাবে সৃষ্টির বিবর্তনের সাথে সাথে অবতারদেরও বিবর্তন হতে থাকে এবং বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি প্রক্রিয়া যখন মোটামুটি পূর্ণতা পায়, তখন পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন প্রকৃতি রূপ ঈশ্বরের পূর্ণ অবতার শ্রীকৃষ্ণ। এখন স্মরণ করুন সেই কথা, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে, ঈশ্বর আসলে নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে এইভাবে। এখানে প্রকৃতিই সৃষ্টিকর্তা এবং এই প্রকৃতি ই তার প্রয়োজন অনুসারে যেমন বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রাণী সৃষ্টি করেছে, যারা ক্ষমতায় কেউ তুচ্ছ বা কেউ বিশাল, তেমনি প্রকৃতি ই তার পূর্ণ শক্তির প্রকাশ হিসেবে সৃষ্টি করেছে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে, এভাবেই ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ এভাবেই ঈশ্বর নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছেন।


এখন বিজ্ঞান যেটা বলছে যে, পৃথিবীর বাইরে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রক কোন আল্লা বা সৃষ্টিকর্তা নেই; এটা কিন্তু একদম ঠিক; কারণ, বিজ্ঞান মতে- প্রকৃতিই তার নিয়মানুসারে সবকিছু সৃষ্টি করে থাকে, প্রকৃতির এই নিয়ম মেনেই প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বরকে মানবরূপে যার নাম শ্রীকৃষ্ণ। এর মানে হচ্ছে বিজ্ঞানের সাথে হিন্দু শাস্ত্রের কোনো সংঘর্ষ নেই, বরং হিন্দু শাস্ত্রকে ব্যাখ্যা করলেই পাওয়া যাচ্ছে বা যাবে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা করা বিবর্তনের স্তরগুলো, যেটা উপরে আলোচনা করলাম।


সেমেটিক ধর্মীয় মতবাদগুলো, যেমন- ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং ইসলাম, এদের মতে সৃষ্টিকর্তা বা গড থাকে পৃথিবীর বাইরে কোথাও, যেটা বিজ্ঞান স্বীকার করে না। কিন্তু হিন্দু ধর্মের ঈশ্বর প্রকৃতি থেকেই সৃষ্টি হন এবং এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, যখন প্রয়োজন হবে, তখন আবার আবির্ভূত হবেন। তার মানে হিন্দুদের ঈশ্বর কিন্তু বাস্তবভাবে প্রমাণিত, কিন্তু অন্যান্য ব্যক্তিমতের ধর্মের সৃষ্টিকর্তা প্রমানিত নয়, সেটা জাস্ট বিশ্বাস যে কেউ একজন আছে, আর বিশ্বাস তাকে বা সেই বস্তুকেই করতে হয়, যেটা আসলে নেই। যেমন আপনার বাড়ি কোথায় আছে, সেটা কিন্তু আপনি জানেন, তাই বাড়ি আছে কি নেই, সেটা কিন্তু আপনার বিশ্বাস করার দরকার নেই। এজন্যই হুমায়ূন আজাদ বলেছেন, ‘সব বিশ্বাসই অপবিশ্বাস’। তার মানেই হলো, যা আছে তা বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই, যা নেই তাকেই বিশ্বাস করতে হয়।

ইহুদি, খ্রিষ্টান, মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছে, এজন্যই তাদের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। কিন্তু হিন্দুদের ভগবান পৃথিবীতে এসে সরাসরি প্রমান করে দিয়ে গেছেন যে, তিনি আছেন এবং তিনি ই ঈশ্বর; তাই এটা কোনো বিশ্বাসের ব্যাপার নয়, এটা অনুধাবন বা ফিল করার বিষয়।


জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ

শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩

রাধারমন পেছনে যা লুকিয়ে

 


শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম কি রাধারমন ?

আমি মাঝে মাঝে কীর্তন শুনি, তো একদিন এক কীর্তনে শুনলাম, গাইছে-

"গোবিন্দ বলো হরি, গোপালও বলো, রাধারমনও হরি গোবিন্দ বলো"

সঙ্গে সঙ্গে কীর্তন বন্ধ করলাম এবং ভাবলাম, কী নির্বোধ এরা, তথা হিন্দুরা ? সনাতন ধর্মের পরম পুরুষ পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে এরা যে কী খারাপভাবে সম্বোধন করছে, সেটা তারা নিজেরাই জানে না বা বোঝে না। যদি জানতো বা বুঝতো, তাহলে তারা শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমন বলে সম্বোধন করতো না। কারণ, এই "রাধারমন" শব্দটাই ভয়াবহরকমভাবে অশ্লীল বা আপত্তিকর, যা আমার এই প্রবন্ধের আলোচনা শেষে সকলে বুঝতে পারবেন বলে আশা করছি।

অভিধান অনুযায়ী রমণী শব্দের অর্থ পত্নী বা স্ত্রী, এককথায় বউ, যার সাথে সমাজস্বীকৃত বৈধ পন্থায় সেক্স বা যৌন ক্রিয়া করা যায়। এই রমণী শব্দটি রমণ শব্দ থেকে উৎপন্ন, অভিধান অনু্যায়ী যার অর্থ- কেলি, শৃঙ্গার, মৈথুন বা রতিক্রিয়া। খেয়াল করে দেখুন রমণী শব্দের যতগুলো অর্থ সবগুলো দ্বারাই যৌনক্রিয়া বোঝায়, একারণেই যার সাথে বৈধভাবে যৌনক্রিয়া করা হয় বা করা যায় তাকে বলে রমণী, যার অর্থ স্ত্রী।

এই রমণ শব্দের সাথে রাধা যুক্ত করে বানানো হয়েছে রাধারমণ শব্দটি, যার অর্থ রাধার সাথে যিনি রমণ বা যৌনক্রিয়া করেন, তাই তিনি রাধারমণ এবং ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে- এই রাধারমণ শব্দ দ্বারা শ্রীকৃষ্ণকে বোঝানো হয় এবং শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমণ বলে সম্বোধন করে এটা বোঝানো হয় যে, শ্রীকৃষ্ণ রাধার সাথে যৌনক্রিয়া করেছে। কিন্তু শাস্ত্র প্রমাণ দিচ্ছে যে, মূল সংস্কৃত ভাগবত, হরিবংশ, মহাভারত, যা শ্রীকৃষ্ণের প্রামাণ্য জীবনী সেগুলোতে রাধার অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই, তাই কৃষ্ণের সাথে রাধার প্রেম বিয়ে বা যৌনতার কোনো ব্যাপারই নেই। শুধু তাই নয়, শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ছিলেন বিদর্ভের ভীষ্মক রাজার কন্যা রুক্মিণী, যার গর্ভে শ্রীকৃষ্ণ প্রদুম্ন্য নামের এক পুত্রের জন্ম দিয়েছিলেন, এই সূত্রে শ্রীকৃষ্ণকে রুক্মিণীরমন বলা যায়, রাধারমণ বলা যায় না কিছুতেই।

তাহলে শ্রীকৃষ্ণকে যেসব কীর্তনীয়া রাধারমন বলে প্রচার করছে এবং যে সব হিন্দু তা শুনছে এবং বিশ্বাস করছে, তারা সেই কীর্তন গেয়ে বা শুনে পাপ করছে, না পুণ্য করছে ?

শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধার কোনো অস্তিত্ব নেই এবং যে বলা হয়- রাধা, আয়ান ঘোষের স্ত্রী, সে গল্পটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা; কারণ, ঘোষ পদবীর উৎপত্তি মধ্যযুগে, শ্রীকৃষ্ণের যুগে ঘোষ পদবী বলে কিছু ছিলো না; রাধা সম্পর্কিত এই মিথ্যা গল্পটিকে স্বীকার করে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমণ বললেও শ্রীকৃষ্ণকে লম্পট বলেই প্রচার করা হয়, যেহেতু রাধা, শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ছিলো না, সেহেতু শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমণ বলে এটা প্রচার করা হয় যে- রাধার সাথে শ্রীকৃষ্ণ যৌনক্রিয়া করেছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।

সব শেষে বলছি- এই যদি হয় প্রকৃত সত্য, তাহলে শ্রীকৃষ্ণকে রাধারমণ বলে কেউ কৃষ্ণের সুনাম করছে, না কৃষ্ণের বদনাম করছে ? আর এই প্রচারের ফলে মুসলমানরা যদি শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে কোনো রকম বাজে মন্তব্য করে, তাহলে সেই দোষ কি মুসলমানদের, না আমাদের কিছু বলদা হিন্দুদের ?

প্রশ্ন রইলো আপনার কাছে।

জয় সনাতন।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

বি.দ্র : একটি ফটো পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে রুক্মিণী দেবী ও শ্রীকৃষ্ণ, অনেকে বলে থাকেন, কৃষ্ণের সাথে এটা যে রুক্মিণী, তার প্রমাণ কী ?

যারা এই ধরণের প্রশ্ন করে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনার ঠাকুরদাদার জীবনে যদি দ্বিতীয় কোনো নারীর অস্তিত্ব না থাকে এবং আপনার ঠাকুরদাদার ছবির সাথে যদি কোনো নারীর ছবি থাকে, সেটা যে আপনার ঠাকুরমার ছবি, তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে ?

এই সূত্রে, কৃষ্ণের জীবনে যদি রাধা বা অন্য কোনো নারীর কোনো অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে কেউ যদি কৃষ্ণের ছবির সাথে অন্তরঙ্গভাবে কোনো নারীর ছবি জুড়ে দেয়, সে যে কৃষ্ণের স্ত্রী রুক্মিণী হবে, তাতে কোনো সন্দেহ আছে ? নেই। এইভাবেই কৃষ্ণের সাথে থাকা নারী হলেন কৃষ্ণপ্রিয়া দেবী রুক্মিণী।