এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে রাধা ও কৃ্ষ্ণের চরিত্রের স্বরূপ : # (পর্ব-২)





শ্রীকৃষ্ণের নাম অধিকাংশ সময়েই রাধা এর সাথে উচ্চারিত হয়।বর্তমান সময়ে রাধা ব্যতীত কৃষ্ণমন্দির খুঁজে পাওয়া বিরল।কৃষ্ণ ভজনে কৃষ্ণের চেয়েও গুরুত্বপূর্ন উপাদান ই হয়ে গিয়েছেন তিনি!একবার রাধা নাম নেয়াইতো নাকি তিনবার কৃষ্ণ নাম নেয়ার সমতূল্য!
আজকের লেখার মূল উদ্দেশ্য ইহল রাধা চরিত্রটির উপর আলোকপাত করা।কতটুকু সত্য এই চরিত্রটি?এটা সর্বজনসম্মত যে মহাভারত এ রাধা এর উল্লেখ নেই,১৮টি পুরান এর প্রথম সতেরটিতেও নেই,নেই হরিবংশে এমনকি নেই বৈষ্ণবদের মূল উত্‍স বিষ্ণু পুরানেও বা তাদের মূল প্রেরনা ভাগবতামেও।
প্রশ্ন হল এতই যদি গুরুত্ব এই রাধা এর,তবে মহর্ষি ব্যসদেব একবার উচ্চারন পর্যন্ত করলেন না নামটি!আর মহাভারত যুগের পর একের পর এক সৃষ্ট হওয়া ভাগবতাম অব্দি বৈষ্ণব সাহিত্যগুলোতেও চরিত্রটির কোন উল্লেখ নেই।
এর কারন এই যে মূলত ওই সময়ে রাধা নামক কারো অস্তিত্বই ছিলনা,শ্রীকৃষ্ণের রাধা নাম্নী কোন বান্ধবীও নয়!
তাহলে কোথা থেকে এই রাধার উত্‍পত্তি ঘটল?
বিস্তারিত জানার পূর্বে সংক্ষেপে এটুকু জেনে নেই যেরুপকথা মতে বৃন্দাবনের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসরত নন্দরাজ এর বন্ধু বৃষভানু ও কৃতিকুমারীর কন্যা শ্রীমতি রাধারানী।বৃষভানু ও কৃতিকুমারী আগের জন্মে ছিলেন সুচেন্দ্র ও কলাবতী যারা ব্রহ্মা কর্তৃক বরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন যে পরবর্তী জন্মে শ্রীলক্ষ্মীতাদের ঘরে কন্যা হয়ে জন্মাবেন।এক মেলায় নন্দরাজ সপরিবারে বৃন্দাবনে গেলে নন্দরাজের সাথে তাদের দেখা হয় এবং সেখানেই কৃষ্ণের সাথে রাধার প্রথম সাক্ষাত্‍ হয়।এরপরের ঘটনা সবাই অল্প বেশী বিদিত বটে...এখন দেখি কোথা থেকে এসেছে এই চরিত্রটি।
পুরানসমূহের মধ্যে সর্বশেষলিখিত বা সর্বাপেক্ষা আধুনিক হল ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান।সর্বপ্রথম রাধা চরিত্রটির উপস্থাপন ঘটে এই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে।এরপর যথাক্রমে কবি জয়দেব এর গীতগোবিন্দ এবং অধুনা লিখিত চৈতন্যচরিতমৃততে তার উল্লেখ হয়েছে।এছাড়া ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান এর ঠিক আগে লেখা ভাগবত পুরানের দশমস্কন্ধে বিশেষ একজন গোপীর কথা থাকলেও রাধা নামটি নেই।
তাহলে এটা পরিস্কার যে প্রথম রাধা চরিত্রের অবতরন ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান এ।দেখেনেয়া যাক এক নজরে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধা সম্পর্কে এ পুরানটি কি বলছে-
১)অন্যান্য পুরানের তুলনায় এই পুরানে শ্রীকৃষ্ণের কনসেপ্টটা বেশ ভিন্ন।শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার হলেও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে তিনি তা নন বরং তিনিই ব্রহ্মা,বিষ্ণু ও শিবএর স্রষ্টা।
২)এই পুরানে গোলকধাম যা শ্রীকৃষ্ণের বাসভূমি তার মর্যাদা বিষ্ণুর বৈকুন্ঠেরচেয়েও বেশী!এখানেই আমরা প্রথম রাধাকে দেখতে পাই যিনি গোলকধামে অন্যান্য দেবীদের সাথে সেখানে প্রতিষ্ঠিত।
৩)এই পুরানে আরেকটি চরিত্র আছে যার নাম বৃজ,যিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রেমলাভের ক্ষেত্রে রাধার প্রতিদ্বন্দী।একদিন যখন শ্রীকৃষ্ণ চুপি চুপি বিরাজের গৃহে যাচ্ছিলেন তখন রাধা এই খবরটি পেয়ে যানএবং তার পিছু নেন।রাধা বৃজের ঘরে পৌঁছলে দ্বাররক্ষী শ্রীদাম তাকে বাঁধা দেন।এদিকে বিরাজ রাধার আগমন সংবাদ শুনে এতই ভয় পান যে তিনি গলে নদী হয়ে যান।কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ অলৌকিক ক্ষমতাবলে তাকে আবার পূর্বরুপ ফিরিয়ে দেন।তাদের দুজনের গভীর প্রেমলীলার(সংগম) ফলস্বরুপ তাদের একে একে সাতটি সন্তানএর জন্ম হয়।বৃজ এর অভিশাপে এই সাতটি সন্তান সাতটি নদী হয়ে যায় কেননা শিশুসন্তানগুলো সংগমের সময়নাকি তাদের বিরক্ত করেছিল!অপরদিকে রাধা তাদের এ প্রেমলীলার কারনে এতই রাগান্বিত হন যে তিনি শ্রীকৃষ্ণকে অভিশাপ দেন যেন তাকে আবার পৃথিবীতে জন্ম নিতে হয়।এতে আবার দ্বাররক্ষী শ্রীদাম রাধাকেতিরস্কার করেন ফলশ্রুতিতে রাধা অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে তাকেও অভিশাপ দেন যে শ্রীদাম পরবর্তীতে অসুর হয়ে জন্মাবে।শ্রীদামও রাধাকে অভিশাপ দেন এই বলে যে পরজন্মে রাধা একজন খারাপচরিত্রের মহিলা হয়ে জন্মাবেন।তখন শ্রীদাম ও রাধা উভয়েই পরস্পরকে দেয়া অভিশাপ কাটানোর জন্য শ্রীকৃষ্ণের কাছে যান।তখন শ্রীকৃষ্ণ শ্রীদাম কে বর দেন যে পরজন্মে তিনি অসুর শ্রেষ্ঠ হবেন।অপরদিকে রাধাকে স্বান্তনা দেন এই বলে যে রাধা যখন পৃথিবীতে আসবেন তখন তিনিও তার সাথে আসবেন।
(শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খন্ড,অধ্যয়২৩)
শ্রীকৃষ্ণকে রাধার অভিশাপ
হে কৃষ্ণ বৃজকান্ত!গচ্ছ মহৎপুরতী হরে।
কথং দূতীষিমানং লীলং রতি চোর অতি লম্পট।।
মো জগোতো অসি ভদ্র তে গচ্ছ মীমাশ্রামান।।
শশ্বতে মনুষযানং চ ব্যবহারস্য লম্পট।
লভতাং মানুষী যোনি গোলোকাদ ব্রজ ভরতম।।
হে সুশীলে,হে শশিকলে, হে পদ্মাবতি মাধবী।
নিবার্য তাচ্চ্বধূর্ত য কিমস্রত্র প্রযোজতম।।
(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান,শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড,অধ্যায় ৩,শ্লোক ৫৯,৬০,৬১,৬২)
অনুবাদ-হে কৃষ্ণ,বৃজের প্রিয়তম,তুমি লম্পট,দুশ্চরিত্র।এখন­ তোমাকে আমি চিনেছি,এখান থেকে বেরিয়ে যাও।তুমি যৌনতাড়নায় তাড়িত দুশ্চরিত্র,তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি যে তোমাকে পুনরায় জন্ম নিতে হবে।হে শুশীল,হে শশীকল,হে পদ্মাবতী মাধবী,কৃষ্ণ ধূর্ত,তাকে এখান থেকে তুলে নাও,তার এখানে কিছু করার নেই।
সুপ্রিয় পাঠকগন চিন্তা করুন! আমরা কি বিনা কারনে পুরানকে বর্জনের কথা বলি?কি অপুরনীয় ক্ষতি করেছে এই পুরানগুলো আমাদের!যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে একজন দুশ্চরিত্র বানিয়েছে এই বানোয়াট পুরানগুলোই। পুরানলেখকগন যারা মূলত কামসূত্র বিশেষজ্ঞ তাদের কথামতে অবৈধ যৌন সংসর্গের অপরাধে শ্রীকৃষ্ণের ধরনীতে আসার গল্পে আর যেই বিশ্বাস করুক না কেন আর্যরা করবেনা কেননা তারাই শ্রীকৃষ্ণকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।
(চলবে...)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন