এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

✅সনাতন বেদ বনাম ইসলাম কোরআন কোনটি ঈশ্বর প্রদত্ত - পর্বঃ---১ ⤵

আল্লাহর নামের সহিত আরম্ভ; তিনি ক্ষমাকারী এবং দয়ালু। "মঞ্জিল ১। সিপারা ১। সুরত ১।↕
সমীক্ষক --- মুসলমানেরা বলেন যে, কোরআন খুদার বানী। কিন্তু এই বচন হইতে জানা যাইতেছে যে ইহার উপর রচিয়তা আছে। কারন ইহা পরমেশ্বর রচিত হইলে "আল্লাহের নামের সহিত আরম্ভ " বলা হইত না। "মনুষ্যদের প্রতি উপদেশের জন্য আরম্ভ" বলা হইত। যদি মনে করা হয় আল্লাহ মনুষ্যদিগকে উপদেশ দিতেছেন, তুমি এইরূপ বল " তাহা হইলেও সঙ্গত হয় না: কারন তাহাতে পাপের আরম্ভও খুদার নামে হইবে এবং তাঁহার নাম কলঙ্কিত হইবে।
যদি তিনি ক্ষমাকারী এবং দয়ালু হন,
তাহা হইলে তিনি তাঁহার সৃষ্টিতে মনুষ্যদের সূখের জন্য অন্য প্রাণীদিগকে দারুন কষ্ট দিয়া হত্যা করিয়া মাংসভোজনের আদেশ দিলেন কেন? ঐ সকল প্রাণী কি নিরাপদ নহে? তাহারা কি ঈশ্বর সৃষ্ট নহে?
পরমেশ্বরের নামে উত্তম কর্মের আরম্ভ" কুকর্মের নহে, এইরূপ বলাই উচিত ছিলস। পূর্বোক্ত বাক্যে অসঙ্গতি কেননা চৌর্য্য, লাম্পট্য এবং মিথ্যাভাষণ প্রভৃতি পাপকর্মের আরম্ভও কি পরমেশ্বরের নামের সহিত করিতে হইবে?
বোধ হয় এই কারনেই মুসলমাস কসাইরা কন্ঠচ্ছেদ করিবার সময়ও 'বিস্মিল্লাহ" ইত্যাদি পাঠ করিয়া থাকে। উক্ত বচনের ইহাই অর্থ মনে করিয়া মুসলমানেরা কুকর্মের আরম্ভও আল্লাহর নাম লইয়া থাকে। মুসলমানদের খুদা দয়ালুও হইবেন না। কারন পূর্বোক্ত প্রাণীদের প্রতি তাঁহার দয়া রইলো কোথায়? উক্ত বাক্যের অর্থ যদি মুসলমানরা না জানেন, তাহা হইলে এ বাক্যের প্রকাকাশ ও বৃথা ; যদি অন্য কোন অর্থ করেন, তবে সেই প্রকিত অর্থ কি?..।
আরো অনেক যুক্তিগত ভাবেই কোরআন ঈশ্বর প্রদত্ত হইতে পারেনা তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখেনা।
যাই হোক এতোক্ষণ সাধারন যুক্তি দিয়েই কোরআন এর বাণী কোন ঈশ্বর প্রদত্ত না তা প্রমান হলো এবং সেই সাতে সনাতন বেদ ঈশ্বর প্রদত্ত তাহাঁর প্রমান আমি তুলে ধরবো, খুব অল্পতেই লিখে।
লিখলে লিখে শেষ করা যায়না তেমনি তর্কেও জয় পাওয়া যায়না যদি না তুমি বুঝতে সক্ষম হও।
এবার আসি সনাতন বেদ?
===================
ইহা বিচারণীয় যে, মানব জ্ঞানের আদিস্রোত কি ঈশ্বর? যদি হয় তবে ঈশ্বরীয় জ্ঞান কেবল বেদ ই, অন্য গ্রন্থ নয়? এই প্রশ্ন সমাধানের জন্য আমাদের ঈশ্বর, জ্ঞান এবং বেদ এই তিন শব্দের অর্থ অনুধাবন করা প্রয়োজন । ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা, সর্বাধার, সর্বব্যাপক, সচ্চিদানন্দ, অজর, অমর, নিত্য পবিত্র আদি গুণ দ্বারা পূঁর্ণ সত্তা। জ্ঞান সত্য, শাশ্বত নিয়ম, সৃষ্টি নিয়মাকুল , সর্বহিতকারী মানবমাত্রের জন্য এক সমান ব্যবহার্য্য, প্রমাণ এবং তর্ক দ্বারা সিদ্ধ পক্ষপাত রহিত বিদ্যা। বেদ যা সমস্ত বিদ্যার ভান্ডার এবং আদিমূল। বৈদিক ধর্মের সমস্ত মত এবং সম্প্রদায়ের আদিস্রোত বেদই।
মানবের সৃষ্টিকাল থেকে আজ পর্যন্তের ইতিহাস স্পস্ট করেছে যে, মনুষ্য মূলভূত জ্ঞান অর্জন করতে পারতো না। কারন জ্ঞান দুই প্রকার - এক নৈমিত্তিক বা মূলভূত জ্ঞান এবং দ্বিতীয় নৈসর্গিক বা স্বাভাবিক জ্ঞান। নৈমিত্তিক জ্ঞান একদম মূল যাহা বিনা জ্ঞান বিকশিত হতে পারে না। যেমন গণিতের সংখ্যা এক দুই আদি বিনা গণিত বা ভৌতিক বিজ্ঞানের কোন ক্ষেত্র বা বিকাশ সম্ভব নয়। সমস্ত ভৌতিক বিজ্ঞানের আত্মা গণিত এবং ইহা বিশ্ববিখ্যাত এবং সর্বমান্য যে গণিত বিজ্ঞানের মূল আধারভূত সংখ্যা বেদ এবং বৈদিক গণিত বিজ্ঞান থেকে উদ্ভুত হয়েছে। স্বাবাবিক জ্ঞান মনুষ্যের মধ্যে জন্ম থেকেই হয়। ইহা জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং কর্মেন্দ্রিয়ের ব্যবহারের সাথে সমন্ধিত। মানুষ প্রশিক্ষন দ্বারা নৈমেত্তিক জ্ঞান প্রাপ্ত হবার পর স্বাধ্যায়, চিন্তন, মনন, অভ্যাস দ্বারা বিদ্যার উন্নতি করতে পারে।
আস্তিক জগতে কিছু লোক যারা জ্ঞানের আদিস্রোত ঈশ্বর কে মানে না। এরূপ লোককে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ১। সত্ অসত্ বিবেকবাদী ২। প্রকৃতিবাদী ৩। সামাজিক বিকাসবাদী।
প্রথম বর্গের লোকের মত এই যে পরমেশ্বর আমাদের সত্য - অসত্য, ধর্ম - অধর্মের নির্ণয় করার জন্য চেতনা বা চেতনাত্মা দিয়েছে যা দ্বারা আমরা নিজ কর্তব্য অকর্তব্যের স্বয়ং নির্ধারন করতে পারি । এই তর্ক নৈমিত্তিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে সঠিক নয়। ইহা উচিৎ যে, ব্যক্তি বাহ্য বাতাবরণ কে দেখে স্বাভাবিক জ্ঞান ও নিজ মান্যতার উপর কিছু নির্ণয় নিতে পারে। এবং এই নির্ণয় সেই ব্যক্তির সামাজিক বাতাবরণ ও মানত্যতা দ্বারা প্রভাবিত। তাহার আধারে এক সমান, মানবতাবাদী, সর্বমান্য, আচারসংহিতা হতে পার না। এইজন্য জার্মান দার্শনিক কাণ্ট নিজ "মেটাফিজিক্স অফ মোরল্স" পুস্তকে লিখেছিলেন -
" Feeling which naturally differ in degree can not furnish uniform standard of good and evil, nor has any one a right to form judgements for others by his own feelings"
" ব্যক্তির ভাবনা বিভিন্ন হতে পারে যা ভালো - খারাপ এর মধ্যে এক সমান মাপদন্ড তৈরী করতে পারে না। আর না অন্যের সমন্ধ্যে নিজ বিচারানুকুল নির্ণয় নেবার অধিকার হয় "
ইহার বিপরীত ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি আদির স্বরূপ তাহার পারস্পারিক সমন্ধ্য, সৃষ্টি রচনা,ভৌতিক জ্ঞান বিজ্ঞান, মোক্ষ সাধানাদির মূল জ্ঞান তো শুধু মাত্র চেতনা দ্বারা হতে পারে না। তো এই ধারণা অমান্য।
প্রকৃতিবাদির মত যে প্রকৃতিকে দেখো সব জ্ঞান প্রাপ্ত করা যায়। ইহা সর্বদা মান্য নয়। যদি তাহাই হতো তো প্রকৃতির ক্রোড়ে পালনরত বনবাসি জনজাতিও সুসভ্য, সুশিক্ষিত এবং সুসংস্কৃত হতো। কোনও বনবাসি জাতি অসভ্য এবং অবিকসিত থাকতো না। কারন তাহার সামনে তো প্রকৃতির বিশাল পুস্তক রয়েছে। কোন শিক্ষা দেবার জন্য বিদ্যালয় খোল অধ্যয়ন অধ্যাপন করার আবশ্যকই নেই।
তৃতীয় বিকাসবাদীর অনূসারে ধার্মিক নৈতিকতা এবং সমাজিক জ্ঞান আদির ক্রমিক বিকাশ হয়ে থাকে। অতঃ সব প্রকারের জ্ঞান বিকাসবাদের পরিণাম। ইহা মানা একদম উচিৎ নয় কারণ বিকাশ তাহারই হয়ে থাকে যা পূর্ব থেকে সুক্ষরূপে বিদ্যমান। আর ইহা সর্বসম্মত তথ্য যে বেদে বিশ্বের প্রাচীনতম পুস্তক। অতঃ বিশ্বের মূল জ্ঞান বেদেই এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের যে প্রগতি আমরা দেখতে পাই তা সেই বেদ জ্ঞানেরই বিকশিত রুপ।
বেদকে শুধু ভারতীয়রা অপৌরষেয় মানে না বরং বিভিন্ন দার্শনিকরাও ইহা মান্য করে যে সত্য সনাতনের আদি স্রোত ঈশ্বরই।
অন্য কেহ নয়।
(i) দার্শনিক কাণ্ট লিখেছে - we maw well conede that if the Gospel had no previously taught the universal moral law in their fully purity, reason would not yet have attained so perfect an insight of them
আমি উত্তমপ্রকারে মানি যে, যদি ঈশ্বরীয় জ্ঞান আমাদের প্রারম্ভে সত্য শাশ্বত নিয়ম কে না বলতো তো কেবল বুদ্ধি এমন নির্ভ্রান্ত এবং পূর্ণরূপে প্রাপ্ত করতে পারতো না।
(ii) বিদ্বান আর ফিলংট লিখেছে যে, The light of nature and the works of creation and providence are not sufficient to give that knowledge of God and of his will which is necessary unto salvation. The deepest discoveries and highest achivements of the unaided intellect need to be supplemented by truths which can only come to us through special revelation (theism, p 300)
অর্থাৎ প্রকৃতির প্রকাশ এবং সৃস্টির কার্য ঈশ্বর কে বোঝা এবং মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য যথেষ্ট নয়। গহনতম শোধ এবং উচ্চতম উপলব্ধির জন্যও সহায়তাহীন বুদ্ধির জ্ঞানের দ্বারা পুর্তির আবশ্যকতা যা আমরা ঈশ্বরীয় জ্ঞান দ্বারাই প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
(iii) এই বিষয়ে গ্রীক দার্শনিক প্লেটো লিখেছে - we will waite for one, be He a God or an inspire man to instrut us in religious duties and to take away the darkness from our eyes, we must sieze upon the best human views in navigating the dangerous sea of life, if there is no safer or less perious way, no stouter vesel, no Divine Reavelation, for making this voyage (phaedo)
অর্থাৎ ধার্মিক কর্তব্যের শিক্ষা দেবার জন্য আমরা পরমেশ্বর বা তার দ্বারা প্রেরিত কোন পুরুষের প্রতীক্ষা করা পড়ে যে আমাদের চোখের সামনের অন্ধকার দূর দেয়। এই মানব জীবনরূপী ভয়ংকর সমুদ্র কে উত্তমরূপে পার করার জন্য যদি আমাদের ঈশ্বরীয় জ্ঞান দ্বারা কোন প্রবল সাধন মিলা সর্বদা অসম্ভব হয় তো উত্তম থেকে উত্তম মানবীয় বিচারের উপর আমাদের নির্ভর প্রয়োজন পড়ে।
(iv) দার্শনিক সুকরাত ঈশ্বরীয় জ্ঞানের ব্যাপারে বলেছেন - You may resign yourself or sleep and give yourself upto despire, unless God in this goodness, shall reach safe to send you instruction.
অর্থাৎ তুমি যদি নিদ্রার প্রতি নিজেকে সমর্পন করে থাকো যা নিরাশের প্রবাহে বহমান থাকে যতক্ষণ পরমেশ্বর নিজ কৃপা দ্বারা তোমাকে শিক্ষা না দেয়।
উপরোক্ত পাশ্চাত্য প্রমান দ্বারা সিদ্ধ হয় যে জ্ঞানের আদি স্রোত ঈশ্বর। ভারতীয় দর্শন এবং বৈদিক বাঙ্ময় তো প্রারম্ভ থেকেই মান্য করে যে, মনুষ্য মাত্রের নৈমিত্তিক জ্ঞানের জন্য ঈশ্বরীয় জ্ঞানের আবশ্যকতা।
কপিল ঋষি বলেছেন -
ন পৌরষেয়ত্বং তত কর্তুঃ পুরুষস্যাভাবাত্।
নিজ শক্ত্যভিব্যক্তেঃ স্বতঃ প্রামাণ্যাত্।।
(সাংখ্যদর্শন ৫।৫১)
অর্থাৎ বেদের কর্তা কোন পুরুষ নয়। এইজন্য বেদ অপৌরষেয়। বেদ নিজ শক্তি দ্বারা স্বতঃ প্রমাণ।
মহর্ষি ব্যাসদেব বলেছেন -
অতএব চ নিত্যত্বম্
(বেদান্তদর্শন ১।২৯)
বেদের নিত্যতা সিদ্ধ। অতএব বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান।
ইহার অতিরিক্ত বেদে অনেক মন্ত্র রয়েছে যাহা দ্বারা সিদ্ধ হয় যে সৃষ্টির আরম্ভে ঈশ্বরীয় জ্ঞানের আবশ্যকতা হয়েছে এবং এজন্য পরম ব্রহ্ম পরমেশ্বর সৃষ্টির আদিতে বেদজ্ঞান দিয়েছে যাতে সমস্ত মানব নিজ উন্নতি এবং মরণান্তে মোক্ষ কে প্রাপ্ত হতে পারে।
যেমনঃ
অপূর্বেণেষিতা বাচস্তা বদন্তি যথাযথম্।
বদন্তীর্যত্র গচ্ছন্তি তদাহুর্ব্রাহ্মণং মহত্।।
(অথর্ববেদ ১০।৮।৩৩)
অর্থাৎ সেই কারণ রহিত পরমাত্মা অপার কৃপা করে সৃষ্টির আদিতে মনুষের জ্ঞানের জন্য ব্রহ্মম - জ্ঞানেন উপদেশ দিয়েছেন যাহা দ্বারা আমরা যথার্থ জ্ঞান প্রাপ্ত হতে পারি।
উপরোক্ত প্রমাণ এবং শাস্ত্রীয় বচন দ্বারা সিদ্ধ হয় যে, মনুষ্যের সৃস্টির আদিতে নৈমিত্তিক জ্ঞানের আবশ্যকতা হয়। সেই ঈশ্বর ব্যতিত অন্য কেউ নেই যে এই জ্ঞান দান করতে পারে। যেমন পিতা নিজ পূত্রের কল্যাণার্থে সব প্রকার শিক্ষা দীক্ষা দিয়ে তাহার কল্যাণ চান। এই প্রকার ঈশ্বর নিজ সৃষ্টির কল্যাণার্থে সৃষ্টির সাথে ঋষির মাধ্যমে সত্য সনাতন পবিত্র বেদ জ্ঞান দান করেছেন যাতে মানুষ তাদের নিজ কর্তব্য অকর্তব্যের নির্ধারণ করতে পারে। ওঁ শান্তি।
Rudro Dev Arya

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন