এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

❏ সনাতনধর্মে নারীর স্থান

সনাতনধর্ম হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যার প্রধাণ ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ঋষি। 
যেমন, 
১) ঘোষা(ঋগ্বেদ দশম মন্ডলের ৩৯-৪১ নং সুক্তের দ্রষ্টা,ঋষি কক্ষিবান এর কন্যা)
২) লোপামুদ্রা
৩) মৈত্রেয়ী
৪) গার্গী
৫) পৌলমি
৬) রোমশা
৬) অপালা
৭) বাক (ঋগ্বেদের বিখ্যাত দেবীসূক্তের দ্রষ্টা),
৮) অপত
৯) কত্রু
১০) বিশ্ববর
১১) জুহু
১২) ভগম্ভ্রীনি (মহর্ষি অম্ভ্রন এর কন্যা, ঋগ্বেদের অষ্টম মন্ডলের ১২৫ নং সুক্তের দ্রষ্টা)
১৩) যরিতা
১৪) শ্রদ্ধা
১৫) উর্বশী
১৬) স্বর্ণগা
১৭) ইন্দ্রানী
১৮) সাবিত্রী
১৯) দেবায়নী
২০) নোধা
২১) আকৃষ্ভাষা
২২) শীকাতনবাবরি
২৩) গণ্পায়নী
২৪) মন্ধত্রী
২৫) গোধ
২৬) কক্ষিবতী
২৭) দক্ষিণা
২৮) অদিতি
২৯) রাত্রি(মহর্ষি ভরদ্বাজের কন্যা)
৩০) শ্রীলক্ষ্য
♦ পৃথিবীর অার কোন ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থে নারীদের এমন ভূমিকা দেখা যায় না। একমাত্র পবিত্র বেদেই পাওয়া যায় নারীদের এমন অসাধারণ অবদান। অার পৃথিবীর অন্যান্য সব ধর্মগ্রন্থে পুরুষদের ভূমিকাই পাওয়া যায় কেবল।

সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদ।
এবারে দেখুন পবিত্র বেদের নারী স্তুতি,
যেগুলোতে পুত্রের পাশাপাশি কন্যাকেও প্রার্থনা করা হয়েছে-
.
• আমার পূত্র শত্রুর নাশকারী এবং নিশ্চয়রূপে আমার কন্যা বিশিষ্টরূপে তেজস্বিনী।
- ঋগবেদ (১০।১৫৯।৩)
.
• যেমন যশ এই কন্যার মধ্যে এবং যেমন যশ সম্যকভৃত রথের মধ্যে, ঐরূপ যশ আমার প্রাপ্ত হোক।
- ঋগবেদ (৯।৬৭।১০)
.
• একসঙ্গে মিলিয়া যজ্ঞ করিলে পতি পত্নী, পুত্র এবং কন্যা কুমারী লাভ করেন। তাহারা পূর্ণ আয়ু ভোগ করেন। এবং উভয়ে নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের স্বর্ণভূষণে দীপ্যমান হন।
- ঋগবেদ (৮।৩১।৮)
.
অথর্ববেদের ১ম কান্ডের ১৪তম সুক্তে একজন পিতার কন্যা দানের উল্লেখ পাওয়া যায়-
• হে নিয়মকারী বর রাজন! এই কামনাযোগ্য কন্যা তোমার বধু। সে তোমার মাতা পিতা এবং ভ্রাতার সাথে ঘরে নিয়মপূর্বক অবস্থান করবে।
- অথর্ববেদ (১।১৪।২)

.হে বর রাজন! এই কন্যা তোমার কুলের রক্ষাকারী, তাহাকে তোমার জন্য আমি আদরের সহিত দান করিতেছি। সে বহু কাল পর্যন্ত তোমার মাতা পিতা আদির মধ্যে নিবাস করবে।
- অথর্ববেদ (১।১৪।৩)
.
বিবাহিতা নারীকে ‘কল্যাণময়ী, মঙ্গলময়ী’ আখ্যায়িত করে বেশ কিছু স্তুতির উল্লেখ পাওয়া যায় বেদে-
.
• হে বধূ! শ্বশুরের প্রতি, পতির প্রতি, গৃহের প্রতি এবং এই সব প্রজাদের প্রতি সুখদায়িনী হও, ইহাদের পুষ্টির জন্য মঙ্গল দায়িনী হও।
- অথর্ববেদ (১৪।২।২৬)
.
হে বধু! কল্যাণময়ী, গৃহের শোভাবর্দ্ধনকারী, পতি সেবা পরায়ণা, শ্বশুরের শক্তিদায়িনী, শাশুড়ি আনন্দ দায়িনী, গৃহকার্যে নিপুণা হও।
- অথর্ববেদ (১৪।২।২৭)
.
• হে বধূ! যেমন বলবান সমুদ্র নদী সমূহের উপর সাম্রাজ্য স্থাপন করিয়াছে, তুমিও তেমন পতিগৃহে গিয়া সম্রাজ্ঞী হইয়া থাকো।
- অথর্ববেদ (১৪।১।৪০)
.
• শ্বশুরদের মধ্যে এবং দেবরদের মধ্যে, ননদ ও শাশুড়ির সঙ্গে মিলিয়া সম্রাজ্ঞী হইয়া থাকো।
- অথর্ববেদ (১৪।১।৪৪).
.
• এই বধূ মঙ্গলময়ী, সকলে মিলিয়া ইহাকে দেখো, ইহাকে সৌভাগ্য দান করিয়া দুর্ভাগ্য বিদূরিত করো।
- অথর্ববেদ (১৪।২।২৮)
.
• হে স্ত্রী! শ্বশুরের নিকট সম্রাজ্ঞী হও, শাশুড়ির নিকট সম্রাজ্ঞী হও, ননদের নিকট সম্রাজ্ঞী হও এবং দেবরদের নিকট সম্রাজ্ঞীর অধিকার প্রাপ্ত হও।
- অথর্ববেদ (১০।৮৫।৪৬)
.
হে স্ত্রী! অমৃতরসে পরিপূর্ণ এই কুম্ভকে আরো পূর্ণ করিয়া আনো, অমৃতপূর্ণ ঘৃতধারাকে আনো, পিপাসুকে অমৃতরসে তৃপ্ত করো। ইষ্ট কামনার পূর্তি গৃহকে রক্ষা করিবে।
- অথর্ববেদ (৩।১২।৮)
.
যজুর্বেদ ২২।২২ মন্ত্রে পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে যে, আমাদের রাজ্যে যেন বিদ্বান ব্রাহ্মণ, নির্ভয় ক্ষত্রিয়, দুগ্ধপূর্ণ গাভী, ভারবাহী ষাড়, ঔষধি, সুন্দর ব্যবহারকারী স্ত্রী এবং শত্রু বিজয়কারী পুরুষ উৎপন্ন হয়। মন্ত্রটিতে স্পষ্টভাবে পুরুষের সাথে সাথে নারীকেও উৎপন্ন হবার জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে।
.
• ন জাময়ে তান্বো রিক্থমারৈক্চকার গর্ভং সনিতুর্নিধানম্।
যদী মাতরো জনযন্ত বহ্ণিমত্যঃ কর্তা সূকৃতোরন্য ঋন্ধন্।।
- ঋগ্বেদ (৩.৩১.২)
অনুবাদ- পুত্র কন্যাকে (ভাই তার বোনকে) পিতৃসম্পত্তি থেকে আলাদা করে দেয়না, তা সমানই থাকে বরং সে তার বোনকে শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান করে গড়ে তোলে এবং স্বামীর হাতে তুলে দেয়। পিতামাতা ছেলেমেয়ের জন্ম দেন, প্রথমজনকে পারিবারিক দায়িত্ব অর্পণের জন্য আর দ্বিতীয়জন আসে তাদের জন্য পবিত্রতা ও গুণের প্রতীক হিসেবে।

.ব্যাখ্যা- এই মন্ত্রে ছেলে ও মেয়ে সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। একটি পিতামাতার যদি শুধু মেয়ে সন্তান থাকে তবে পিতৃসম্পত্তির সম্পূর্ণ ভাগটাই সে পাবে, আর যদি তার ভাই থাকে তাহলে দুজনের মধ্যে তা সমানভাবে ভাগ হবে, কোনভাবেই তা এককভাবে শুধু পুত্রসন্তান পাবেনা। আর পিতা-ভ্রাতাদের কর্তব্য হল কন্যাকে বিয়ের আগেই শিক্ষা-কৃষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে গড়ে তোলা। একজন পুত্রের কাজ সংসারের দায়িত্বভার নেয়া আর একজন কন্যাসন্তানকে পিতামাতার জন্য পবিত্রতা ও গুণের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
‘মহাবীর তন্ত্র’ এর দশম অধ্যায়ে বলা হয়েছে-
“নারীরা সকল ধরনের শ্রাদ্ধ করতে পারবে কেবলমাত্র বৃদ্ধি শ্রাদ্ধ ব্যতীত।”
বৃদ্ধি শ্রাদ্ধ নারীরা করতে পারবেন না কেননা একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বামী অনাগত সন্তানের মঙ্গল কামনায় যে শ্রাদ্ধ করেন তাই হল বৃদ্ধি শ্রাদ্ধ। সুতরাং নারীর এই শ্রাদ্ধ করতে পারার কোন কারণ নেই!
বিখ্যাত তামিল ঐতিহাসিক গ্রন্থ পুরুনানুরুতে আমরা দেখতে পাই লেখক ভেল্লেরুক্কিলাইয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন রাজা ভেলেব্বির মৃত্যুতে রানীর পিণ্ডদানের কথা।
শাস্ত্রমতে একজন ব্যক্তির যেসকল আত্মীয়রা শ্রাদ্ধ করতে পারেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ছেলে, মেয়ে, ছেলের ছেলে, মেয়ের ছেলে, স্ত্রী, বাবা, মা, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, গুরু, শিষ্য।
অর্থাৎ যেহেতু ওই ব্যক্তির মেয়ের পিণ্ডদানের অধিকার আছে তাই দায়ভাগ শাখায় মেয়েদের পৈতৃক সম্পত্তি লাভের সুযোগ রয়েছে।
Partha Paul

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন